সংবাদমাধ্যমের বিশ্লেষণে ম্যার্কেলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ
১৫ জুন ২০১৮জার্মানিতে আসতে থাকা শরণার্থীদের নিয়ে জার্মান সরকারের নীতি কী হবে, তা নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে শাসক জোটে৷ অভিবাসনের প্রশ্নে ম্যার্কেলের পাশে দাঁড়িয়েছে তাঁর দল ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্রেটিক সোশ্যাল ইউনিয়ন (সিডিইউ)৷ কিন্তু, ম্যার্কেলের সহযোগী বাভারিয়ার ক্রিস্টিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়ন (সিএসইউ) দল তাদের নেতা এবং জার্মানির বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফারের পাশে দাঁড়িয়েছে৷ এর ফলে ম্যার্কেলের নেতৃত্ব কড়া চ্যালেঞ্জের মুখেপড়েছে৷ দেখা যাক, বিষয়টি নিয়ে জার্মানির কোন সংবাদমাধ্যম কী বলছে৷
ফ্রাঙ্কফুর্টার অলগেমাইন সাইটুং (এফএজেড) : ম্যার্কেলের ইউরোপীয় সমাধান কখনো সম্ভব হবে না
সিএসইউ সমস্যার সমাধান খোঁজার জন্য ম্যার্কেলকে আর এক পক্ষকাল সময় দেবে না৷ এজন্য তাদের দোষ দেওয়া যায় না৷ এফএজেড পত্রিকার কলামনিস্ট বার্থল্ড কোলার লিখেছেন, অভিবাসন নিয়ে ইউরোপে যে বিতর্ক চলছে, তাতে আর সময় দেওয়া অর্থহীন৷
বাভেরিয়ার দলটির আশঙ্কা, ম্যার্কেল সরকারের অভিবাসন নীতির ফলে আগামী অক্টোবরে রাজ্যের নির্বাচনে পার্লামেন্টে তাদের সংখ্যা গরিষ্ঠতা হারাতে হতে পারে৷ কোলারের বক্তব্য. সিএসইউ তাদের ভোটারদের বলে আসছে, তারা শরণার্থীদের নিয়ে অন্যরকম পদক্ষেপ নিতে পারে, যাতে অনুপ্রবেশ রোখা যায়৷
জুড ডয়চে সাইটুং: সিএসইউ-র কঠোর অবস্থান মূল্যহীন
মিউনিখের এই সংবাদপত্রটি লিখেছে, জার্মানিতে অভিবাসনবিরোধী মনোভাব দেখে সিএসইউ ‘কৃত্রিমভাবে' এই বিষয়টা তুলেছে৷ এই ঝুঁকি নেওয়া অর্থহীন৷ হ্যারবার্ট প্রান্টল লিখেছেন, এতে শুধু কেন্দ্রীয় সরকারের পতনই হবে না, সমস্যায় পড়বে সিএসইউ-ও৷
জার্মানি যদি সীমান্ত বন্ধ করার মতো কঠোর পদক্ষেপ নেয়, তাহলে অনেক দেশের সঙ্গে তার বাণিজ্যিক সমঝোতা নষ্ট হবে৷ এর মধ্যে অস্ট্রিয়া, ইতালি ছাড়াও রয়েছে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো৷ এতে জার্মানির অর্থনৈতিক অবস্থায় খারাপ প্রভাব পড়বে৷ প্রান্টলের মতে, সীমান্ত থেকে ঘাড়ধাক্কা দেওয়ার বদলে, প্রয়োজন হলে শরণার্থীদের দেশের মধ্যে চিহ্নিত করে ফেরত পাঠানো উচিত৷
ডি ভেল্ট: যে সিডিইউ সদস্যরা সেহোফারকে সমর্থন করছে, তাদের বিপুল ক্ষতি হবে
হঠাৎ সিএসইউ কেন সীমান্ত বন্ধের দাবি তুললো, সেই কারণটা বোঝা সহজ৷ অতি দক্ষিণপন্থি অলটারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) সিএসইউয়ের জনপ্রিয়তায় ভাগ বসাচ্ছে৷ টরস্টেন ক্রাউয়েল লিখেছেন, সিএসইউ দ্রুত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ চায়৷ কিন্তু, ম্যার্কেল বলছেন, তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নিলে তা ইউরোপে অস্থিরতা দেখা দেবে৷
তাঁর মতে, যারা ম্যার্কেলের ঘনিষ্ঠ বৃত্তের বাইরে রয়েছেন, সিডিইউয়ের সেই সদস্যরা নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের স্বার্থে অভিবাসন নীতি কঠোর করতে পার্টির পাশে দাঁড়াচ্ছেন৷
বিল্ড: সিদ্ধান্ত সাংসদদের হাতে, তারা ম্যার্কেলের সঙ্গে যেতে চান নাকি ফের নির্বাচন চান
বুধবার ম্যার্কেল বলেছেন, অভিবাসন নীতি ইউরোপের কাছে অগ্নিপরীক্ষা৷ জার্মানির সর্বাধিক প্রচারিত ট্যাবলয়েড বিল্ড লিখেছে, ‘‘ বিষয়টা ক্রমশ ম্যার্কেলের ক্ষমতায় থাকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে৷''
যদি ম্যার্কেল ও সেহোফার কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পারেন, তাহলে ম্যার্কেলকে সংসদে আস্থাভোট নিতে হবে৷ নিকোলাউস ব্লমে লিখেছেন, সাংসদদের ঠিক করতে হবে, তাঁরা ম্যার্কেলের সঙ্গে থাকবেন, নাকি নির্বাচনের অ্যাডভেঞ্চারে নামবেন৷
ফ্রাঙ্কফুটার (এফআর): কেউ কি এসপিডির কথা ভাববে না?
যদি সিডিউ ও সিএসইউ শরণার্থী বিবাদের সমাধান খুঁজেও পায়, তাহলে সেটা ম্যার্কেলের আরেক সহযোগী দল এসপিডি-র পক্ষে মেনে নেওয়া কঠিন হবে৷ স্টিভেন গেয়ারের মতে, সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটরা ম্যার্কেলের উদার অভিবাসন নীতিতে লাভবান হয়েছে৷ যদিও সেই দিন আর স্থায়ী হবে না৷
গেয়ার লিখেছেন, এই সংগঠন থেকে ম্যার্কেল বেরিয়ে এলেও দলে তাঁর অবস্থান দুর্বল হবে৷ ফলে ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমস্যা দেখা দেবে৷ সে ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে অন্যরকম এক চ্যান্সেলরকে দেখা যাবে৷
ডেভিড মার্টিন/এসিবি