‘মৎস্যজীবী’ রাজনীতিবিদ
২৫ ডিসেম্বর ২০১৩‘মৎস্যজীবী' রাজনীতিবিদসহ অন্যান্য মন্ত্রী-সাংসদদের সম্পদের হিসেব নিয়ে আলোচনা চলছিল গত কয়েকদিন ধরেই৷ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যের বরাতেই আলোচনার সূত্রপাত৷ আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামা প্রকাশ করে কমিশন, যেখানে তাদের সম্পদের বিবরণ রয়েছে৷ এই বিষয়ে সাংবাদিক প্রভাষ আমিন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘সাংবাদিকরা সত্যি খারাপ৷ কারো উন্নতি তাদের সহ্য হয় না৷ আমাদের মন্ত্রী-এমপিরা পাঁচ বছর খালে বিলে ঘুরে মাছ টাছ ধরে কিছু টাকা পয়সা কামিয়েছে, তাতেই সাংবাদিকদের ঘুম হারাম৷''
এটিএন নিউজের এই সাংবাদিক ফেসবুকে নিজের ব্যক্তিগত প্রোফাইলে লিখেছেন, ‘‘পাঁচ বছর দেশে উন্নয়নের জোয়ার বয়ে গেছে৷ মন্ত্রী এমপিদের সম্পদের ঘরে তো সেই জোয়ারের ঢেউ লাগতেই পারে৷ এই নিয়ে এত হইচই করার কী আছে বুঝলাম না৷ তবে একটা জিনিস বুঝেছি দেশের সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা এখন মাছ ধরা৷ নদীমাতৃক বাংলাদেশে তাই হওয়া উচিত৷ সব দেখেশুনে জাউলা হইতে মন চাচ্ছে৷''
ব্লগার রাসেল পারভেজ ফেসবুকে এই বিষয়ে লিখেছেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রার্থীর হলফনামা আর আয়কর বিবরণী প্রকাশিত হওয়ায় ৫ বছরের লুটপাটের আইনসিদ্ধ অংশটুকু গণমাধ্যমের নজরে এসেছে , বিপুল পরিমাণ সম্পদের উৎস নিয়ে প্রশ্নের মুখে আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশনকে তথ্য গোপন করার চাপ দিচ্ছে৷ ...দুর্নীতি প্রকাশিত হওয়ার পর তারা লুঙ্গি তুলে লজ্জায় মুখ ঢাকছেন৷''
এদিকে, প্রার্থীদের আয় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার পর নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটও অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেছে৷ সাইটটিতে প্রার্থীদের সম্পদের হিসাব এখন আর দেখা যাচ্ছে না৷ সাংবাদিক শুভ কিবরিয়া ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘বাঙালির স্বভাব খারাপ৷ অন্যের উন্নতি তার কোনোকালেই সহ্য হয় না৷ এমনকি গোত্রদলের উন্নতিও সহ্য হয় না৷ এই উন্নয়ন অসহ্য বাঙালিকে টাইট দেয়া দরকার৷ নির্বাচন কমিশন তথ্য সরবরাহ বন্ধ করে সেই ভাল কাজটি করেছেন৷ সেখানকার সবাইকে অভিবাদন৷''
আরেক সাংবাদিক অঞ্জন রায়ের মন্তব্য, ‘‘রাজনীতিকে ব্যবসা বানানোর অপরাধে কিছু মানুষের বিচার দাবি করছি৷ আমি বিশ্বাস করি একদিন সেই বিচার আমরা দেখবো, এটিই ইতিহাসের শিক্ষা- হিসাবের পৃষ্ঠা মুছে দিলেই কি হিসাব ভুলিয়ে দেয়া যাবে?''
‘সাপ্তাহিক' পত্রিকার সম্পাদক গোলাম মোর্তোজা লিখেছেন, ‘‘ইসির ওয়েবসাইটে হলফনামা পাওয়া যাচ্ছে না' - হাতি জঙ্গলে মুখ লুকায়, সমস্ত উলঙ্গ শরীর দেখা যায়৷ হলফনামা লুকানোয় কার উলঙ্গ শরীর দেখা যাচ্ছে, লেজ নাড়ানো জি হুজুর রকিব মিয়ার না ক্ষমতাসীনদের...?''
রাজনীতিবিদদের সম্পদের হিসাব নিয়ে আলোচনা চলছে বাংলা ব্লগেও৷ তবে অধিকাংশই ছদ্মনামে এই বিষয়ে নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন৷ স্বনামে লেখা নিবন্ধের সংখ্যা বেশ কম৷ সামহয়্যার ইন ব্লগে আহসান তারিক লিখেছেন, ‘‘অতীব কৌতূহলে লক্ষ্য করছি, হলফনামায় প্রকৃত তথ্য এড়ানোর হিড়িক পড়েছে যেন৷ আর এ তালিকায় ঠাঁই করে নিয়েছেন নীতি কথা বলে মুখে খই ফোটানো মন্ত্রী থেকে শুরু করে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত৷''
এই ব্লগার লিখেছেন, ‘‘দিনরাত শেয়ারবাজারকে দুষ্টু, রাবিশ, বোগাস বলে ওঠা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত একজন শেয়ার ব্যবসায়ী – এই চমকপ্রদ তথ্য জেনে আমরা নির্মল বিনোদন লাভ করি৷ হলমার্ক কেলেংকারির হোতা তানভিরের পক্ষ নেয়া মুহিত সাহেবের নাকি জনতা ব্যাংকে ৩৫ লাখ টাকা ঋণ আছে৷ জনতা ব্যাংকে ঋণ আছে জন্যই, তিনি জনতা ব্যাংকের ঋণখেলাপি তানভিরকে আরো ঋণ দেবার সুপারিশ করেন কি না, তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন৷''
সংকলন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: জাহিদুল হক