1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের হত্যার হুমকির অভিযোগ

১০ জানুয়ারি ২০১৯

মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা অভিযান আরো জোরদারের খবর পাওয়া গেছে৷ নো-ম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অভিযানে রোহিঙ্গাদের নির্যাতন করা হচ্ছে৷ এমনকি হত্যার হুমকিও দেয়া হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/3BJOH
ছবি: picture-alliance/AP/T. Zaw

এই পরিস্থিতিতে সীমান্তে কড়াকড়ি থাকায় রোহিঙ্গারা পালিয়ে তামব্রু-নাইখংছড়ি সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ডেও আসতে পারছেন না৷ অল্প কয়েকজন রোহিঙ্গা টেকনাফ থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে৷ ওই নো-ম্যানস ল্যান্ডে ২০১৭ সালের আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে৷

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও আরাকান আর্মি (এএ)-র বিরুদ্ধে চলমান সেনা অভিযানের মধ্যে গত ৪ জানুয়ারি দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের পর ১৩ জন সীমাস্ত পুলিশকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করে মিয়ানমারের তথ্য মন্ত্রণালয়৷ তাদের দাবি, বুথিয়াডং এলাকার চারটি সীমান্ত চৌকিতে হামলা চালানো হয়৷ তবে আরাকান আর্মির পক্ষ থেতে ৭ জনকে হত্যার কথা স্বীকার করা হয়েছে৷ আর জিম্মি থাকা আরো ১২ জনকে মুক্তি দেয়ার কথা জানানো হয়৷ এরপর থেকেই রাখাইনে মিয়ানমারের সেনা অভিযান আরো তীব্র হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে৷

রোহিঙ্গা যাঁরা আছেন, তাঁরাও এই অভিযানের শিকার হচ্ছেন: দিল মোহাম্মদ

এদিকে ৭ ডিসেম্বর মিয়ানমার দাবি করে, রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি এবং আরাকান আর্মির মধ্যে যোগাযোগ আছে৷ আর ওই দু'টি সংগঠনের ঘাঁটি আছে বাংলাদেশে৷ কিন্তু ৯ জানুয়ারি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ওই দাবি প্রত্যাখ্যান করে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের দাবিকে মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন বলে প্রতিবাদপত্রে উল্লেখ করে৷ প্রসঙ্গত, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের অধিকার সুরক্ষার নামে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে লড়ছে আরসা৷ আর ভিন্ন ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে আরাকান আর্মি৷

মিয়ানমারের তমব্রু ও বাংলাদেশের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গারাও রাখাইনে সেনা অভিযান আরো তীব্র হওয়ার খবর পাচ্ছেন নানা সূত্রে৷ নো-ম্যান্স ল্যান্ডের রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ নো-ম্যান্স ল্যান্ড থেকে ডয়চে ভেলেকে টেলিফোনে জানান,‘‘আরাকান আর্মিকে নির্মূলে মিয়ানমারের সেনারা অভিযান চালাচ্ছে আর রোহিঙ্গা যাঁরা আছেন, তাঁরাও এই অভিযানের শিকার হচ্ছেন৷ আরাকান আর্মির সাথে রোহিঙ্গাদের যোগাযোগের অজুহাত তুলে তাঁদের হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে৷ তাঁদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে৷ নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলেও ওখানে যাঁরা আছেন তাঁদের কাছ থেকে খবর পেয়েছি৷’’

আরাকান আর্মি রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে অভিযান চলাচ্ছে: রশীদ আহমেদ

তিনি আরো জানান,‘‘রাখাইনের রোহিঙ্গারা চাইলেও নো-ম্যান্স ল্যান্ডের দিকে আসতে পারছেন না৷ কারণ, সীমান্তে কঠোর পাহারা বসানো হয়েছে, নৌকা চলাচলও বন্ধ৷ সীমান্ত এলাকায় সব ধরনের মুভমেন্ট বন্ধ৷ তবে টেকনাফ এলাকা থেকে কিছু রোহিঙ্গা প্রবেশের চেষ্টা করছে বলে খবর পেয়েছি৷’’

টেকনাফের স্থানীয় নানা সূত্রের সঙ্গে কথা বলে কোনো রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে দু-চারদিনে প্রবেশ করেছে বলে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি৷ টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের নেতা রশীদ আহমেদ ডয়চে ভেলেকে জানান,‘‘আমরা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সাথে আরাকান আর্মির তীব্র লড়াইয়ের খবর পাচ্ছি৷ আর আরাকান আর্মি রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে অভিযান চলাচ্ছে৷ তাঁদের ওপর নির্যাতন চলছে৷ আমরা নানা মাধ্যমে প্রতিদিনই খবর পাই৷ কিন্তু দুই দিকের সীমান্তেই কড়া পাহারা থাকায় তাঁরা সীমান্তের দিকে আসতে পারছে না৷ টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে কেউ এসেছে বলে আমাদের কাছে খবর নেই৷ যাঁরা পালানোর চেষ্টা করছেন তাঁদের ধরে রোহিঙ্গাদের জন্য যে ক্যাম্প বানানো হয়েছে সেখানে নিয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং সীমান্ত রক্ষী বাহিনী আটকে রাখছে৷ ক্যাম্পে নিয়ে আইডি কার্ড ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে৷’’

রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে এমন তথ্য আমার কাছে নেই: যোশেফ ত্রিপুরা

এদিকে কক্সবাজারে ইউএনএইচসিআর-এর পাবলিক ইনফরমেশন অফিসার যোশেফ সূর্য ত্রিপুরা ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে বা সীমান্তে তাঁদের চাপের কোনো তথ্য এখানো আমার কাছে নেই৷ ফিল্ড লেভেলে কথা বললে হয়তো সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে পারব৷’’

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে মিয়ানমারের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন অভিযান শুরু করে৷ এর আগে ২০১২ সালেও মিয়ানমার সেনারা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়৷ এই দুই দফায় ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে৷

এরপর বাংলাদেশ-মিয়ানমার আলোচনা ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে রাজি হয় মিয়ানমার৷ গত ১৫ নভেম্বর প্রথম দফায় ১৫০ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত নেয়ার কথা থাকলেও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে কোনো রোহিঙ্গাই ফেরত যেতে রাজি হননি৷

আবারও অশান্ত রাখাইন, সীমান্তে হাজারো রোহিঙ্গা