1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যে কারণে রাজনীতিতে আলোচ্য নয় চরম আবহাওয়া

ডয়চে ভেলের সাংবাদিক শবনম সুরিতা৷
শবনম সুরিতা
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পশ্চিমবঙ্গে বর্তমানে প্রবল তাপপ্রবাহের কবলে সেখানেকার মানুষ৷ এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে তাপমাত্রার পারদ চল্লিশের কোঠাতেই ঘোরাফেরা করবে বলে পূর্বাভাস৷ এমন চরম আবহাওয়া নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত কি সমাজ, নাগরিক?

https://p.dw.com/p/4fDKb
জল পান করছেন এক নারী
ছবি: Sudipta Das/NurPhoto/NurPhoto/picture alliance

আমার ছোটবেলায় ‘ভীষণ গরম’ বলতে বুঝতাম টেনেটুনে ৩০ ডিগ্রি হয়তো৷ আসামের দক্ষিণের শিলচর শহরে তখন আজকের মতো এত বড় ভবনের চল ছিল না৷ বরাক নদীর পাশে টিনের চালওয়ালা বাড়িতে উষ্ণতা বলতে অন্য অর্থই বুঝতাম তখন৷

কাঠফাটা রোদ, ঘেমে স্নান করা আসলে কী, তা বুঝি ২০০৫ সালে কলকাতায় পাকাপাকিভাবে চলে যাওয়া ও তারপর এক দশক সেখানে থাকার পর৷

‘ভীষণ গরম’ মানে...

স্কুল-কলেজ যেতে যেতেই বাসে-অটোয় ঘেমে একাকার হয়েই ক্লাস করতে যেতাম আমরা৷ রাস্তাঘাটে গানবাজনা, আড্ডা, হইহুল্লোড়ের সেই দিনগুলোতে মনে পড়েনা শেষ কবে দাবদাহের সতর্কতা জারি হওয়ায় স্কুল বা বলেজ ছুটি পেয়েছি৷

হ্যাঁ, আয়লার মতো ঘূর্ণিঝড়ের অবিরাম বর্ষণের পর কিছু দিনের ছুটি হতো ঠিকই, তবে তখনও প্রকৃতির অশনি সংকেত বোঝার ক্ষমতা আমারও হয়নি, সাথে, আমার চারপাশের সমাজ বা রাষ্ট্রেরও হয়তো নয়৷

তবে এখন ভারতে, পশ্চিমবঙ্গের বাস্তবতা অনেকটাই ভিন্ন৷ আগের চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যক শিরোনাম, টেলিভিশনে প্রাইম-টাইম আলোচনা বা সোশাল মিডিয়ার ৩০ সেকেণ্ডের ভিডিও চোখে পড়ে, যেখানে আলোচ্য বিষয় জলবায়ু পরিবর্তন ও বিধ্বংসী গরম৷

কিছু দিন আগে, তাপমাত্রার পারদ ৪০ ডিগ্রির অনেকটাই ওপরে ছিল কলকাতায়৷ সরকারি একটি টিভি চ্যানেলে সংবাদ পড়তে পড়তে অজ্ঞান হয়ে পড়েন সংবাদপাঠিকা৷ উল্লেখ্য, সেই সময় কলকাতায় প্রবল দাবদাহ বিষয়ক খবরই পড়ছিলেন তিনি, এমনই সমাপতন৷

গরম, তুমি কি কেবলই রিল, ভাইরাল ভিডিও?

২৪ এপ্রিল, জার্মান সময় দুপুর ১২টায় বসে যখন এই লেখাটি লিখছি, তখন বন শহরের তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রি, অন্য বছরগুলির তুলনায় গড় তাপমাত্রার চেয়ে পাঁচ ডিগ্রি কম৷ ইউরোপে জলবায়ু পরিবর্তন ও অন্যান্য কারণে যেভাবে চরম আবহাওয়া দেখা যাচ্ছে, তা বিশ্বের প্রায় সকল তাবড় সংবাদমাধ্যমে আলোচিত, সমালোচিত৷

শুধু গণমাধ্যমেই নয়, আলোচনা থেকে আন্দোলনে সরব সেখানকার রাজনীতিক, সাধারণ নাগরিকও৷ গ্রেটা টুনব্যার্গ ও তার ‘ফ্রাইডেজ ফর ফিউচার’ আন্দোলন ইউরোপের প্রায় সকল শহরে প্রতিফলিত হয় নিয়মিত৷

কিন্তু ভারতের চরম তাপপ্রবাহের কবলে থাকা অঞ্চলে?

