লকডাউনের জেরে অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব
২৬ মার্চ ২০২০ভারতের অর্থনীতির স্বাস্থ্য ভালো নয়৷ জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না, এমন আশঙ্কা আগেই করেছেন অর্থনীতিবিদরা৷ বাজারে চাহিদা কমেছে, যেহেতু মানুষের হাতে টাকা নেই৷ এতে মার খাচ্ছে উৎপাদন শিল্প৷ এর জেরে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলির৷ তার ফলে রয়েছে ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা৷ সুতরাং আরো বাড়বে বেকারত্ব৷ রোজগার বন্ধ হওয়ায় মানুষের হাতে টাকা আরো কমে যাবে৷ অর্থনীতি এই বদ্ধ দশা থেকে বেরোবে কীভাবে?
ভারতের অর্থনীতিতে যখন এই উদ্বেগজনক ছবি, তখন খাঁড়ার ঘায়ের মতো এসেছে করোনা সংক্রমণ৷ এর প্রাদুর্ভাব রুখতে গত রবিবার জনতা কার্ফু পালিত হয়েছে৷ তারপর সারা দেশে ২১ দিনের জন্য শুরু হয়েছে লকডাউন৷ ফলে স্তব্ধ হয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ-সহ গোটা দেশ৷
এই সার্বিক বন্ধের কী প্রভাব পড়বে ভারতের অর্থনীতিতে? এই প্রশ্নের উত্তরে অর্থনীতিবিদ দীপঙ্কর দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘এমনিতেই আর্থিক অবস্থা ভালো নয়৷ বন্ধের ফলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে, যদিও এছাড়া করোনা রোখার উপায় নেই৷ তবে এই স্তব্ধতার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে দেশে৷ কত দিন, কত মাস তার প্রভাব থাকবে, সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়৷’’ মোটের উপর অর্থনীতির হাল খারাপ হলেও বিভিন্ন রাজ্যের নিজস্ব চরিত্র অনুযায়ী লকডাউনের প্রভাব হবে আলাদা আলাদা৷ দীপঙ্কর দাশগুপ্তর মতে, ‘‘আমাদের রাজ্যে মহারাষ্ট্রের মতো শিল্পের বিকাশ হয়নি৷ তাই মহারাষ্ট্র যতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, আমাদের ক্ষতি হবে কম৷ কিন্তু আমাদের যেটুকু আছে, সেটাও শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে৷ অর্থাৎ, পশ্চিমবঙ্গ ততটা উন্নত নয় বলে ক্ষতি কম হবে, এই ভাবনার জায়গা নেই৷’’
দেশের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা ভালো সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে না৷ সম্প্রতি বেসরকারি ইয়েস ব্যাঙ্ক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে৷ লকডাউনের সময় সব ব্যাঙ্কেই লেনদেন সীমিত৷ যদিও লম্বা লাইন দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন শাখায়৷ তবে লকডাউনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ভারতের অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক ও কর্মচারীরা৷ তাঁরা নির্দিষ্ট কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানের বেতনভুক কর্মী নন, কার্যত কাজের অনুপাতে পারিশ্রমিক পান৷ তাই তাঁরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বেন, এমনটাই মত অর্থনীতিবিদদের৷
শিল্প প্রতিষ্ঠানের চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক থেকে নির্মাণ কর্মী, ঠিকাদার সংস্থার অধীনে কর্মরত শ্রমিক থেকে রেস্তোরাঁর কর্মচারী, এঁদের প্রায় সকলেই অসংগঠিত৷ অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের মজুরি না কাটার জন্য প্রধানমন্ত্রী নিয়োগকারীদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন৷ এই আবেদন শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করেন অর্থনীতির বিশ্লেষক রতন খাসনবিশ৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের উৎপাদননির্ভর শিল্পের ৫০ শতাংশ ও পরিষেবা ক্ষেত্রের ৮০ শতাংশ অসংগঠিত শ্রমিকদের দ্বারা পরিচালিত৷ এঁরা মজুরি না পেলে সংসার চালাতে পারবেন না৷ পশ্চিমবঙ্গেও সংগঠিতের তুলনায় অসংগঠিত কর্মীর সংখ্যা অনেক বেশি৷ তাঁদের চলবে কীভাবে?
এই শ্রমিক-কর্মচারীদের রোজগার কমে গেলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে৷ বাজারে চাহিদা আরো কমে যাবে৷ ‘‘এর ফলে সাড়ে পাঁচের জিডিপি অধরাই থেকে যাবে৷ অসংগঠিত অংশের মানুষের সমস্যা সমাধানে ভর্তুকি দেওয়ার পক্ষপাতী অর্থনীতিবিদদের একাংশ৷ রতন খাসনবিশের মতে, ‘‘কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের ঘোষণা করা উচিত, অসংগঠিত ক্ষেত্রে শ্রমিকদের মজুরি বাবদ কোনো ক্ষতি হলে, সেই টাকা দেওয়া হবে৷ তাহলে এই মানুষগুলি ভরসা পাবে৷ তাতে উপকার হবে অর্থনীতিরও৷ এদের হাতে টাকা থাকলে বাজারে চাহিদা থাকবে৷ নইলে অর্থনীতি আরো সমস্যায় পড়বে৷’’