অপরাজেয় লিমন
৩ আগস্ট ২০১৩২০১১ সালে তার পরীক্ষা দেয়ার কথা থাকলেও র্যাবের গুলিতে পঙ্গু হওয়ার কারণে সে তখন পরীক্ষা দিতে পারেনি৷ চলতি বছরে সে পরীক্ষা দেয়৷
২০১১ সালের ২৩ মার্চ ঝালকাঠির রাজাপুরের সাতুরিয়া গ্রামে র্যাবের গুলিতে আহত হন কিশোর লিমন হোসেন৷ লিমন গরু চড়াতে বাইরে বের হয়েছিল৷ আর র্যাব সদস্যরা তাকে সন্ত্রাসী ধরার নামে গুলি করে৷ গুলিতে লিমন পা হারিয়ে চিরদিনের জন্য পঙ্গু হয়ে যায়৷ শুধু তাই নয় লিমনের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইন এবং সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে র্যাব দুটি মামলাও করে৷ এই ঘটনায় সারা দেশে নিন্দা এবং প্রতিবাদের ঝড় ওঠে৷ এরপর দীর্ঘ দিনের চিকিৎসায় লিমন এখন একটি কৃত্রিম পা নিয়ে বেঁচে আছে৷
কিন্তু লিমন থেমে থাকেনি৷ চলতি বছরেই সে কাঁঠালিয়া পিজিএস বহুমুখী কলেজ থেকে পঙ্গুত্ব নিয়ে এইচএসসি পরীক্ষা দেয়৷ শনিবার প্রকাশিত ফলাফলে লিমন জিপিএ ৪ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে৷ এই ফলাফলে লিমন বেজায় খুশি৷ সে যেন মুহূর্তের মধ্যে তার পঙ্গুত্বের বেদনা ভুলে যায়৷ কিন্তু পরক্ষণেই ডয়চে ভেলেকে জানায়, সে উচ্চশিক্ষা নিতে চায়৷ এজন্য ভর্তি হতে চায় ভাল একটি প্রতিষ্ঠানে৷ কিন্তু তার সে আশা কি পূরণ হবে? কে তাকে সহায়তা করবে৷ তাই সে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার উচ্চশিক্ষার জন্য সহায়তা চেয়েছে৷ তার ভাবতেই কষ্ট হয় সবাই যখন স্বাভাবিক পা নিয়ে ক্লাসে যাবে, তাকে তখন ক্লাসে যেতে হবে কৃত্রিম পা নিয়ে৷
লিমন জানায় তার পঙ্গুত্বের ঘটনায় তার পরিবারেও বিপর্যয় নেমে এসেছে৷ এখনো সে তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাজাপুরের গ্রামের বাড়িতে থাকতে পারেনা৷ বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে সে পাশের উপজেলা কাউখালিতে একটি ভাড়া বাসায় থাকে৷ র্যাবের সোর্সরা তাদের এখনো হুমকি দেয়৷ একারণেই গ্রামের বাড়িতে থাকতে পারেনা৷ আর এই সুযোগে তাদের অল্প কিছু ফসলের জমি দখল করে নিয়েছে সন্ত্রাসীরা৷
সরকার ইতিমধ্যেই লিমনের বিরুদ্ধে দায়ের করা দুটি মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ লিমন জানায় এর মধ্যে একটি মামলা প্রত্যাহার হলেও আরেকটি মামলা এখনো প্রত্যাহার হয়নি৷ আর যে র্যাব সদস্যরা লিমনকে পঙ্গু করেছে তাদের শাস্তি বা বিচারের কোনো উদ্যোগ এখনো নেয়া হয়নি, যা লিমনকে কষ্ট দেয়৷
লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম জানান, তাঁ ছেলে আর কখনো স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবেনা৷ তবুও যদি সরকার লিমনের পড়াশুনায় সহায়তা করে তাহলে সে হয়তো পঙ্গুত্ব নিয়েও জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারবে৷ সরকার যেন এই সহায়তাটুকু করে, লিমনের মায়ের এই একটিই আবেদন৷