1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মাস্ক পরাতে আবার ভ্রাম্যমাণ আদালত

১৬ মার্চ ২০২১

করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আবার মাস্ক নিয়ে ‘কড়া অবস্থানে’ যাচ্ছে সরকার৷ এরইমধ্যে ১১ দফা নির্দেশ জারি করা হয়েছে৷ সারা দেশে আবারো নেমেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত৷

https://p.dw.com/p/3qhSv
ছবি: picture-alliance/S. Mahmud Mukut

স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নান বলেন, মাস্ক ব্যবহারে এখন ঢিলেঢালা ভাব এসে গেছে৷ অন্যদিকে করোনা সংক্রমণ আবার বেড়েছে৷ এই প্রেক্ষাপটে মাস্ক ব্যবহারে আগের নির্দেশনাগুলোই কঠোরভাবে পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷ তিনি জানান, ‘‘আজকেই (মঙ্গলবার) ভ্রাম্যমাণ আদালত নামানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে প্রশাসনকে৷ দেশের সব জেলায়ই ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলবে৷ তারা জরিমানাও করবেন৷’’

ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ভাস্কর দেবনাথ বাপ্পি জানান, মঙ্গলবার থেকেই ভ্রাম্যমাণ আদালত নেমেছে ঢাকায়৷ ঢাকা শহর এবং ঢাকা জেলার পাঁচটি উপজেলায় ১৫ জন ম্যাজিষ্ট্রেট ১৫টি ভ্রাম্যামাণ আদালত পরিচালনা করেছেন৷ তারা ১৬৬ টি মামলা করেছেন৷ ২৬ হাজার ১০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে৷ বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে এক হাজার ২০০৷

দেশের সব জেলায়ই ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলবে: স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নান

জেলা প্রশাসকদের  ১১ দফা নির্দেশনা জানিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে৷ এই নির্দেশনার মধ্যে আছে-
১. সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিসে কর্মরত কর্মকর্তা, কর্মচারী ও অফিসে আসা সেবাগ্রহীতারা বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক ব্যবহার করবেন৷
২. সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালসহ সব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে আসা সেবাগ্রহীতারা আবশ্যিকভাবে মাস্ক ব্যবহার করবেন৷
৩. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির ও গির্জাসহ সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে৷
৪. শপিংমল, বিপণি বিতান ও দোকানের ক্রেতা-বিক্রেতারা আবশ্যিকভাবে মাস্ক ব্যবহার করবেন৷
৫. হাট-বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতারা মাস্ক ব্যবহার করবেন৷ মাস্ক পরা ছাড়া ক্রেতা-বিক্রেতারা কোনো পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করবেন না৷
৬. গণপরিবহনের (সড়ক, নৌ, রেল, আকাশপথ) চালক, চালকের সহকারী ও যাত্রীদের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে৷
৭. গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিসহ সব শিল্পকারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে৷
৮. হকার, রিকশা ও ভ্যানচালকসহ সকল পথচারীর মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে৷
৯. হোটেল ও রেস্টুরেন্টে কর্মরত ব্যক্তি এবং জনসমাবেশে মাস্ক ব্যবহার আবশ্যিক ৷
১০. সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে৷
১১. বাড়িতে করোনা উপসর্গসহ কোনো রোগী থাকলে পরিবারের সুস্থ সদস্যেরা মাস্ক ব্যবহার করবেন৷

এই নির্দেশগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে৷ আর জেলা প্রশাসকদের সার্বিকভাবে মনিটরিং করতে বলা হয়েছে বলে স্বাস্থ্য সচিব জানান৷

এর আগে গত নভেম্বরে জেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোারেশন এবং বিআরটিএ মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে সড়কে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে৷ মাস্ক ব্যবহার না করলে জরিমানা করা হয় এবং তাদের মধ্যে মাস্ক বিতরণ করা হয়৷ কিন্তু এক মাসের বেশি এই কার্যক্রম চলেনি৷ তখন প্রধানমন্ত্রী নিজে ঘোষণা করেন, ‘‘নো মাস্ক নো সার্ভিস৷’’

করোনা নিয়ে আমরা এখনো একটা খেলা খেলা ভাব লক্ষ্য করছি: অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম

