সরকার সাহসী: পাত্রভেদে কম আর বেশি
১৪ অক্টোবর ২০১৯মনে হয়েছিল প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে সরকার হয়ত সাহস দেখানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন৷ কিন্তু না, আমি ভুল ছিলাম৷
রোববারই সরকার আবরার হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিবৃতি দেয়ায় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধিকে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে পাঠিয়েছিল৷ তারও আগে একই হত্যাকাণ্ড নিয়ে ফেসবুকে মন্তব্য করায় ব্রিটিশ হাইকমিশনারকেও ডেকে পাঠানো হয়৷
দুটি কাজেই বেশ সাহসের পরিচয় দিয়েছে সরকার৷
কিন্তু এও মনে হচ্ছে, ভারতের বিরুদ্ধে কেন এমন সাহস দেখাতে পারলো না বাংলাদেশ৷ ব়্যাব সদস্যরা না হয় ভুল করে ভারতের সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন৷ ছবিতে দেখলাম তাঁদের পরনে ইংরেজিতে ব়্যাব লেখা পোশাকও ছিল৷ কিন্তু তারপরও ভারতীয় নাগরিকেরা তাঁদের মারধর করলেন৷ ছবি দেখেই মনে হয়েছে, বেশ অনেকখানি মারধরই তাঁদের করা হয়েছে৷ কিন্তু এই ঘটনার কোনো প্রতিবাদ করলো না বাংলাদেশ৷ ঘটনাটি অন্তত ঢাকায় ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডাকার মতো ঘটনা বলেই আমার কাছে মনে হয়েছে৷
এছাড়া ভারত সফরে গিয়ে তিস্তার পানির ঠিকানা না করে উলটো ফেনী নদীর পানি দিয়ে আসা এবং সে প্রসঙ্গে পরে দুর্বলের মতো বলা যে, ‘কেউ পান করার জন্য পানি চাইলে তা না দিলে কেমন দেখায়' - না, ঠিক মানাচ্ছে না যেন!
যে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে এমন আচরণ করছে, সেই বাংলাদেশকেই জাতিসংঘ আর ব্রিটেনের সঙ্গে অন্যরকম আচরণ করতে দেখলাম৷ নগন্য কারণে তাদের প্রতিনিধিদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে পাঠানো হলো৷ ফলে অনেকদিন ধরে বাংলাদেশের উন্নয়নের সঙ্গী জাতিসংঘ ও ব্রিটেনের সঙ্গে সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে৷
কিন্তু কেন এমন হলো? উত্তর খুঁজতে গিয়ে মনে হলো, ঠিকই আছে৷ কারণ বাংলাদেশের প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের পরও জাতিসংঘ আর ব্রিটেন সাহস করে বাংলাদেশকে কোনো কড়া কথা শোনায়নি৷ যেনতেনভাবে বাংলাদেশে যে একটি নির্বাচন হয়ে গেছে, তাতেই যেন তারা খুশি৷
জাতিসংঘের বিবৃতিতে নির্বাচন পরবর্তী সংঘাত যেন ছড়িয়ে না পড়ে সেই অনুরোধ ছিল৷ আর ব্রিটেন তাদের বিবৃতির শুরুতে নির্বাচনে সব দল অংশ নেয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে৷ পরে অবশ্য নির্বাচনে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ ওঠায়, তার নিন্দা করেছে৷ খেয়াল করে দেখলাম নিন্দার আগে ‘তীব্র' শব্দটিও তারা উল্লেখ করেনি৷
তো, যাদের অবস্থান এমন নরম, তাদের সঙ্গে একটুআধটু সাহস দেখানোই যায়, কী বলেন!
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়া ছিল সন্তুষ্টিতে ভরপুর৷ এক বিবৃতিতে দেশটি বাংলাদেশে সফলভাবে সংসদ নির্বাচন শেষ হওয়ার বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে৷ এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের প্রতি আস্থা রাখায় বাংলাদেশের মানুষকে উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়েছে৷
কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ শুধু উষ্ণ অভিনন্দন নয়, ভারতের কাছ থেকে তিস্তার পানি চায়, ভারতে আরও বেশি পণ্য রপ্তানি করতে চায়, সীমান্তে বিএসএফ ও সাধারণ নাগরিকদের কাছ থেকে আরও বেশি সম্মান চায়৷
আলোচনার মাধ্যমে যদি না পাওয়া যায় তাহলে সাহস করে সেগুলো আদায় করতে হবে৷ যেমনটা শেখ হাসিনার সরকারই ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর করে দেখিয়েছিলেন৷ ভারতের সেই সময়কার রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে নিয়ে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, তিস্তার পানি না পেলে ট্রানজিট দেয়া হবে না৷ বাংলাদেশের এমন সাহস ভারতকে প্রায় সেই চুক্তি করে ফেলার মতো পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল৷ কিন্তু পরবর্তীতে বাংলাদেশ আর সেই সাহস ধরে রাখতে না পারায় তিস্তা চুক্তিটি সম্পূর্ণ করা যায়নি৷
এখন আবার সেই সাহস দেখানোর সময় এসেছে৷ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কি তা দেখাবেন?