চাপে পিষ্ট মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম
৩ মে ২০২১গত ১ ফেব্রায়ারি নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখলে নেয় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তারপর থেকে চলছে বিরোধীদের মত দমন। একই সাথে অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে সেনাশাসক।
একে একে ফেসবুক, ফেসবুক মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার ও ইনস্টাগ্রামের ব্যবহার সীমিত করা হয়েছে। ফেসবুকের উপর এমন নিয়ন্ত্রণ অবাধ তথ্যপ্রবাহের বড় অন্তরায়, কেননা দেশটির অর্ধেক লোক তথ্য আদান-প্রদানের জন্য সামাজিক যোগাযোগের এ মাধ্যমটিই ব্যবহার করে। কিন্তু মিয়ানমারে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে চলছে ইন্টারনেটের উপর নিষেধাজ্ঞা। রাত একটা থেকে সকাল ৯টা র্পযন্ত থাকে এ নিয়ন্ত্রণ। আর গত ১৫ মার্চ থেকে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ। যদিও গত কয়েকদিন ধরে রাতের এ নিষেধাজ্ঞা আর দেওয়া হচ্ছে না, তবে দেশটির অধিকাংশ মানুষ সেনা নিয়ন্ত্রিত মাধ্যম থেকেই সংবাদ পেয়ে থাকে।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের আধিপত্য
তথ্য প্রদানের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত এমআরটিভি। চ্যানেলটিতে নিয়মিত বিক্ষোভের ছবি দেখিয়ে বিক্ষোভকারীদের 'দেশের শত্রু' বলা হচ্ছে। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্র দ্য গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার প্রতিনিয়ত সামরিক শাসনের প্রয়োজনীয়তা ও এর পক্ষে সাফাই গেয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। তথ্য পাওয়ার অন্যান্য মাধ্যম, অর্থাৎ বেসকারি সংবাদমাধ্যমগুলোকে করা হয়েছে নিষিদ্ধ। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে আশ্রয় নিয়ে তাদের কেউ কেউ সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জানানোর চেষ্টা করছে।
আত্মগোপনে সাংবাদিকরা
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্য মতে, সেনাশাসকের হাতে এ মুর্হূতে ৪৮জন সাংবাদিক আটক আছেন। তাছাড়া ২৩ জন সাংবাদিককে আটকে পর মুক্তি দেওয়া হয়। জানা যায়, সম্প্রতি দেশটির পেনাল কোডে একটি নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে, সেখানে কোনো ধরনের 'বিবৃতি, গুজব, বা প্রতিবেদন যা মানুষের মধ্যে ভয় ছড়িয়ে দিতে পারে বা মানুষকে সহিংস কাজে উসকানি দিতে পারে কিংবা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সহিংসতা ছড়িয়ে দিতে পারে তা অপরাধযোগ্য বলে বিবেচিত।' আটক সাংবাদিকদের অধিকাংশকেই পেনাল কোডের এ ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।
বিস্তারিত জানতে ডয়চে ভেলে সেখানকার বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের সাথে কথা বলেছে। জানা গেছে, গ্রেপ্তার এড়াতে সাংবাদিকরা নিজেদের ঘরে অবস্থান করছেন না। এমনকি নিজেদের নামও প্রকাশ করছেন না।
''এখন র্পযন্ত ভালোই আছি," জানালেন আত্মগোপনে থাকা সাংবাদিকদের একজন। আরো কয়েকজন সহকর্মীর সাথে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় আশ্রয় খুঁজেন তিনি। "আমরা নিজেদের কাজ নিয়ে কথা বলি। দলবদ্ধভাবে এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সহজ," জানালেন আরেকজন। "কিন্তু অনেক সাংবাদিক বন্ধু সেনা নিয়ন্ত্রিত এলাকা ত্যাগ করেছে এবং গোপনে পরিচালিত মিডিয়ার বা র্নিবাসিত মিডিয়ার সহযোগিতা নিয়েছেন।"
সেলফ-সেন্সরশিপের মুখে আন্ডারগ্রাউন্ড মিডিয়া
গণমাধ্যমগুলোর ওপর যে শুধুমাত্র সেনাশাসকের চাপ, বিষয়টি তা নয়। গোপনে পরিচালিত স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর অধিকাংশই নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রাখতে পারছে না। সংবাদমাধ্যমগুলোর চলমান অবস্থার বিষয়ে একজন সাংবাদিক জানান, স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর সবারই কোনো না কোনো অ্যাজেন্ডা আছে। "আমি এ মুহূর্তে কিছু না লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কারণ, সব ধরনের কথাই ভুলভাবে ব্যাখ্যা হচ্ছে।"
আর এমন মেরুকরণের জন্য শুধুমাত্র সেনা সমর্থকরা বা বিরোধীরাই কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে। কিন্তু দেশটিতে এমন অনেকেই আছেন, যারা সেনা সমর্থক নন কিংবা বিক্ষোভকারীও নন। মিয়ানমারের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা আশা করছেন যে, পরিস্থিতি খুব দ্রুতই স্থিতিশীল হয়ে আসবে, দেশের ব্যাংকগুলো আবার খুলবে আর লোকজন কাজে যেতে পারবে।
রডিয়ন এবিগহাউজেন / আরআর