মিঠুনের বাড়িতে ভাগবত, বিজেপি-যোগ নিয়ে জল্পনা
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১প্রথমে ছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে জল্পনা। কিন্তু তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর তাঁকে নিয়ে জল্পনা এখন কমেছে। এবার জল্পনা শুরু বলিউড তারকা মিঠুন চক্রবর্তীকে নিয়ে। জল্পনার কারণ, সরসঙ্ঘচালক(আরএসএস প্রধান) মোহন রাও ভাগবতের সঙ্গে মিঠুনের সাক্ষাৎকার। মঙ্গলবার ভোরে মুম্বইয়ে মিঠুনের বাড়িতে যান ভাগবত। তাঁরা বেশ কিছুক্ষণ সময় একসঙ্গে কাটান। প্রাতঃরাশ করেন। তারপর ভাগবত চলে যান।
মিঠুন এরপর বলেছেন, ''দয়া করে কোনোরকম জল্পনা করবেন না। এখনো পর্যন্ত সেরকম কিছু হয়নি।'' এই তারকা অভিনেতার ব্যাখ্যা, ''আমার সঙ্গে মোহন ভাগবতের এক গভীর আধ্যাত্মিক যোগ আছে। লখনউতে আমি শুটিং করছিলাম। তখন তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তাঁকে বলেছিলাম, মুম্বই এলে অবশ্যই যেন আমার বাড়িতে আসেন। তাই তিনি এসেছিলেন।''
মিঠুনের সঙ্গে সরসঙ্ঘচালকের যোগাযোগের কথা অবশ্য এতদিন সামনে আসেনি। মিঠুন বলার পর মানুষ তা জানলেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই সাক্ষাৎ স্বভাবতই জল্পনা বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ, বিজেপি-র শীর্ষ নেতারা রাজ্যে জনপ্রিয় কিছু ব্যক্তিত্বকে দলে চাইছেন। যিনি তৃণমূলের কাছ থেকে ভোট বিজেপি-র দিকে নিয়ে আসতে পারবেন। দলের তরফে হাওয়া তৈরিতে সাহায্য করতে পারবেন।
বিজেপি প্রথমে ভরসা রেখেছিল, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের উপর। দলের এক কেন্দ্রীয় নেতা ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''আমরা তো দাদাকে সামনে রেখে লড়তে চেয়েছিলাম। কিন্তু সৌরভ হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর স্বাস্থ্যের কারণেই তা আর সম্ভব নয়।'' তারপর মিঠুনের মতো বিকল্পের দিকে তাঁদের চোখ পড়তেই পারে। মিঠুনও একটি তাৎপর্যপূর্ণ কথা বলেছেন। তা হলো এখনো পর্যন্ত সেরকম জল্পনার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এই 'এখনো পর্যন্ত' কথাটি রাজনৈতিক মহল তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে।
এমনিতে কে দলে আসবে, না আসবে, তা নিয়ে কথাবার্তা বলেন বিজেপি নেতারা। মোহনরাও ভাগবত নন। কিন্তু আরএসএসের প্রধানের এভাবে মিঠুনের সঙ্গে দেখা কারা নিঃসন্দেহে একটি সংকেত দিচ্ছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বিজেপি-র এক নেতা ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''পশ্চিমবঙ্গের ভোটে মিঠুনকে পাওয়া গেলে তো নিঃসন্দেহে দল লাভবান হবে। মিঠুন কলকাতার ছেলে। তারকা-আকর্ষণ আছে। তাছাড়া তিনি অতীতে নানা ধরনের সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। লড়াই করে মুম্বইতে জায়গা করে নিয়েছেন। এখনো তিনি টিভি শো-র বিচারক হলে সেই অনুষ্ঠানের টিআরপি বেড়ে যায়।''
তবে যুব বিজেপি নেতা সৌরভ সিকদার ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''মোহন ভাগবত এখন জনসম্পর্ক অভিযান করছেন। তিনি বিভিন্ন মানুষের বাড়িতে যাচ্ছেন। মিঠুনের বাড়িতেও গেছেন। ব্যাপারটা এর চেয়ে বেশি কিছু নয়। আর বিজেপি-র সংগঠন ও নেতারাই পশ্চিমবঙ্গে জেতার জন্য যথেষ্ট। কোনো তারকাকে সামনে রেখে লড়ার দরকার হবে না।'' সৌরভের কথা সহজবোধ্য। যতক্ষণ সবকিছু পাকা না হচ্ছে, ততক্ষণ কোনো দলই এই নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলবে না।
মিঠুনের ক্ষেত্রে আবার রাজনীতিতে আসার ক্ষেত্রে একটাই অসুবিধা আছে। অতীতে মিঠুন চক্রবর্তীর রাজনৈতিক ইনিংস দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। তৃণমূলের হয়ে তিনি রাজ্যসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু সারদা কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িয়ে তিনি ২০১৬ সালে রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নেন। ততদিনে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকে তিনি সারদার কাছ থেকে নেয়া টাকা ফেরত দিয়ে সবকিছু মিটিয়ে নেন। তারপর অনেক দিন তিনি নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন। ফলে রাজনীতির অভিজ্ঞতা তাঁর সুখের নয়।
যতদিন সাংসদ ছিলেন, তখন অল্প কয়েকদিন রাজ্যসভায় এসেছেন। সংসদভবনে বাংলার কয়েকজন সাংবাদিককে তিনি জানিয়েছিলেন, অনেক আশা নিয়ে এবং রাজ্যের মানুষদের জন্য কিছু করার আন্তরিক আকাঙ্খা নিয়েই তিনি সাংসদ হয়েছেন। না হলে তিনি এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করতেন না। তাঁর সেই আশা পূর্ণ হয়নি। ফলে তাঁর রাজনৈতিক ও সাংসদ জীবন বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। বরং অনেক অভিমান নিয়ে তিনি সরে গেছিলেন।
প্রশ্ন হলো, তিনি কি সেই অভিমান ভুলে আবার রাজনীতিতে ফিরবেন? আবার কিছু করার জন্য ঝাঁপাবেন? এর জবাব মিঠুনই দিতে পারবেন।