রেস্টুরেন্ট থেকে অফিস ক্যান্টিন
১৮ এপ্রিল ২০১৮শেফ মিকেল কার্স্টাড মুক্ত প্রকৃতিতে, খোলা আকাশের নীচে রান্না করতেই ভালোবাসেন৷ ডেনমার্কের উপকূলে বাল্টিক সাগর থেকে আজ ঝিনুক তুলে এনেছেন মিকেল৷ তার সঙ্গে যোগ করেছেন ‘ফেনেল' বা মৌরি, আপেল ও রসুন৷ মিকেল কার্স্টাডের রান্না এইরকম সহজ ও সাদামাটা – যে কারণে সারা ডেনমার্কে আজ তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে৷
মিকেল জানালেন, ‘‘আমি রান্নার উপাদানগুলির উপর জোর দিই৷ দেখি, এখন কী মরশুম এবং কীসের মরসুম, আর তাই দিয়ে রান্না করার চেষ্টা করি৷ কেননা, মৌসুমি খাবারদাবার দামে সস্তা হয়, আবার সহজে পাওয়া যায়৷ কাজেই রান্নার স্বাদ-গন্ধ সবই খুব ভালো হয়৷''
কোপেনহেগেনের মিশেলিন তারকাযুক্ত নানা রেস্টুরেন্টে বহুবছর ধরে কাজ করেছেন মিকেল কার্স্টাড৷ বিশ্বখ্যাত ‘নোমা' রেস্টুরেন্টের উপদেষ্টা ছিলেন তিনি৷ তারপর নামকরা রেস্টুরেন্ট ছেড়ে সেদিকে মন দেন, যেখানে বহু মানুষজনকে প্রতিদিন তাঁর রান্না খাওয়াতে পারবেন: অফিস ক্যান্টিনে রাঁধতে শুরু করেন মিকেল৷ তাঁর অভিযান শুরু হয় ২০১২ সালে, এই অফিস ক্যান্টিনটিতে৷ তখন এই ক্যান্টিনে প্রচুর পরিমাণ মাংস আর চর্বিওয়ালা ঝোল ছাড়া বিশেষ কিছু পাওয়া যেতো না৷ আজ এই ক্যান্টিনের মেনু মিকেলের নিজের হাতে গড়া৷
মিকেল বললেন, ‘‘আমরা সব কিছু বদলে দিয়েছি৷ প্রথমেই আমরা ভাঁড়ারে গিয়ে অনেক কিছু ফেলে দিই– যেমন আগে থেকে তৈরি খাবারদাবার বা সহজে রান্না করার মতো খাবারদাবার৷ আমরা সব কিছু নতুন করে শুরু করি৷''
মিকেলের মতে ক্যান্টিনে স্বাস্থ্যকর খাবার যে দামি হতেই হবে, এমন কোনো কথা নেই৷ বরং অফিসের কর্মচারীদের খাওয়াদাওয়ার অভ্যেস আর রুচি বদলানোটাই বেশি শক্ত৷ অনেকে গোড়ায় নাক কুঁচকেছেন৷ চার মাস ধরে মিকেলকে তাঁর রান্নার মর্ম বোঝাতে হয়েছে৷
মিকেল-এর মতে, ‘‘লোকজনকে বোঝালে তারা ঠিকই বোঝে৷ কাজেই আমি দুপুরের খাওয়ার সময় প্রতিদিন এখানে দাঁড়িয়ে থাকতাম আর লোকজনের সাথে কথা বলতাম; তাদের বলতাম, এটা এই রান্না আর আমরা এটা এভাবে রাঁধছি, কেননা মাংসের সাথে এই সবজিগুলো খুব ভালো মেলে৷''
ক্যান্টিনে লাইন পড়ে
সাফল্যও পেয়েছেন মিকেল: আজ এই ক্যান্টিনে ঠিক দুপুর বারোটায় অফিসকর্মীদের লাইন পড়ে যায়৷ যে ক্যান্টিন আগে খুব খারাপ বলে গণ্য ছিল, আজ তা ডেনমার্কের সেরা অফিস ক্যান্টিনগুলোর মধ্যে পড়ে৷
অতিথিদের কেউ বলেন, তিনি এই খাবার খুব ভালোবাসেন; খুবই স্বাস্থ্যকর আর এখানে এমন সব খাবার পাওয়া যায়, যা বাড়িতে সাধারণত মেলে না৷
আরেকজন বললেন, তিনি ৩৬ বছর ধরে এই অফিসে কাজ করছেন৷ আগে এই ক্যান্টিনে টিনের মাছ আজ কলিজার ভর্তা ছাড়া কিছু পাওয়া যেতো৷ এখন অনেক উন্নতি হয়েছে৷
তাঁর পন্থা যে সফল হয়েছে, মিকেল কার্স্টাড তাতে খুশি৷ আপাতত তিনি একটি বৃদ্ধাশ্রম ও একটি হাসপাতালের বাসিন্দা ও রোগীদের পথ্য সংক্রান্ত উপদেষ্টা – আবার ডেনমার্কের সবচেয়ে নামকরা শেফদের একজনও বটে৷ মিকেল নানা খেতাব জিতেছেন ও রান্নার বই বার করেছেন৷ তাঁর সর্বাধুনিক রান্নার বইটির নাম হল ‘এভারগ্রিন', ‘চিরসবুজ': নিরামিষ রান্না নিয়ে বই৷ সোশ্যাল মিডিয়াও ভালো বোঝেন মিকেল, ইনস্টাগ্রামে রোজ একটি নতুন রেসিপি পোস্ট করেন৷ এছাড়া থাকে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের নানা খুঁটিনাটি – কেননা মিকেল চার সন্তানের জনক৷ ছেলেমেয়েদের সঙ্গে যতোটা সম্ভব সময় কাটাতে চান তিনি৷
নামকরা শেফ, ওদিকে চার ছেলেমেয়ের বাবা মিকেলের পক্ষে পেশা আর পরিবারের মধ্যে ভারসাম্য রাখা খুব সহজ হয়নি৷ তিনি যে নামিদামি রেস্টুরেন্টের শেফ হওয়ার কাজ ছেড়েছেন, তার একটি কারণ, মিকেল সন্ধ্যায় স্ত্রী আর ছেলেমেয়েদের সঙ্গে এক টেবিলে বসে রাতের খাওয়া খেতে ভালোবাসেন৷
কাজেই মিকেল কার্স্টাডকে এক নতুন ধরনের শেফ বলা চলে – যেমন তাঁর পেশায়, তেমনই তাঁর পারিবারিক জীবনে৷
আন্টিয়ে বিন্ডার/এসি