লাদাখ সংকট এবার চীন সমুদ্রে
৩১ আগস্ট ২০২০দক্ষিণ চীন সমুদ্রে ভারতীয় নৌ বাহিনীর যুদ্ধ জাহাজের উপস্থিতি নিয়ে এ বার সুর চড়ালো চীন। সম্প্রতি ভারত-চীন কূটনৈতিক বৈঠকে এ বিষয়ে নিজেদের আপত্তির কথা জানিয়েছে চীন। তাদের বক্তব্য, দক্ষিণ চীন সাগরের অধিকাংশ অংশই চীনের। ফলে সেখানে ভারতের যুদ্ধ জাহাজের উপস্থিতি চীন পছন্দ করছে না। তবে ভারতীয় সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত দক্ষিণ চীন সাগর থেকে যুদ্ধ জাহাজ সরানোর কোনও পরিকল্পনা ভারতের নেই।
গত মে মাস থেকে লাদাখ সীমান্তে ভারত-চীন সংঘাত শুরু হয়। জুনে তা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছয়। গালওয়ানে সংঘর্ষে বহু ভারতীয় সেনার প্রাণ যায়। তার পরেই সম্প্রতি দক্ষিণ সাগরে ভারতীয় নৌ সেনার প্রথম সারির যুদ্ধ জাহাজ মোতায়েন করে ভারত। বস্তুত, ২০০৯ সাল থেকেই দক্ষিণ চীন সাগর অঞ্চলে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করেছে ভারত। পেট্রলিং বাড়িয়েছে। তবে গালওয়ান সংঘর্ষের পর খানিকটা আক্রমণাত্মক ভাবেই চীন সাগরে যুদ্ধ জাহাজ নিয়ে পৌঁছে যায় ভারতীয় নৌ সেনা। যদিও এ বিষয়ে নৌ সেনা বা সরকারের তরফে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য অনুযায়ী, খানিকটা চুপিসারেই ওই অঞ্চলে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করে ভারত।
গালওয়ান সংঘাতের পরে ভারত এবং চীনের মধ্যে একাধিক বৈঠক হয়েছে এবং হচ্ছে। সরকারি স্তরে, কূটনৈতিক স্তরে এবং সেনা স্তরে বৈঠক হয়েছে। দুই দেশই লাদাখ সীমান্ত থেকে সৈন্য সরানোর বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছেছে। কিন্তু সেনা কতদূর পিছোবে, তা নিয়ে ঐক্যমত্য হয়নি। ফলে প্যাংগং, গোগরা হটস্প্রিং অঞ্চল থেকে ভারত এবং চীন কোনও পক্ষই সেনা সরায়নি। এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনও পক্ষই কোনও সমাধান সূত্রে পৌঁছতে পারেনি। তবে দফায় দফায় বৈঠক জারি আছে। সূত্র জানাচ্ছে, সাম্প্রতিকতম কূটনৈতিক বৈঠকে নতুন দাবি করে চীন। তাদের বক্তব্য, চীন সমুদ্রে ভারত যে ভাবে যুদ্ধ জাহাজ পাঠিয়ে রেখেছে, তা তাদের পক্ষে মানা সম্ভব নয়। ভারতকে দ্রুত ওই জাহাজ সরাতে হবে। ভারত অবশ্য যুদ্ধ জাহাজ সরানোর বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।
বস্তুত, শুধু ভারত নয়, দক্ষিণ চীন সাগরে গত কয়েক বছরে অ্যামেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং জাপান তাদের শক্তি বৃদ্ধি করেছে। সূত্র জানাচ্ছে, ভারতীয় যুদ্ধ জাহাজ লাগাতার মার্কিন যুদ্ধ জাহাজের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে। মহড়াও হচ্ছে। শুধু দক্ষিণ চীন সাগরই নয়, মালাক্কা প্রণালীতেও ভারতীয় নৌ সেনা পর্যাপ্ত যুদ্ধ জাহাজ মজুত রেখেছে। মালাক্কা প্রণালী ভারত মহাসাগর এবং আন্দামান সাগরের যোগসূত্র। বস্তুত, এই অঞ্চলে চীনের নৌ সেনা কোনও রকম কার্যকলাপ চালাচ্ছে কি না, তার দিকে নজর রাখা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের অনেকেরই বক্তব্য, লাদাখ সংঘাত দ্রুত কাটার কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। দুই পক্ষই অনড় মনোভাব দেখাচ্ছে। গত ২৯ অগাস্ট রাতে প্যাংগং অঞ্চলে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। ফলে এই পরিস্থিতিতে স্থল সীমান্তে তো বটেই, সমুদ্রেও দুই পক্ষ সবরকম প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে। প্রস্তুতি যত বাড়ছে, বিতর্কও তত তীব্র হচ্ছে।
এসজি/জিএইচ (এএনআই)