1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

৫৭ ধারার অপব্যবহার চলছেই

২ নভেম্বর ২০১৭

তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় আনিসুর রহমান নামের আর এক সাংবাদিককে জেলে পাঠানো হয়েছে৷ সরকারের পক্ষ থেকে নানাভাবে আশ্বাস দেয়া হলেও বিতর্কিত এ আইন বাতিল করা হচ্ছে না, এর অপব্যবহারও থামছে না৷

https://p.dw.com/p/2mvLU
প্রতীকী ছবিছবি: DW/M. Mamun

এর আগে সর্বশেষ গত আগস্টে জেলে যেতে হয়েছিল খুলনার সাংবাদিক আব্দুল লতিফকে৷

বুধবার দৈনিক সংবাদ-এর কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার সাংবাদিক আনিছুর রহমানকে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার মামলায় আটক করে পুলিশ৷ পরে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়৷ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর ছবি বিকৃত করে অন্য দুই ব্যক্তির দেয়া ফেসবুক পোস্ট তিনি শেয়ার করেছেন৷ সাংবাদিক আনিসুর রহমান ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন৷ তিনি আদালতে বলেছেন, এ ধরনের কোনো বিকৃত পোস্ট তিনি শেয়ার করেননি৷ তারপরও আনিসুর রহমানকে আটক করা হলেও যারা ছবি বিকৃত করে ফেসবুকে দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি৷

Azmal Haq Helal - MP3-Stereo

এর আগে শুধুমাত্র খবরের লিংক ফেসবুকে শেয়ার করার কারণেও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা হয়েছে৷ ‘সকালের খবর'-এর সিনিয়র সাংবাদিক আজমল হক হেলাল এমন মামলার শিকার৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলায়৷ মঠবাড়িয়ার সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে পার্লামেন্ট ওয়াচ নামে একটি অনলাইনসহ আরো কয়েকটি দৈনিকে খবর প্রকাশ হয়৷ আর আমি সেই খবরের লিংক ফেসবুকে শেয়ার করি৷ সেই কারণে আমার বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা হয় জুলাই মাসে৷ আমি হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নেয়ার পর জেলা আদালত থেকে স্থায়ী জামিন নিয়েছি৷'' 

আজমল হক হেলাল জানিয়েছেন, এখন তাঁকে প্রতি মাসে দু'বার আদালতে হাজিরা দিতে হয়৷ তাঁর দাবি, পুলিশকে তিনি বলেছেন,‘‘আমি অপরাধী হলে চার্জশিট দিন, বিচার শুরু হোক, কিন্তু পুলিশ তা-ও করছে না৷'' জাতীয় দৈনিকের এই সাংবাদিকের মামলার ক্ষেত্রেও তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হলেও যারা খবরটি পরিবেশন করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি৷ 

বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল যমুনা টিভির সিনিয়র রিপোর্টার নাজমুল হোসেনসহ চার জনের বিরুদ্ধে দিনাজপুরে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা হয় ৩ জুলাই৷ জেলা জজ কোর্টের আইনজীবী হযরত আলী বেলাল বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন৷ ‘বিচারপতির লাল সিঁড়ি ও দেলোয়ারের ক্র্যাচ' শিরোনামে একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস দেয়ায় এই মামলা হয়৷ মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, স্ট্যাটাসের মাধ্যমে বিচারক ও বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা হয়েছে৷

একই দিনে আরেকটি মামলা করা হয় দৈনিক সমকালের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান, সিনিয়র রিপোর্টার তৌফিকুল ইসলাম বাবরের বিরুদ্ধে৷ গত ২২ জুন ‘খুনের মামলার আসামিরা হাছান মাহমুদের ক্যাডার' শিরোনামে একটি প্রতিবদেন প্রকাশ করায় চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানায় মামলাটি করা হয়৷ ওই মামলা করেন রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ইকবাল হোসেন চৌধুরী৷

