যেভাবে বাস্তবায়িত হবে ‘কঠোর লকডাউন'
৩০ জুন ২০২১এই ধারায় বলা হয়েছে, "মারাত্মক রোগের সংক্রমণ ছড়াতে পারে এমন অবহেলামূলক কাজ” করলে সর্বোচ্চ শাস্তি ৬ মাসের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড৷ তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, লকডাউনের মধ্যে দরিদ্র মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছাতে হবে৷, তা না হলে আইনের যত কঠোর প্রয়োগই হোক না কেন, মানুষকে ঘরে রাখা যাবে না৷
বুধবার মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ থেকে কঠোর লকডাউনের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে৷ সেখানে বলা হয়েছে, করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ১ জুলাই (বৃহস্পতিবার) সকাল ছয়টা থেকে ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত সারা দেশে এই বিধিনিষেধ বলবৎ থাকবে৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে৷ সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র্যাবও রাজপথে থাকবে৷
কীভাবে লকডাউন বাস্তবায়ন হবে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "কারা বের হতে পারবেন আর কারা বের হতে পারবেন না, সেটা প্রজ্ঞাপনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে৷” তিনি আরো বলেন, "এই ধারা দণ্ডবিধিতেই আছে৷ এতদিন আমরা প্রয়োগ করিনি৷ এবার প্রয়োগ করা হবে৷ আমরা বলছি, আপনি ঘরে থাকুন, আমরা রাস্তায় আছি৷ অযথা বাইরে বের হয়ে পরিবার, ছেলে-মেয়েকে বিপদে ফেলবেন না৷ যারা সরকারি সিদ্ধান্ত মানবে না তাদের ক্ষেত্রে আইনটি প্রয়োগ করা হবে৷ আমরা চাই না অযথা কাউকে গ্রেপ্তার করে সংখ্যা বাড়াতে৷”
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী যা যা বন্ধ থাকবে:
· সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস৷
· সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহনসহ সব ধরনের যন্ত্রচালিত যানবাহন৷
· অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল৷
· শপিং মল, মার্কেটসহ সব দোকানপাট৷
· সব পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র৷
· জনসমাবেশ হয়- এ ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান৷
· অতি জরুরি প্রয়োজন যেমন, ওষুধ-নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয়, চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফন বা সৎকার ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হতে পারবে না৷
যা যা খোলা থাকবে:
· আইন-শৃঙ্খলা, গণমাধ্যম ও জরুরি পরিষেবা৷
· পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক, লরি, কাভার্ড ভ্যান, কার্গো ভেসেল৷
· বন্দরসমূহ (বিমান, সমুদ্র, নৌ, স্থল) ও সংশ্লিষ্ট অফিস৷
· শিল্পকারখানা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে৷
· কাঁচাবাজার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে৷
· টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে৷
· খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রি (অনলাইনে কেনা বা নিয়ে যাওয়া) করতে পারবে৷
· আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে৷ বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের টিকিট প্রদর্শন করে যেতে পারবেন৷
· নিম্ন আদালতে গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের জন্য সীমিত পরিসরে বিচারক থাকবেন৷
· ৪ দিন বন্ধ রেখে সোমবার ব্যাংক খুলবে৷ এরপর প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত লেনদেন চলবে৷
লকডাউন বাস্তবায়নের বিষয়ে বুধবার সকালে সাংবাদিক সম্মেলন করেন পুলিশ কমিশনার৷ সেখানে তিনি বলেছেন, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ রাস্তায় বের হলে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে, আনা হবে আইনের আওতায়৷ যন্ত্রচালিত কোনো যানবাহন চলতে দেওয়া হবে না৷ জরুরি সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের গাড়ি চলবে৷ তিনি বলেন, পুলিশের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতেও সাজা দেওয়া হবে৷ এবার পুলিশ শক্ত অবস্থানে থাকবে৷ পুলিশ শক্ত অবস্থানে থাকবে বলেই আপনারা নিরাপদে থাকবেন৷
পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ‘হার্ডলাইনে' থাকবে৷ এমনও হতে পারে, প্রথম দিনেই গ্রেপ্তার পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে৷ সর্বাত্মক লকডাউনে ডিএমপি বিভিন্ন ইউনিটের উপ-কমিশনাররা বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবেন৷ গণমাধ্যমকর্মীরা পরিচয়পত্র দেখানো সাপেক্ষে যন্ত্রচালিত যানবাহনে চলাচল করতে পারবেন৷ এ ক্ষেত্রে মাস্ক পরে বের হতে হবে৷
ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, "সবকিছু ঠিক আছে৷ কঠোরতাও দরকার৷ কিন্তু মনে রাখতে হবে, দরিদ্র মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছে দিতে না পারলে তাদের কিন্তু ঘরে বন্দি করে রাখা যাবে না৷ পাশাপাশি যারা করোনা পরীক্ষা করতে চায় সে ব্যবস্থাটাও সহজ করতে হবে৷ যতই আপনি কঠোরতা দেখান না কেন, খাবারের ব্যবস্থা না থাকলে ওই লোকটি বের হবেই৷ এখন সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা তো নিতেই হবে৷ আবার এটাও বুঝতে হবে, লকডাউন কিন্তু স্থায়ী সমাধান না৷ কতদিন আপনি লকডাউন দিয়ে রাখবেন? ফলে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে জোর দিতে হবে৷ সবাই যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে সতর্কভাবে চলাফেরা করেন তাহলে কিন্তু এটা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব৷”
তবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, "এবার আগে থেকেই খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ দরিদ্র মানুষের মধ্যে যে চাল, ডাল বিতরণ করা হবে সেটা আগেই আমরা দেশের সব জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছি৷ অর্থও পাঠানো হয়েছে৷ এবার ১৪ দিনের হিসাব করে প্রত্যেক পরিবারকে ২০ কেজি চালসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র দেওয়া হবে৷ সঙ্গে কিছু নগদ টাকাও৷ ফলে খাবারের অভাবে কাউকে রাস্তায় বের হতে হবে না৷ সেটা আমরা নিশ্চিত করবো৷”
এদিকে কঠোর লকডাউন শুরুর আগের দিন বুধবার ঢাকা ছেড়ে গেছেন বহু মানুষ৷ সড়ক-মহাসড়কে বাস না থাকায় নানা উপায়ে তারা বাড়ি ফেরার চেষ্টা করেছেন৷ মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের বাংলাবাজার নৌপথে দেখা গেছে মানুষের ভীড়৷ মানিকগঞ্জের আরিচা ও রাজবাড়ির দৌলাদিয়া ফেরি ঘাটেও মানুষের চাপ ছিল৷ প্রতিটি ফেরিতে গাদাগাদি করে পারাপার হচ্ছেন মানুষ৷
বিআইডব্লিউটিসির সূত্রে জানা গেছে, বুধবার ভোর থেকে দুইটি ঘাটেই ঘরমুখী যাত্রীদের চাপ বেড়েছে৷ বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ফেরিঘাটের সহকারি ব্যবস্থাপক সামসুল আবেদীন জানান, শিমুলিয়া ঘাটে যাত্রীদের চাপ বেশি৷ ঢাকাগামী যাত্রীদের চাপও অন্যান্য দিনের চেয়ে অনেক বেশি৷