1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ক্যাসিনো থেকে করোনা, এরপর কী?

১২ জুলাই ২০২০

একটার পর একটা দুর্নীতি অনিয়মের কেলেঙ্কারি ধরা পড়ছে বাংলাদেশে। আর এসব ঘটনার সাথে যারা জড়িত তারা সবাই অপকর্ম করছে রাজনৈতিক পরিচয়ে। দলগুলো তাদের পরিচয় অস্বীকার করলেও দায় কি এড়াতে পারে?

https://p.dw.com/p/3fBlm
Symbolbild Bestechung und Korruption in Bengali
ছবি: Privat

বাংলাদেশে এই করোনাকালেও দুর্নীতি থেমে নাই। সর্বশেষ বেসরকারি  রিজেন্ট হাসপাতালে সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি ভুয়া করোনা টেস্টের ঘটনায় তোলপাড় চলছে। কয়েকজন কর্মচারীকে গ্রেপ্তার এবং হাসপাতালটি বন্ধ করে দিলেও ওই ঘটনার মূল হোতা মো. সাহেদ এখনো পলাতক। সাহেদের সাথে সরকারের মন্ত্রী, এমপি, পদস্থ কর্মকর্তা এবং তারকা সাংবাদিকদের যেসব ছবি এই ঘটনার পর প্রকাশ হচ্ছে তাতে ভিমড়ি খাওয়ার অবস্থা। শুধু তাই নয়, তিনি টেলিভিশন টকশো'র পরিচিত মুখ। আর রিজেন্ট হাসপাতালের কোনো বৈধ লাইসেন্স নাই ২০১৩ সাল থেকে। তারপরও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ওই হাসপাতালের সাথে করোনা চিকিৎসার জন্য চুক্তি করেছিল। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তারা চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছিল। শর্ত ছিলো হাসপাতালটি লাইসেন্স নবায়ন করবে, কিন্তু করেনি। 

‘‘কয়েকদিন পর আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়’’

রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদের সাথে অবশ্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ দুই জনের সঙ্গেই অন্তরঙ্গ ছবি প্রকাশ হয়েছে।

আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির একজন সদস্য মো. সাহেদকে এখন আওয়ামী লীগও অস্বীকার করছে। কিন্তু এই পরিচয়েই তিনি দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। টিভি টকশোতে অংশ নিয়েছেন এই পরিচয়েই।

বুধবার আটক হয়েছেন জেকেজি নামে আরেকটি স্বাস্থসেবা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা চৌধুরী। তিনি সাড়ে ১১ হাজার ভুয়া করোনা টেস্টের হোতা। এই ঘটনায় তার স্বামী এবং প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী আরিফ চৌধুরী অবশ্য আগেই আটক হন। কিন্তু পুলিশ সাবরিনাকে আটক করছিল না এত দিন। তার প্রধান কারণ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সাথে সুসম্পর্ক। সাবরিনা শনিবার সংবাদ মাধ্যমকে এই সুসম্পর্কের কথা এবং ভুয়া টেস্টের কথা মহাপরিচালক যে জানতেন তা প্রকাশ করেন। এর একদিনের মাথায় তিনি আটক হলেন।

বাংলাদেশে এই সময়ে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারি আরেকটি আলোচিত ঘটনা। গত ২০ সেটেম্বর ঠিকাদার জিকে শামিমকে আটকের মধ্য দিয়ে যার প্রকাশ শুরু হয়। এরপর জানা যায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুবলীগ সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাটের নাম। প্রকাশ পায় যুবলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীর নাম।  আর এই জিকে শামিম ও সম্রাটের ছবি প্রকাশ পায় শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতা ও মন্ত্রী, এমপিদের সঙ্গে।  সম্রাট-খালেদরা গ্রেপ্তার হয়। কিন্তু ওমর ফারুক চৌধুরীদের পদ থেকে সরিয়ে দেয় হয়। এর উপরে আর আইনের হাত যায়নি।

ওয়েস্টিন হোটেল কেলেঙ্কারির যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া যুবলীগের প্রভাবেই সব অপকর্ম করেছেন। তাকে গ্রেপ্তারের পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা, মন্ত্রী এমপিদের সাথে তার ঘনিষ্টতা  ও ছবি প্রকাশ পায়। ফেব্রুয়ারি মাসে তাকে আটকের পর  তাকে যুব মহিলা লীগ থেকে বহিস্কার করা হয়। কিন্তু তার আগে তার কোনো অপকর্মের খবরই নাকি তার দলের নেতারা জানতেন না।  তাকে আশ্রয় দেয়া নেতাদের গায়ে কোনো আঁচই লাগেনি। 

এইসব প্রতারক এবং দুর্বৃত্তরা সাপের মত খোলস বদলায় বলে মনে করেন দুর্নীতি দমনের কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান। তাদের অপকর্ম করতে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল প্রয়োজন হয়। কারণ বাংলাদেশে একটি ধারণা আছে ক্ষমতার সাথে যুক্ত থাকলে দুর্নীতি ও প্রতারণা সহজ হয়।

তিনি বলেন,‘‘ রাজনৈকি দলের কিছু নেতা টাকা পায়সার বিনিময়ে তাদের আবার দলে আশ্রয় দেয়। তাই এইসব প্রতারকদের সাথে যাদের ছবি প্রকাশ হয়েছে, যাদের সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে দেখা গেছে। তাদের বিষয়ে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। কারুর সঙ্গে  সংশ্লিষ্টতা থাকলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা উচিত।” তার মতে, এখন তো আর বহিরাগত বলে দায় এড়ানো যাবে না।

দুর্নীতি শেকড় গেড়ে বসা এবং রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক শেখ হাফিজুর রাহমান কার্জন। তার মতে প্রশাসনিক দুর্নীতি কোন সরকার ক্ষমতায় তার ওপর নির্ভর করে না। এটা সব সময়ই হয়। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে যারা ক্ষমতায় থাকে তারা দুর্নীতি করতে প্রশাসনিক সুবিধা পায়। তাই প্রতারক এবং দুর্নীতিবাজরা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের পরিচয় কেনে অথবা সরসরি যুক্ত থাকে। তিনি বলেন, ‘‘ধরা পড়ার পর রাজনৈতিক দল তাদের অস্বীকার করে বা বহিস্কার করে। কিন্তু তাতে কিছুই হয় না। কয়েকদিন পর আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়।’’

এই দুইজন বিশ্লেষকই মনে করেন, দলে পরীক্ষিত লোকদের গুরুত্ব থাকা উচিত। হাইব্রিড বা বহিরাগতরা অর্থের বিনিময়ে পদ পদবী নিলে এরকম ঘটনা ঘটতেই থাকবে। তবে সার্বিক দুর্নীতির যে চিত্র তা দূর করতে হলে রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং দুর্নীতি বিরোধী প্রতিষ্ঠানগুলোকে দক্ষ করতে হবে। স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে।