রাজত্ব হারাচ্ছে ‘রাজা’ প্রজাপতি
এ বছর মেক্সিকো পৌঁছানো মোনার্ক প্রজাপতির সংখ্যা আগের বছরের চেয়ে এক চতুর্থাংশ কমেছে৷ শীত মৌসুমে হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে উত্তর থেকে দক্ষিণে যায় তারা৷ তাদের জনসংখ্যা কমে যাওয়া বিশাল অঞ্চলের বাস্তুসংস্থানের জন্যও বড় হুমকি৷
পরিযায়ী প্রজাপতি
বিশ্বে সবচেয়ে দীর্ঘপথ পাড়ি দেয়া পরিযায়ী প্রাণীদের অন্যতম মোনার্ক প্রজাপতি৷ ছোট পাখায় ভর করে প্রতিবছর মেক্সিকো থেকে পাড়ি জমায় এরা ক্যানাডাতে৷ মাঝে অতিক্রম করে দুই হাজার মাইল বা তিন হাজার ২২০ কিলোমিটার পথ৷
রঙ্গিন পাখা
কমলা-কালোর নকশা আর সাদা ফোঁটায় মোনার্ক প্রজাপতি খুব সহজেই আলাদা করা যায়৷ তার উপর যেখানে যায় সেখানে মোটামুটি ঝাঁক বেধেই থাকে৷ ক্যানাডা, মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রে এদের বসবাস৷
শীতযাপন
গরমের মৌসুমটা কাটে উত্তরে৷ গ্রীষ্মের শেষ কিংবা শরতের প্রথমে শুরু হয় দীর্ঘযাত্রা৷ মধ্য ও উত্তর অ্যামেরিকা আর দক্ষিণ ক্যানাডা থেকে ঝাঁক বেধে তারা রওনা হয় ফ্লোরিডা বা মেক্সিকোর উদ্দেশ্যে৷ শীতকালটা সেখানেই কাটে৷
প্রজাপতি আশ্রম
মেক্সিকোর এল রোজারিও অভয়াশ্রমে এখন কমলা-কালোর সমাহার৷ নভেম্বর-মার্চ পর্যন্ত এখানেই রাজত্ব করবে মোনার্কের এই ঝাঁক৷
জনসংখ্যার পড়তি
চলতি বছর প্রজাপতিদের আগমনে ভাটা নেমেছে৷ শীতযাপনে আসা প্রজাপতির সংখ্যা আগের বছরের চেয়ে ২৬ ভাগ কমেছে৷ মেক্সিকোর কমিশন ফর ন্যাশনাল প্রোটেকটেড এরিয়াস ও দ্য ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড হিসাব করে এমন তথ্য জানিয়েছে৷
কমছে বিস্তৃতি
গত ডিসেম্বরে অভয়াশ্রমের দুই দশমিক আট হেক্টর অঞ্চল ছিল মোনার্কদের রাজত্বে৷ এবার শীতে সেটি নেমে এসেছে দুই দশমিক এক হেক্টরে৷ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড৷
জলবায়ু পরিবর্তন
কেন মোনার্কদের সংখ্যার এমন সংকোচন? দুইটি কারণের কথা বলা হচ্ছে৷ প্রথমত, জলবায়ু পরিবর্তন, যা তাদের ভ্রমণে প্রভাব ফেলছে৷ দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রে প্রজননস্থল হারানো, যা বংশবিস্তারে বাধা তৈরি করছে৷
যুক্তরাষ্ট্রেও কমছে
মোনার্কদের সংখ্যা যে হঠাৎ কমে গেছে বিষয়টি তা নয়৷ যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে ১৯৯৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে মোনার্কের সংখ্যা ৯৭ ভাগ কমে ৩০ হাজারে দাঁড়িয়েছে৷ একই সময়ের ব্যবধানে পূর্ব অংশে কমেছে ৮৪ ভাগ৷ এই হিসাব যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দ্য ফিশ এন্ড ওয়াইল্ডলাইফ সার্ভিস এর৷
বিপদাপন্ন প্রাণী
বিপদাপন্ন প্রাণী হিসেবে মোনার্ক বিবেচিত হবে কিনা তার পর্যবেক্ষণ তালিকায় গত বছরের ডিসেম্বরে প্রজাপতিটিকে অন্তর্ভুক্ত করেছে মার্কিন সরকারি সংস্থাটি ৷ কৃষি, নগরায়ন, কীটনাশকের ব্যবহার আর জলবায়ু পরিবর্তন তাদের সংখ্যা কমার কারণ বলে মনে করছে দ্য ফিশ এন্ড ওয়াইল্ডলাইফ সার্ভিস৷
পরিবেশে প্রভাব
আট থেকে নয় মাসের জীবন আর হাজার মাইল পাড়ি দেয়া পথে মোনার্ক বহু জীব বৈচিত্র্যকে টিকিয়ে রাখছে৷ বিশাল অঞ্চলের অসংখ্য উদ্ভিদের পরাগায়ন আর খাদ্যশৃঙ্খল তাদের উপর নির্ভরশীল৷ মোনার্কের সংখ্যা কমা মানে প্রকৃতির এই আন্তসম্পর্কের জাল ছিড়তে শুরু করা৷ যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো তাই মোনার্ক রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়ে আসছে সরকারের কাছে৷