কিন্তু ডিসেম্বরের পর থেকে করোনা সংক্রমণ কমে আসায় সরকারের কড়াকড়িও উঠে যায়৷ সাধারণ মানুষও মাস্ক ব্যবহারে অনীহা দেখায়৷ আর সামাজিক দূরত্বের বিষয়টিও উধাও হয়ে যায়৷ এখন গণপরিবহণে যাত্রীরা তেমন মাস্ক পরেন না৷ বাজার হাট বা জনসমাগমস্থলে মানুষ ইচ্ছেমত ভিড় করেন মাস্ক ছাড়াই৷ সভা-সমাবেশেও একই অবস্থা৷ ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েতুল্যাহ বলেন, ‘‘করোনার সংক্রমণ কমে আসায় যাত্রীরা এখন আর মাস্ক পরতে চায় না৷ পরিবহণ শ্রমিকদের মধ্যেও অনীহা৷ আমরা মাস্কের কথা বললে তারা বিরক্ত হয়৷’’

তিনি বলেন, আবার গণপরিবহণে মাস্কের ব্যাপারে সরকারের আদেশ মেনে আমরা কঠোর হচ্ছি৷ বিআরটিএ মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ আমরা তাদের সহায়তা করব৷

করোনা সংক্রান্ত জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘করোনা নিয়ে আমরা এখানে এখনো একটা খেলা খেলা ভাব লক্ষ্য করছি৷ এই ভাইরাসটির ভয়াবহতা সম্পর্কে নাগরিকদের আসলে প্রকৃত অর্থে সচেতন করা হয়নি৷ মাস্ক ব্যবহারের নির্দেশনা আগে থেকেই তো আছে৷ তাহলে নতুন করে নির্দেশ লাগবে কেন? লাগছে এই কারণে যে আসলে এটাকে কেউ গুরুত্বের সাথে নেয়নি৷ মোবাইল কোর্ট চালু হলো৷ আবার বন্ধ হয়ে গেল৷ এটা কেন বন্ধ হয়ে গেল তার কোনো জবাবদিহিতা আছে? আর দায়িত্বশীলরা সংবাদ মাধ্যমে এখন মাস্ক ছাড়া কথা বলছেন৷ এটা ভুল বার্তা দেয়৷ একই সঙ্গে আগে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে অনেকে বলেছেন, টিকা না আসা পর্যন্ত মাস্ক ব্যবহার করুন৷ টিকা দিলে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে না, এটা তারা কোথায় পেলেন?’’

তিনি জানান, আবার লকডাউনের কথা হচ্ছে৷ এটা কেন করা হবে? এটা নাগরিকদের কষ্ট বাড়ানো ছাড়া আর কিছু করে না৷ দরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা৷ কিন্তু সেটার জন্য কোনো সিরিয়াস উদ্যোগ নাই৷ কোনো মনিটরিং নাই৷ দায় দায়িত্ব নাই৷

করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণ নিয়ে এই ভাইরোলজিস্ট বলেন, ‘‘বাংলাদেশে শীতে অন্যান্য ভাইরাস করোনা ভাইরাসকে শরীরে প্রবেশে বাধা দেয়৷ আর অন্যান্য যে ভাইরাস আছে তার প্রতিরোধ ক্ষমতা আমাদের আছে৷ এখন শীত চলে গেছে করোনার সংক্রমণ তাই বাড়ছে৷’’

আফ্রিকা ও যুক্তরাজ্যের নতুন স্ট্রেইন বাংলাদেশেও পাওয়া গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, সে কারণে করোনা সংক্রমণ বেড়ে গেছে তার কোনো প্রমাণ নেই৷ কারণ ওই স্ট্রেইন ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগে৷ আগের ভাইরাসই এখনো প্রবলভাবে বিস্তৃত হচ্ছে৷ শীতের কারণে সংক্রমণ তেমন হয়নি৷

করোনার ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত আছে৷ মঙ্গলবার গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে করোনায় ২৬ জন মারা গেছেন৷ নতুন করে এক হাজার ৭১৯ জন সংক্রমিত হয়েছেন৷ সোমবারও ২৬ জনের মৃত্যু এবং এক হাজার ৭৭৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন৷ গত ১ মার্চ করোনায় মারা যান আট জন৷ আর আক্রান্ত হন ৫৮৫ জন৷ দুই সপ্তাহে সংক্রমণ বেড়েছে তিন গুণেরও বেশি আর মৃত্যু তিন গুণের বেশি৷

বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী পাওয়া যায় গত বছরের ১৮ মার্চ৷ এপর্যন্ত পাঁচ লাখ ৬০ হাজার ৮৮৭ করোনা আক্রান্ত সনাক্ত হয়েছে৷ মারা গেছেন আট হাজার ৫৯৭ জন৷ ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে এখানে ব্যাপক ভিত্তিক টিকা দেয়া শুরু হয়৷