রুগ্ন শিশুর লেখাপড়ার সহায়তায় রোবট
৯ জুলাই ২০২৪‘‘হ্যালো লিনুস, ভালো হয়েছে যে তুমি যোগ দিয়েছো৷ আমরা তোমার জন্য ওয়ার্কিং গ্রুপ স্থির করেছি৷ এবার শুরু করা যাক৷''
বার্লিন শহরের স্কুল পড়ুয়া লিনুস হার্ডুং-এর চোখ, কান ও মুখ হয়ে উঠেছে এক মিনি রোবট৷ সেই রোবট সপ্তম শ্রেণির অসুস্থ শিশুটিকে বাসা থেকে ক্লাসে অংশ নেওয়া সম্ভব করছে৷ প্রায় ছয় মাস ধরে সেই ব্যবস্থা চলছে৷ সেই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে লিনুস বলে, ‘‘শুরুর দিকে সবসময়ে এমন হতো৷ কিছু একটা বলার জন্য হাত তুললেই অ্যাড্রিনালিনের স্রোত বয়ে যেত৷ মনে ভয় ছিল, কিছু ভুল কথা বলে ফেললে কী হবে৷ আমার কাছে বিষয়টা নতুন ছিল৷ সংযোগ খারাপ হওয়ার ভয়ও ছিল৷ আর এখন সেই রুটিন দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে৷''
বায়োলজি ক্লাসে আজ গ্রুপ ওয়ার্ক রয়েছে৷ শুরুতে কিছু সমস্যা দেখা যাচ্ছে৷ বাসায় বসেই ক্লাসে কী হচ্ছে, তা জানার জন্য লিনুস টাচপ্যাডের মাধ্যমে ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে৷ সব সময় প্রযুক্তি ঠিকমতো কাজ করে না৷ স্কুলের ইন্টারনেট সংযোগও তেমন শক্তিশালী নয়৷ ফলে ট্রান্সমিশন সব সময়ে ভালো হয় না৷
মাঝে মধ্যে সমস্যা হলেও অবতার আসার আগে ১৩ বছরের এই স্কুল পড়ুয়ার জন্য হোমস্কুলিং অনেক কঠিন ছিল৷ লিনুসের মা সুসানে হার্ডুং বলেন, ‘‘আগে ছেলে কোনো কিছু করার তাগিদ অনুভব করতো না৷ বুঝতোও না, এখন কেন সব কিছু এমন হতে হবে৷ শিক্ষক বা শিক্ষিকা যখন বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলেন বা তাদের সঙ্গে গ্রুপ ওয়ার্ক করেন, সেটা একেবারে ভিন্ন অভিজ্ঞতা৷ একা বইয়ের সামনে বসে থাকার তুলনায় সেখানে অনেক বেশি আনন্দ পাওয়া যায়৷''
জন্মের সময়ে হৃদযন্ত্রের ত্রুটি এবং পালমোনারি হাইপারটেনশন তো ছিলই৷ তার উপর করোনা মহামারির সময় তাকে প্রায় দেড় বছর বাসায় কাটাতে হয়েছে৷ অর্থাৎ সে ক্লাসে যেতে পারে নি৷ গত বছরের হেমন্তকালে হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের কেন্দ্রীয় সংগঠন তার অবতার সৃষ্টির জন্য অর্থ দিয়েছে৷ কারণ লিনুসের পক্ষে স্কুলে যাওয়া অত্যন্ত কঠিন কাজ৷ সুসানে হার্ডুং বলেন, ‘‘সমতল জায়গায় সে ধীরে ধীরে হাঁটতে পারে, সেটা কোনো সমস্যা নয়৷ সিঁড়ি চড়া তার জন্য কঠিন৷ স্কুলে লিফট না থাকায় তাকে অতি ধীরে চলতে হতো৷''
লিনুস হার্ডুং নিজের অবস্থার বর্ণনা দিয়ে বলে, ‘‘দৌড়ানোও বড় এক সমস্যা৷ শুধু ক্লাসরুম বদলানোও স্ট্রেসের কারণ৷ সিঁড়ি বেয়ে উপরতলার ঘরে যাওয়ার কথা ভাবলেই চিন্তা হয়৷ এই অবতার তাই সত্যি অসাধারণ৷ আমাকে আর ক্লাসরুম বদলানোর স্ট্রেস নিতে হচ্ছে না৷''
লিনুসের বন্ধুরা যে বিশেষ ধরনের ব্যাকপ্যাক পিঠে নেওয়া রোবটটিকে ব্রেকের সময়েও সঙ্গে নিয়ে যায়, এমনটাই কাম্য৷ অবতার শুধু দীর্ঘকাল অসুস্থ শিশুদের পড়াশোনাই নিশ্চিত করে না, তাদের সামাজিক যোগাযোগ অটুট রাখাও জরুরি৷ লিনুস বলে, ‘‘সত্যি মনে হয়, আমি যেন সেখানেই রয়েছি৷ জুম মিটিং-এর মাধ্যমে সেটা সম্ভব হতো না৷ অথবা তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগই থাকতো না৷ সত্যি স্কুলে যাওয়ার মতো অনুভূতি পাচ্ছি৷''
গ্রীষ্মের ছুটির পর লিনুস সত্যি সেই খাঁটি অনুভূতি পেতে পারে৷ ওষুধে এত ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে, যে সে দ্রুত আবার ক্লাসে উপস্থিত থাকতে পারবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ তখন অবতার বরং ছুটিতে যেতে পারবে৷
ক্রিস্টিনে বায়ার/এসবি