সংক্রমণের ভয় সত্ত্বেও মুখর মিছিলনগরী
১৮ জুলাই ২০২০পশ্চিমবঙ্গসহ গোটা দেশে করোনার দাপট বাড়ছে৷ আগামী দুই মাসে আরো বাড়বে কোভিড সংক্রমণ৷ অতিমারি রুখতে সবচেয়ে কার্যকর উপায়ের মধ্যে একটি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা৷ লকডাউন চলাকালীন কঠোর বিধিনিষেধ থাকায় এই দূরত্ব অনেকটাই বজায় থেকেছে৷ যদিও আনলক শুরু হতেই বদলে গিয়েছে পরিস্থিতি৷ বিভিন্ন কাজকর্ম যেমন শুরু হয়েছে, তেমনি আরম্ভ হয়েছে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে পথে নেমে আন্দোলন কর্মসূচি৷ আবার সরগরম হয়ে উঠছে মিছিলনগরী কলকাতা৷ শাসক-বিরোধী সব রাজনৈতিক দলই বিভিন্ন কর্মসূচি নিচ্ছে৷ দরিদ্র মানুষের মধ্যে খাদ্য বণ্টন করা থেকে শুরু করে থানা ঘেরাও, সবই চলছে৷ নিয়মিত হচ্ছে মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন৷
সম্প্রতি একাধিক জনপ্রতিনিধি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷ তাঁরা সকলেই দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছিলেন আক্রান্ত হওয়ার আগে পর্যন্ত৷ তৃণমূল বিধায়ক তমোনাশ ঘোষের মৃত্যু হয়েছে মারণ ভাইরাসে৷ সুস্থ হয়ে উঠেছেন আরেক মন্ত্রী সুজিত বসু৷ বিধানসভায় তৃণমূলের মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষও আক্রান্ত হয়েছিলেন করোনায়৷ এছাড়া শাসক দলের একাধিক বিধায়কের অসুস্থ হওয়ার খবর মিলেছে৷ মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের বিধায়ক আখতারুজ্জামান করোনা পজিটিভ হয়েছেন৷ কয়েকদিন আগে দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক তোরাফ হোসেন মণ্ডল আক্রান্ত হন৷ কোনো উপসর্গ ছিল না৷ তিনি দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন৷ এই নেতারা পজিটিভ হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট এলাকার দলীয় কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে৷
বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় চলতি পরিস্থিতির মধ্যেই একাধিক কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন৷ আন্দোলনের মধ্যে থাকার সময়ই তিনি আক্রান্ত হন করোনায়৷ বিজেপি বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়ের মৃত্যুর পর দলীয় নেতা-কর্মীরা রাজ্যের থানায় থানায় ডেপুটেশন দিচ্ছেন, সেখানে জমায়েত হচ্ছে৷ বামেরাও পথে নেমেছে৷ সিপিএম ও তার শাখা সংগঠন এসএফআই, ডিওয়াইএফআই এবং সিআইটিইউ মিছিল ও সমাবেশ করেছে৷ সব ক্ষেত্রেই প্রথামাফিক সতর্কবাণী দেওয়া হলেও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা সম্ভব হচ্ছে না৷ ফলে সংক্রমণ আরো ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকছে৷ এই পরিস্থিতিতে কেন রাজনৈতিক কর্মসূচি স্থগিত রাখছে না রাজনৈতিক দলগুলি?
রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও শ্রমিক সংগঠন সিআইটিইউ-র রাজ্য সম্পাদক অনাদি সাহুর বক্তব্য, ‘‘সাধারণ মানুষের রোজগার নেই৷ তাদের খাবার পয়সা নেই৷ পরিযায়ী শ্রমিকরা রাজ্যে ফিরে কাজ পাচ্ছেন না৷ কৃষকরা বিপন্ন৷ হকার থেকে খেতমজুর, সকলেরই অস্তিত্ব সংকটে৷ এই পরিস্থিতিতে মানুষের রাস্তায় নামা ছাড়া পথ কোথায়?’’
সংক্রমণের আশঙ্কা মেনে নিয়েও একেই অনিবার্য বলে মনে করেন সিপিএম নেতা৷ তাঁর মতে, ‘‘সামাজিক দূরত্বের বিধি মেনে চলা অবশ্যকর্তব্য৷ কিন্তু একটা মানুষ যদি দেখে তার পরিবার খিদের জ্বালায় মরে যাচ্ছে, তাহলে সে কী করবে? কেন্দ্রীয় সরকার সব পুঁজিপতিদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে, মানুষ প্রতিবাদ না করলে এমনিই মরে যাবে৷’’
প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়ে একই ধরনের সওয়াল বিজেপি নেত্রী তনুজা চক্রবর্তীর৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার আগে সতর্ক হলে আজ এই পরিস্থিতি হতো না৷ যেভাবে বিধায়ককে খুন করা হয়েছে তাতে পথে নামার বিকল্প ছিল না৷ আমরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে যতটা সম্ভব কম কর্মী নিয়ে ডেপুটেশন দিয়েছি৷ স্যানিটাইজার, গ্লাভস ব্যবহার করা হয়েছে৷’’
যদিও এরই মধ্যে জনসংযোগের মাধ্যম হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ ভার্চুয়াল সভা করে হইচই ফেলে দিয়েছিল বিজেপি৷ এখন বামপন্থি সংগঠনও সাধারণ কর্মীদের বার্তা দেওয়ার জন্য ফেসবুক লাইভের ব্যবস্থা করছে৷ দলীয় নেতারা সেখানে কর্মীদের উদ্দেশে বার্তা দিচ্ছেন, আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন৷ নিচুতলায় আন্দোলন কর্মসূচির ক্ষেত্রে এমনও দেখা গিয়েছে, প্রতিবাদীরা প্ল্যাকার্ড হাতে পর্যাপ্ত দূরত্বে দাঁড়িয়ে রয়েছেন৷ কিন্তু কেন্দ্রীয় স্তরে বড় কর্মসূচির ক্ষেত্রে এই বিধি মেনে চলা সম্ভব হচ্ছে না, যা থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা বাড়ছে৷