গুছিয়ে নিতে চায় বিএনপি
২৪ জানুয়ারি ২০১৪
২০০১ সালে সর্বশেষ দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠাতা নিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে বিএনপি৷ এরপর ২০০৬ সাল পর্যন্ত তারা ক্ষমতায় থাকে৷ পরবর্তী দুই বছর বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল৷ ২০০৮ সালে ডিসেম্বর মাসের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে৷ ঐ নির্বাচনে বিএনপি ২৯টি আসন পায়৷ এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ৫ই জানুয়ারি নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি৷ আওয়ামী লীগ একরফা নির্বাচনে আবারো দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে৷
এবারের নির্বাচনের আগে ও পরে বাংলাদেশে ব্যাপক সহিংসতা হয়৷ বিশেষ করে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলনে সহিংসতা সমালোচনার মুখে পড়ে৷ যদিও বিএনপির দাবি, এ সব সহিংসতার জন্য সরকারই দায়ী৷ এছাড়া নির্বাচনের আগে ও পড়ে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনায়ও বিএনপি জামায়াতের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছে৷ গঠন করা হয়েছে চারটি তদন্ত কমিটিও৷
বলা বাহুল্য, ২০০৬ সালের পর থেকে ক্ষমতার বাইরে রয়েছে বিএনপি৷ আর ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনের ফলে এখন বিরোধী দলেও নেই তারা৷ এ সব প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখেই বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে৷ দলটির সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৯ সালের ৮ই ডিসেম্বর৷ ইতিমধ্যেই বিএনপির কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কমিটিগুলোর মেয়াদও উত্তীর্ণ হয়ে গেছে৷
স্বাভাবিকভাবেই, বিএনপি এই কাউন্সিলের মাধ্যমে দলকে নতুন করে চাঙ্গা করতে চায়৷ দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইর থাকায় দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে, তাও কাটিয়ে উঠতে চায় তারা৷ নির্ধারণ করতে চায় আন্দোলনের নতুন কৌশল৷ শোনা যাচ্ছে, কাউন্সিলে কেন্দ্র থেকে জেলা-উপজেলা পর্যন্ত কমিটিগুলো আবারো নতুন করে গঠন করা হবে৷ কাউন্সিলের জন্য এর মধ্যে ৭৫টি সাংগনিক জেলায় চিঠি পাঠানো হয়েছে৷ তাতে বলা হয়েছে যে, ১৯শে মার্চ ঢাকায় এই কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে৷ এছাড়া কাউন্সিলের জন্য একটি কমিটি ও ১২টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও খবর৷
বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শমসুজ্জামান দুদু ডয়চে ভেলেকে জানান, আন্দোলনের অংশ হিসেবেই তারা জাতীয় কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনেরও বাধ্যবাধকতা আছে৷ যথা সময়ে কাউন্সিল না হওয়ায় কমিটিগুলোরও মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে৷ তাই কাউন্সিল অধিবেশন হলে দলের নেতা-কর্মীরাও উজ্জ্বীবীত হবেন৷ তিনি বলেন, কাউন্সিলে শুধু নতুন কমিটি নয়, দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিও পর্যালোচনা করা হবে৷ একই সঙ্গে দলের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়েও মতামত নেয়া হবে সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের৷
জানা গেছে, অতীতের আন্দোলন-সংগ্রামের কৌশল নিয়ে মতামত জেনে ভবিষ্যতে সরকারবিরোধী আন্দোলনের কৌশলও ঠিক করা হবে এই কাউন্সিলে৷ বিশ্লেষণ করা হবে জামায়তের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও৷
১৯৭৮ সালে জিয়া উর রহমানের হাতে বিএনপির জন্ম৷ এরপর তিনি এক সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হলে কিছুদিন পর তাঁর স্ত্রী খালেদা জিয়া বিএনপির হাল ধরেন৷ তাঁর নেতৃত্বে মোট তিনবার ক্ষমতায় আসে দলটি৷ এর মধ্যে ১৯৯৬ সালে একরফা নির্বাচনের মাধ্যমে দলটি খুব অল্প সময়ের জন্য ক্ষমতায় ছিল৷