1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শহরতলির ট্রেনে দূরত্ব বিধি মানা কি সম্ভব?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১২ নভেম্বর ২০২০

একগুচ্ছ প্রশ্ন ও একরাশ উদ্বেগ নিয়ে শুরু হয়েছে শহরতলির রেল পরিষেবা৷ মাস্ক, স্যানিটাইজার ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলেও স্টেশন ও ট্রেনের কামরায় সামাজিক দূরত্বের বিধি শিকেয় উঠেছে৷ কীভাবে সম্ভব নিরাপদ সফর, জিজ্ঞাসা সব মহলেই৷

https://p.dw.com/p/3lBZG
ছবি: Payel Samanta/DW

প্রায় আট মাস পর শুরু হয়েছে কলকাতা ও হাওড়া থেকে শহরতলির ট্রেন পরিষেবা৷ এই রেলপথকে শহরের লাইফলাইন বলা চলে৷ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলি থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতিদিন পেশার প্রয়োজনে শহরে আসেন লোকালে চেপে৷ করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে এই পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল৷ তা সত্ত্বেও বিভিন্ন কারণে পশ্চিমবঙ্গের এখন দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা চার হাজারের আশেপাশে৷ রোজই মৃত্যু হচ্ছে৷ তার মধ্যেই ট্রেন চালানোর দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছিল৷ সেই দাবি মেনে রেল চলাচল শুরু হলেও আগের ঝুঁকি রয়েই গিয়েছে৷

লকডাউনের সময় বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন৷ অনেকেই দূরবর্তী জেলা থেকে কলকাতায় আসেন বলে ট্রেন বন্ধ থাকায় কাজ চলে গিয়েছে৷ কেউ কেউ আবার অনেক গুণ বেশি টাকা খরচ করে বিকল্প পরিবহণে কলকাতায় পৌঁছেছেন৷ তাঁদের মাসিক রোজগারের অর্ধেকটাই চলে গিয়েছে যাতায়াতের খরচ সামলাতে৷ এই পরিস্থিতিতে ট্রেন চালু হওয়ায় সংক্রমণের ভয় উপেক্ষা করেই যাত্রীরা গাদাগাদি করে সফর করছেন৷ এতে চিকিৎসক মহল সিঁদুরে মেঘ দেখলেও বিকল্প কোনো পথ দেখছেন না জীবন সংগ্রামে যুঝতে থাকা মানুষ৷

করোনার বিপদকে তাঁরা পরোয়া করছেন না: সুহৃতা সাহা

দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং থেকে শহরে আসেন নিরাপদ সাঁতরা, রমা শাসমলরা৷ বুধবার থেকে তিনি আগেকার মতো লোকাল ট্রেনে চাপা শুরু করেছেন৷ নিরাপদ, রমা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘অনেক বেশি টাকা খরচ করে কলকাতায় আসতে হতো৷ তারপর বাস চালু হলেও সেখানে বেশ ভিড় হয়৷ এখন ট্রেনে ভিড় হলেও কিছু করার নেই৷ তাতে কম খরচে সফর করতে পারছি৷ বাড়িতে বসে না খেয়ে মরতে পারি না!’

এক দিকে রোজগারের তাগিদ, অন্য দিকে মারণ ভাইরাসের খাঁড়া— এই দুইয়ের মাঝে রয়েছেন তৃতীয় বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ৷ এটাকে সামাজিক সংকট হিসেবে দেখছেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের প্রধান সুহৃতা সাহা৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমাদের দেশের খেটে-খাওয়া মানুষ প্রতিদিন যে পরিবেশে কাজ করেন, সেটা কতটা স্বাস্থ্যকর তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে৷ রোজ প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করতে করতে মানসিক গঠনটা এমন হয়ে গিয়েছে যে, করোনার বিপদকে তাঁরা পরোয়া করছেন না৷ তাঁদের কাছে এখন রোজগার বাঁচিয়ে রাখাটাই বড় চ্যালেঞ্জ৷ সেজন্য ট্রেনের ভিড়ে ঝুঁকি জেনেও সফর করছেন৷’

Indien Coronavirus Zug
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে প্ল্যাটফর্মে চিহ্ন দেয়া হয়েছেছবি: Payel Samanta/DW

আর্থিক সংকট যেখানে এতটা গভীর, সেখানে প্রশাসন ও রেল কি পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে যাতে সংক্রমণের ঝুঁকি কমানো যায়? হাওড়া ও শিয়ালদহ ডিভিশনে যে সংখ্যায় ট্রেন কোভিডের আগে চলত, বুধ ও বৃহস্পতিবার তার ৮৫ শতাংশ চালানো হয়েছে৷ তাতে দেখা যাচ্ছে, সকালে অফিসের সময় কলকাতামুখী ও বিকেল থেকে সন্ধ্যায় ছুটির সময় জেলামুখী ট্রেনে আগের মতোই ঠাসাঠাসি ভিড়৷ টিকিট কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইন৷ প্লাটফর্মে যথেষ্ট জমায়েত৷ রেলের পক্ষ থেকে স্টেশন চত্বরে গোল দাগ কাটা হয়েছে৷ ট্রেনের কামরায় স্টিকার দিয়ে বলা হয়েছে, কোন আসন ফাঁকা রাখতে হবে৷ কিন্তু তাতেও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা যাচ্ছে না৷ তবে স্বস্তির এটাই, অধিকাংশ যাত্রীর মুখে মাস্ক দেখা যাচ্ছে৷ স্টেশনে ঢোকার মুখে হচ্ছে তাপমাত্রার পরীক্ষা৷ কিন্তু প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে, দূরত্ব বিধি পালন করা সম্ভব কীভাবে?

ট্রেনের সংখ্যা বাড়াতে হবে: পার্থপ্রতিম বিশ্বাস

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, পরিবহণ বিশেষজ্ঞ পার্থপ্রতিম বিশ্বাস ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘ব্যস্ত সময়ে একটি ট্রেনে তিন হাজার যাত্রী সফর করেন৷ কোভিড বিধিতে ৬০০ জনের সফরের কথা বলা হচ্ছে৷ কিন্তু যাত্রীর সংখ্যা আদতে অনেক বেশি৷ তাই চাহিদা ও জোগানে ভারসাম্য রাখতে হবে৷ ট্রেনের সংখ্যা বাড়াতে হবে৷’ এখনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছেন৷ কর্মীদের একাংশ বাড়ি থেকে কাজ করছেন৷ দীপাবলির পর ভিড় আরও বাড়বে৷ সেক্ষেত্রে তাঁর পরামর্শ, ‘প্রতি স্টেশনে বিভিন্ন সময়ে কত সংখ্যক যাত্রী ওঠানামা করেন, তার আগাম হিসেব করতে হবে রেল কর্তৃপক্ষকে৷ সেই অনুযায়ী বাড়তি ট্রেন চালাতে হবে৷ গ্যালপিং লোকাল দরকার৷ নইলে মধ্যবর্তী স্টেশনের যাত্রীরা ট্রেনে ওঠার সুযোগই পাবেন না৷’

২০১৮ সালের ছবিঘরটি দেখুন...