কলকাতায়, একই সময়ে ২৪ এপ্রিলে তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি হলেও অনুভূতি হবে ৪৬ ডিগ্রির মতো৷ ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক বা ইউটিউব খুললে এগিয়ে আসছে গরম থেকে বাঁচার উপায়ের নানা রিল৷ কেউ দেখাচ্ছে আমপোড়ার শরবতের ফিউশন রেসিপি, কেউ জানাচ্ছে গরমকালের ফ্যাশনের হালহকিকত৷

আর যারা এসব বলছেন না, তাদের নজর চলমান লোকসভা নির্বাচনের দিকে৷ আবহাওয়া দপ্তর বলছে, আগামী সপ্তাহেও নিস্তার নেই এই চরম গরম থেকে, কারণ বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা তারা আপাতত দেখছেন না৷ এদিকে শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ভারতে দ্বিতীয় দফায় ভোটগ্রহণ৷

ভোটার, তোমার কি গরম লাগছে?

বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করছেন, চরম আবহাওয়ার কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে কমবে ভোটদানের হার৷ কিন্তু চরম আবহাওয়া মোকাবিলার প্রশ্নে সরকারি ভূমিকার প্রভাব কি পড়বে ব্যালট বাক্সে বা ইভিএমের বোতামে? থাক এসব ‘রাজনৈতিক’ প্রশ্ন৷ আবার ফিরি নস্টালজিয়ায়৷

কলকাতায় এখন আমরা থাকি একটি বহুতল ভবনের সাততলায়৷ বারান্দা থেকে দেখা যায় শহরের বিখ্যাত একটি হ্রদ, যার হাওয়া এত দিন দূষিত বাতাসের মাঝেও একটুখানি অক্সিজেন জোগাত যেন৷

গত সপ্তাহে, পরিবারের মানুষের সাথে কথা বলতে গিয়ে জানলাম, সেই হ্রদ থেকে সব জল বের করে ফেলা হয়েছে৷ কারণ, হ্রদ বুজিয়ে সেখানে গড়ে উঠবে উড়ালপুল, আরো বড় কয়েকটি ভবন৷

জানতে চাইলাম, পাড়ার মানুষ কি কেউ প্রশ্ন করছে তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের যে চরম আবহাওয়া ঠেকাতে কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন তারা? হ্রদের ঠান্ডা বাতাসের কোন বিকল্প তুলে ধরছেন জনগণের জন্য? উত্তর তখনই আসে যখন প্রথমে কোনো প্রশ্ন করা হয়৷ যেখানে প্রশ্নই নেই, সেখানে কিসের উত্তর?

তার চেয়ে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে আমরা মোবাইলে দেখি বাঙালির বৈশাখ-যাপন, ভোট উৎসবের দিনলিপি৷

আর যারা বাতানুকূল যন্ত্র লাগাতে, বিদ্যুতের খরচ মেটাতে বা নিদেনপক্ষে রোদ থেকে বাঁচাতে পাকা ছাদের তলায় যেতে অক্ষম, তাদের কাছ থেকে প্রাণ খুলে ‘তাপস নিশ্বাস বায়ে, মূমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে’ গাইবার আশা আমরা করি না৷

আমার আজকের বাস্তবতায় ফিরে আসি, ঘরে হিটার চালাই৷ হাত গরম করতে করতে ভুলে যাই, যে বিশ্বের কোনো কোনো জায়গায় আসলে সব ভোটারের গরম লাগা না লাগাটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য