1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রোহিঙ্গাদের নেয়া শুরু করবে মিয়ানমার

২৩ নভেম্বর ২০১৭

আগামী দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়া শুরু করবে মিয়ানমার৷ এ নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে৷ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়৷

https://p.dw.com/p/2o8ov
ছবি: bdnews24.com

বৃহস্পতিবার দুপুরে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোর স্টেট কাউন্সিলরের অফিসে দু'দেশের মধ্যে এই সমঝোতা স্বাক্ষর হয়৷ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এবং মিয়ানমারের ইউনিয়ন মিনিস্টার সোয়ে চুক্তিতে সই করেন৷ চুক্তি অনুযায়ী, আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হবে৷ তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঠিক করবেন কী প্রক্রিয়ায় মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে৷

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে চুক্তির আর কিছু বিস্তারিত জানানো হয়নি৷ রোহিঙ্গাদের কতদিনে ফেরত নেয়া হবে, প্রতিদিন কতজন ফেরত নেয়া হবে তা-ও জানানো হয়নি৷ 

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী বৃহস্পতিবার সকালে মিয়ানমারে স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি'র সঙ্গেও বৈঠক করেন৷ সেখানে দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে বাণিজ্য এবং কানেকটিভিটি নিয়ে কখা বলেন তাঁরা৷

গত ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইনে জাতিগত নিধনের মুখে এ পর্যন্ত ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে৷ আর গত বছরের অক্টোবর থেকে জুলাই পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসে প্রায় ৯০ হাজার রোহিঙ্গা৷ এর আগে গত কয়েক দশকে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছিল৷ সব মিলিয়ে বাংলাদেশে এখন দশ লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে৷

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই রোহিঙ্গারা নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আসছে৷ এর আগে ১৯৭৮ সালে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে মিয়ানমার৷ সেই চুক্তির অধীনে দুই লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা ছয় মাসের মধ্যে ফেরত নিয়েছিল তারা৷ এরপর ১৯৯২ সালে দু' দেশের মধ্যে আরেকটি সমঝোতা হয়, যার অধীনে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ১৩ বছরে দুই লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফেরত যায়৷ তারপর আর কোনো রোহিঙ্গা ফেরত যায়নি৷

গত আগষ্টের নির্যাতনে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসা শুরু করার পর থেকে নির্যাতনের বিরুদ্ধে এবং রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার জন্য মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়তে থাকে৷ বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক এবং আন্তর্জাতিক  পর্যায়ে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করে৷

গত বুধবার  রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গা পরিস্থিতিকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন৷ তিনি বলেন, ‘‘রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম বাস্তুচ্যূত হয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে শরণার্থী হয়েছে৷ এটা জাতিগত নিধনযজ্ঞ৷ ট্রাম্প প্রশাসন এ ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের মার্কিন আইনের আওতায় জবাবদিহিতার ওপর জোর দিচ্ছে৷ এছাড়া সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিও যুক্তরাষ্ট্রের বিবেচনায় রয়েছে৷’’

আর গত ১৫ নভেম্বর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন একদিনের সংক্ষিপ্ত সফরে নেপিদোতে সু চি'র সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতায় গ্রহণযোগ্য তদন্ত করার আহবান জানান৷

সমঝোতা স্মারকে কী আছে তা আমাদের আগে জানতে হবে: ড. ইমতিয়াজ

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘‘মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের দু'মাসের মধ্যে ফেরত নেয়া শুরু করবে৷ কিন্তু তাদের কতদিনের মধ্যে ফেরত নেবে তা এখনো স্পষ্ট নয়৷ সেটা পরিস্কার না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করা যায় না৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এখনো দেশে ফেরেননি৷ দেশে ফিরে এসে সংবাদ সম্মেলনে হয়তো বিষয়টি পরিস্কার করবেন৷ আর মিয়ানমার কোন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে তাও বিবেচনা করতে হবে৷ তাদের নাগরিকত্ব এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই কি ফেরত নেয়া হবে? সমঝোতা স্মারকে কী আছে তা আমাদের আগে জানতে হবে৷’’

মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বা সমঝোতার ওপর নির্ভর করা কঠিন: তানজিমউদ্দিন খান

আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক তানজিমউদ্দিন খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সমঝোতার প্রকৃতি সম্পর্কে স্পষ্ট না হয়ে আসলে কিছু বোঝা যাচ্ছে না৷ কারণ, মিয়ানমার এর আগে শর্ত দিয়েছিল যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির পর বাংলাদেশ বিষয়টি আর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলতে পারবে না৷ আবার তারা বলছে, মিয়ানমারে বৈধ নাগরিকদের ফেরত নেবে৷ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার তো নাগরিক বলেই স্বীকার করে না৷ তাই মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বা সমঝোতার ওপর নির্ভর করা কঠিন৷ আন্তর্জাতিক চাপের মাধ্যমেআন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমাধানই আমাদের পেতে হবে৷’’

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শুক্রবার দেশে ফিরবেন৷ শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে মিয়ানমারের সঙ্গে এই সমঝোতা স্মারক নিয়ে কথা বলবেন৷

ওদিকে মিয়ানমার সূত্র বলছে, ১৯৯২ সালের চুক্তির আলোকেই এবারের চুক্তি৷ তাই যদি হয়, তাহলে প্রশ্ন হলো, ১৯৯২ সালের চুক্তিতে মিয়ানমার ১৩ বছরে দুই লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গা ফেরত নিয়েছে, ১০ লাখ রোহিঙ্গা ফেরত নিতে তারা কত সময় নেবে?

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...