মোদীর আমলে প্রথম ঈদ
৩০ জুলাই ২০১৪দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদী তাঁর সরকারি দায়িত্ব পালনে চিরাচরিত প্রথা হিসেবে মুসলিম সম্প্রদায়কে এক শুভেচ্ছা বার্তায় বলেছেন, ঈদ-উল-ফিতর দেশে শান্তি, ঐক্য ও সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে সুদৃঢ় করবে৷
ব্যস এই পর্যন্ত৷ প্রধানমন্ত্রীসহ বিজেপি নেতাদের মধ্যেও ঈদ উৎসব পালনে একটা চাপা অনীহা ছিল৷ আড়ম্বরের তো প্রশ্নই নেই৷ এই অনীহার ভাব লক্ষ্য করা গেছে ইফতার ভোজ থেকেই৷ প্রধানমন্ত্রী মোদী কোনো ইফতার দেননি, এমনকি তাঁর মন্ত্রীদেরও তা দিতে নিষেধ করেছেন বলে জানা গেছে৷ গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনও তিনি কোনো ইফতার দেননি৷ এমনকি এবছর রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দেয়া ইফতার ভোজেও যোগ দেননি মোদী৷ শুধু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং সংখ্যালঘুমন্ত্রী নাজমা হেপতুল্লা ছাড়া মোদী মন্ত্রিসভার অন্য কোনো সদস্য যোগ দেননি৷ বিজেপি শাসনাধীন রাজ্যগুলিতেও সরকারি স্তরে কোনো ইফতারের আয়োজন করা হয়নি৷
প্রত্যাশিতভাবেই ভারতীয় রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতার বিতর্ক ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে৷ কংগ্রেস সরকার প্রায় প্রতি বছরই ইফতার ভোজ দিয়ে আসছে৷ এবার ক্ষমতায় না থাকায় কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীও ইফতার ভোজ না দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷ কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদী ইফতার ভোজ না দেয়ায় তিনি মত পালটান৷ কারণ সোনিয়ার পরামর্শদাতারা মনে করিয়ে দেন কংগ্রেস ইফতার ভোজ না দিলে মোদীর অনুগামী বলে সোনিয়া গান্ধীকে মুসলিম সমাজ ভুল বুঝতে পারে৷
ইফতারের রাজনীতি?
স্বাধীন ভারতের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে জহরলাল নেহেরু কিংবা লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর আমলে ইফতার দেবার রীতি ছিল না৷ ইফতার রাজনীতির মতো অনেক অনাকাঙ্খিত রাজনীতি শুরু হয় ইন্দিরা গান্ধীর আমলে৷ তারপর থেকে প্রধানমন্ত্রীদের ইফতার দেয়াটা একটা রীতি হয়ে ওঠে৷ ১৯৯৯ সালে বিজেপির নির্বাচনি সাফল্যের পর বিজেপির সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ী মুসলিম সমাজের মন জয় করতে ইফতার আয়োজন করেছিলেন৷ তারপর থেকে বাজপেয়ী মন্ত্রিসভার শাহ নওয়াজ হোসেন প্রতি বছর বাজপেয়ীর নির্দেশমতো ইফতার ভোজ দিয়ে আসছেন৷ ‘‘ইফতার ভোজ দেয়া না দেয়া নিজের ইচ্ছা৷ দিতেই হবে এমন কোনো কথা নেই,'' বলেন শাহ নওয়াজ হোসেন৷
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আবদুল কালাম আজাদ ইফতার ভোজ না দিয়ে সেই অর্থ দান করতেন গরিব দুখিদের মধ্যে৷
নাগরিক সমাজের ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা অবশ্য মনে করেন, ইফতার ভোজ নিয়ে ধর্মীয় মেরুকরণ অহেতুক৷ রমজান মাসের উপবাস ভঙ্গে চর্বচোষ্যলেহ্যপেয় দিয়ে ভোজ দেয়ার সঙ্গে ধর্মের কোনো যোগ নেই৷ এদিয়ে মুসলিম প্রেম বা অপ্রেম বিচার করা যায় না৷
ঈদ জামাতে গাজাবাসীর জন্য প্রার্থনা
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো গোটা ভারতেও পালিত হয় পবিত্র ঈদ উৎসব৷ সেই পরিচিত চেহারা৷ দিল্লির ঐতিহাসিক জামা মসজিদে সমবেত নামাজ, শুভেচ্ছা বিনিময়৷ জামা মসজিদ সংলগ্ন অলিগলি থেকে মোঘলাই খানার সুগন্ধ৷ নতুন জামাকাপড়, মিষ্টি বিতরণ ও কোলাকুলি৷ উত্তর প্রদেশের শাহারামপুরে মুসলিম-শিখ জমি সংঘর্ষে কারফিউ থাকায় ঈদের আনন্দে ভাটা পড়ে৷ এছাড়া একমাত্র ব্যতিক্রম দিল্লির চাণক্যপুরিতে ফিলিস্তিনি দূতাবাস৷ গাজায় ইসরায়েলি হানায় শত শত ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ায় শোকের ছায়া পড়েছে ভারতের ফিলিস্তিনি নাগরিকদের মনে৷ অন্যবারের মতো তাই এবার দূতাবাস ভবনে নেই কোনো আলোকসজ্জা, নেই ইফতার ভোজ, নেই কোনো আনন্দ উৎসব৷ জম্মু-কাশ্মীরেও সেই শোকের ছায়া৷ ঈদের নামাজের পর ৩০ মিনিট ইসরায়েলি হানার প্রতিবাদ জানানো হয়৷