এর আগে মে মাসে বিডিনিউজটোয়েন্টি ফোর ডটকম-এর প্রতিবেদক গোলাম মুজতবা ধ্রুব'র বিরুদ্ধে একই আইনে মামলা করেন মানিকগঞ্জের এক বিচারক৷ ১১ জুন ‘একটি অসুস্থ শিশু, বিচারকের ট্রাক ও একটি মামলা..' শিরোনামের প্রতিবেদনের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মামলাটি করেন সিনিয়র সহকারী জজ মাহবুবুর রহমান৷

এছাড়া ৭ জুন সাংবাদিক ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আফসান চৌধুরীর বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে গুলশান থানায় মামলা করেন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী৷ মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে যে, আফসান চৌধুরী সাবেক সেনা কর্মকর্তা মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ও তাঁর ছেলেকে নিয়ে ফেসবুকে উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছেন৷

তবে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ছিল ২০১৫ সালের একটি মামলা৷ সে বছরের ১৬ আগস্টে এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রতিবেদন এবং ফেসবুক স্ট্যাটাসের কারণে ঢাকায় আটক করা হয় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান সাংবাদিক প্রবীর শিকদারকে৷ পরে সাংবাদিকদের প্রতিবাদের মুখে তাঁকে জামিনে ছাড়া হলেও মামলা প্রত্যাহার হয়নি৷ ফরিদপুরে দায়ের করা তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার মামলার বিচার শুরু হয়েছে ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাবুন্যালে৷ প্রবীর শিকদার সম্প্রতি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার বিচার শুরু হয়ে গেছে৷ আমাকে এখন নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে৷'' তিনি দুঃখ করে বলেন, ‘‘এ দেশের সাধারণ মানুষ আইনি হয়রানির শিকার হয়৷ আমিও তো একজন সাধারণ মানুষ৷ এই হয়রানি তো আমাকে মেনে নিতেই হবে৷''

২০১৫ সালে এই আইনটি সংশোধন করে ৫৭ ধারা যুক্ত হওয়ার পর থেকে  এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ৩০ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ওই ধারায় মামলার খবর জানা যায়৷ 

Omar Sadat - MP3-Stereo

সাইবার সিকিউরিটি ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরের দেওয়া তথ্য মতে, সারাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে দায়ের হওয়া ৭শ' ৪০টি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে ৬০ শতাংশ মামলা রয়েছে ৫৭ ধারার৷ ২০১৩ সালে প্রথম ৩টি মামলা হওয়ার পর প্রতি বছর মামলার সংখ্যা বেড়েছে৷ ২০১৪ সালে সারাদেশে ৩৩টি মামলা হলেও ২০১৫ সালে এসে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫২৷ ২০১৬ সালে মামলার সংখ্যা ২শ' ৩৩টি, আর এ বছর জুলাই পর্যন্ত মামলা হয়েছে ৩১৯টি৷ আইন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্প্রতি আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা দায়েরের সংখ্যা বেড়েছে৷

আইনজীবী ব্যারিস্টার ওমর শাদাত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারাটি এমন যে, এটা নানাভাবে অপব্যবহারের সুযোগ আছে৷ আর শক্তিমানরা এটা তাদের স্বার্থে বিশেষ করে ব্যবহার করছে৷ সরকার এই আইন বাতিলের কথা বলেছে৷ কিন্তু তারপরও এর অপব্যবহার হচ্ছে৷ সরকারের উচিত হবে নতুন আইন না হওয়া পর্যন্ত এই আইনটির ব্যবহার বা প্রয়োগ বন্ধ রাখা৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বড় কালো আইন৷ এই আইন যত ব্যবহার করা হবে সরকারের ভাবমূর্তি ততই ক্ষুন্ন হবে৷ নতুন আইনে যেন এই কালো আইনের কোনো ছায়া না থাকে৷'' 

এ বিষয়ে আপনার কোন মতামত থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য