1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রোহিঙ্গা শরণার্থীরা কি ফিরতে পারবেন মিয়ানমারে?

২০ জুন ২০২১

বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আশা করছেন একদিন তারা তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারবেন৷ কিন্তু তাদের সেই আশা কবে পূরণ হবে তা তারা জানেন না৷ এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক চাপও যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন তারা৷

https://p.dw.com/p/3vFY6
Bangladesch Rohingya Flüchtlinge, Cox's Bazar
ছবি: picture-alliance/Zuma Press/Km Asad

‘‘আমরা সব সময়ই আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি৷ যখন সুযোগ হবে তখনই ফিরে যাব৷ কিন্তু তার আগে আমাদের সেখানে নিরাপত্তা, বাসস্থান, নাগরিকত্ব এবং ভোটাধিকারের নিশ্চয়তা দিতে হবে,'' বলেন কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী কমিউিনিটির সহ-সভাপতি মাস্টার আব্দুর রহিম৷ এই নিশ্চয়তা কে দেবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘সেটার নিশ্চয়তা মিয়ানমার সরকারকে দিতে হবে৷ কিন্তু নতুন সামরিক জান্তা সেটা করবে বলে মনে হয় না৷ উপরন্তু সেখানে থাকা রোহিঙ্গাদের ওপর আরো নির্যাতন বাড়ছে৷ তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরো চাপ সৃষ্টি করতে হবে৷ জাতিসংঘের উদ্যোগ যথেষ্ঠ নয়৷’’

বাংলাদেশের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জনিয়ে বলেন, ‘‘আমরা ক্যাম্পে ভালো আছি৷ কিন্তু এখানে আমাদের দেয়ালবন্দি কাঁটাতারের মধ্যে জীবন৷ বাইরে চলাচলের অনুমতি নেই৷ বছরের পর বছর ধরে একটি জনগোষ্ঠী তৈরি হচ্ছে যাদের সামনে কোনো ভবিষ্যত নাই৷’’

আব্দুর রহিম

ঠিক এমন এক বাস্তবতায় আজ (রোববার) বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক শরণার্থী দিবস৷ জাতিসংঘের হিসাবে বিশ্বে বর্তমানে আট কোটি বেশি শরণার্থী বিভিন্ন দেশের আশ্রয়ে রয়েছেন৷ যেখানেই তারা থাকুন না কেন স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও খেলাধুলার মতো বিষয়গুলোতে যাতে তারা অন্তর্ভুক্ত থাকেন সেই আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ৷ বাংলাদেশেও রোহিঙ্গারা এসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত৷ কুতুপালং ক্যাম্পের মুখপাত্র ইউনূস আরমান বলেন, ‘‘এখানে আমরা ভালো আছি৷ তবে আমরা আমাদের মাতৃভূমিতে ফিরতে চাই৷ অনেক রোহিঙ্গা আছেন যাদের জন্ম এখানে৷ তারপরও তারা পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছেন না৷’’

শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারের কুতুপালং এখন বিশ্বে সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরে পরিণত হয়েছে৷ মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে আট লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছেন সেখানে৷

বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের হিসাবে, ভাসানচরসহ কক্সবাজারের ৩৫টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এখন ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর বসবাস৷ তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকের বয়সই ১৮ বছরের নিচে৷ আর এই ১১ লাখের মধ্যে সাত লাখ মিয়ানমার থেকে আসেন ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হামলা ও নির্যাতনের মুখে৷

মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নেয়ার চুক্তি করে ২০১৮ সালে৷ বাংলাদেশ এ পর্যন্ত মাট ছয় লাখ ৮২ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা পাঠালেও এখন পর্যন্ত কোনো রোহিঙ্গাকে তারা ফেরত নেয়নি৷ এরমধ্যে সামারিক জান্তা ক্ষমতা দখল করায় সেই চুক্তি নিয়ে নতুন করে আর কোনো কথা হচ্ছে না৷

রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার এই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে হতাশা আরো বাড়ছে৷ মিয়ানমার সরকারের ওপর তাদের এখনো কোনো আস্থা তৈরি হয়নি৷ এদিকে স্বল্প জায়গায় এত বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর বসবাসে দেখা দিচ্ছে নানা সমস্যা৷ কুতুপালং ক্যাম্পের মুখপাত্র ইউনূস আরমান বলেন, ‘‘এখন এখানে ক্যাম্পে এক নতুন পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে৷ রোহিঙ্গাদের মধ্যেই কেউ কেউ সন্ত্রাস এবং অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে৷ একটি গ্রুপ এখানে বসে মিয়ানমার সরকারের হয়ে কাজ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে৷ এখান থেকে তথ্য পাচার করছে৷ যা আমাদের বেকায়দায় ফেলছে৷ বাংলাদেশ সরকারের কাছেও আমাদের হেয় করছে৷’’

রোহিঙ্গাদের নিয়ে কক্সবাজারের স্থানীয়দের মধ্যেও নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হচ্ছে৷ উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হকের দাবি, ‘‘রোহিঙ্গাদের একটি অংশ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় নিরাপত্তা সংকট তৈরি হচ্ছে৷ তাদের কেউ কেউ মাদকসহ নানা অপরাধে যুক্ত হয়ে পড়ছে৷ ফলে স্থানীয়ভাবে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে৷ তাদের মধ্যে নানা গ্রুপ ও উপ-গ্রুপ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে৷’’

ড. ইমতিয়াজ আহমেদ

শরণার্থী স্বীকৃতি দেয়নি বাংলাদেশ
বাংলাদেশ শরণার্থী বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনভেশনে সই করেনি৷ ফলে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ সরকারের কাগজে কলমে শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃত নয়৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘‘শুধু বাংলাদেশ কেন ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশই সেই শরণার্থী সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি৷ কিন্তু বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা শরণার্থীদের চেয়ে অনেক বেশি সুবিধা পাচ্ছেন৷ যারা এই রিফিউজি স্ট্যাটাসের কথা বলছেন তারা ম্যাক্সিকান বর্ডারে শিশুদের আলাদা করে রেখেছে৷ যা মানবতা বিরোধী৷’’

তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের এখন মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনই মূল সমাধান৷ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সে ব্যাাপরে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না৷ চীন ও ভারত তাদের ব্যবসা বাণিজ্য ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছে৷ সমস্যা তো বাংলাদেশের নয়, সমস্যা হলো মিয়ানমারের৷ তাদের এটা সমাধান করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টি করা উচিত৷

মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রি নিষিদ্ধের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে শুক্রবার একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে৷ ১১৯টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে থাকলেও, ভোটদানে বিরত ছিল বাংলাদেশ৷ এ বিষয়ে ড ইমতিয়াজ বলেন, ‘‘ওখানে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে তো কিছু নাই৷ তাহলে বাংলাদেশের স্বার্থ কী? মিয়ানমার তো বাংলাদেশের শত্রু না৷’’

এদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর কারণ ব্যাখ্যা করে একটি বিবৃতিতে দিয়েছে৷ সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ উদ্বিগ্ন যে জাতিসংঘের ওই প্রস্তাবে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের কোনো কথা নাই৷ সমস্যা সমধানের কোনো উপায়ও প্রস্তাব করা হয়নি৷ রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের রাখাইনে যে অত্যাচার চালানো হয়েছে সে ব্যাপারেও কিছু বলা হয়নি৷ তাদের প্রত্যাবাসন, সেখানে তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারেও প্রস্তাবে কিছু নাই৷ রোহিঙ্গা সমস্যার কারণ ও তার প্রতিকারের কোনো কথা না থাকায় বাংলাদেশ ভোটদানে বিরত থেকেছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য