1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘‘সরকারের ‘দুর্বলতাকে' কাজে লাগিয়ে বেপরোয়া পুলিশ''

২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫

জনতার বিক্ষোভ মিছিলে গুলি৷ চারজন নিহত৷ ১১ মাসের শিশু কারাগারে৷ দু'পা নেই এমন আসামিকে হাতকড়া পরানো৷ পুলিশের এমন ভূমিকা কেন? সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে, যেমন টুইটার, ফেসবুক আর ব্লগে এ প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছেন অনেকে৷

https://p.dw.com/p/1Gdd7
Bangladesch Polizisten beim Generalstreik am 21.01.2015 in Dhaka
ছবি: AFP/Getty Images/M. Uz Zaman

গত ১৮ই সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলের কালিহাতিতে পুলিশের গুলিতে চারজন মারা যান৷ ছেলের সামনে মাকে নির্যাতন ও ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনার প্রতিবাদে জনতা বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ বিক্ষোভ মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালায় বলে স্থানীয়দের দাবি

বিষয়টি নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এ ব্লগ লিখেছেন গৌতম হালদার

এ ঘটনাকে একাত্তরে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এবং রাজাকার-আলবদরদের পৈশাচিকতার সঙ্গে তুলনা করে তিনি লিখেছেন, ‘‘আমি মুক্তিযুদ্ধকালীন অসংখ্য অনুরূপ ঘটনাকে কোনো অংশে খাটো করে দেখি না, তবে কালিহাতির এই ঘটনা মুক্তিযুদ্ধকালীন ঘটনার চেয়ে কোনো অংশে খাটো নয়৷....একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে কী করে এই ‘বর্বর' কাণ্ড একজন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে সংঘঠিত হতে পারে, সেটা আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে কুলোয় না৷''

গৌতম সরকার মনে করেন, ‘‘স্বাধীন বাংলাদেশে পাঞ্জাবি পশুদের রয়ে যাওয়া উত্তরসূরিরা তাদের পূর্বপুরুষদের মতোই চারিত্রিক দোষাবলী এখনও বহন করে৷ ওরা পাকিস্তানিদের ধর্ষণকামী বির্যৌত্থিত উত্তরপুরুষ৷ গত ৪৫ বছর ধরে এ সুজলা-সুফলা বাংলার জল-হাওয়া ওদের পিতৃপুরুষদের কাছ থেকে প্রাপ্ত চরিত্রের কোনো পরিবর্তন ঘটাতে পারেনি৷ পারেনি মা আর মায়ের সম্ভ্রম রক্ষায় জাতি ধর্ম নির্বিশেষে এ দেশের সন্তানেরা কতবড় ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত, তার ধারণা ওদের অবর্জনাপুর্ন মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দিতে৷''

সামহয়্যারইন ব্লগে ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন একই ঘটনা সম্পর্কে লিখেছেন, ‘‘যে কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করা কোনো সুস্থ মানুষ বা কোনো সুস্থ সমাজের দায়িত্ব৷ কিন্তু কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদের করলে প্রতিবাদকারীদের গুলি করে হত্যা করা কোনো সুস্থ জাতি বা কোনো সুস্থ বাহিনীর পক্ষে আদৌ সম্ভব কিনা, সেটাই একটা প্রশ্ন৷ টাঙ্গাইলের কালিহাতি বর্তমান সময়ের এক রক্তাক্ত ও শোকার্ত জনপদের নাম৷''

ব্লগপোস্টের শেষ দিকে হ্যাভেনের বিশ্লেষম, ‘‘সরকার ভাবছে, তাদের ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য পুলিশই একমাত্র নিয়ামক৷ তাই সরকার যেমন পুলিশনির্ভর হয়ে পড়ছে আর সরকারের এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পুলিশ ও চরম বেপরোয়া হয়ে পড়েছে৷''

এদিকে টাঙ্গাইলের ঘটনায পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন, তদন্ত ও বিচারের দাবি সব মহল থেকেই উঠেছে

তবে অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেছুর রহমান সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘ঘটনার পর (ধর্ষণের) মামলা হয়েছে, পুলিশ ওই ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তারও করেছে৷ কিন্তু একদিন পর মহাসড়ক বন্ধ করা, আমি মনে করি এখানে তৃতীয় কোনো বিষয় জড়িত আছে৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘একটি ঘটনা ঘটেছে, মামলা হয়েছে, পুলিশ অপরাধীদের গ্রেপ্তার করেছে৷ সব কিছু ঠিকমতো যখন এগোচ্ছে, তখন মহাসড়ক বন্ধ করে দিয়ে এই ধরনের ঘটনা ঘটবে কেন, সেটা বুঝতে হবে৷''

পরে অবশ্য ঘটনা তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে৷

কালিহাতি থানার ওসিসহ বেশ কয়েকজনকে প্রত্যাহার করা হযেছে৷

ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত চেয়ে আবেদন করা হয়েছে আদালতে৷

অন্যদিকে পুলিশ ঘটনার জন্য দায়ী করে অজ্ঞাতনামা সাতশ' জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে৷ স্বাভাবিক কারণেই সেই মামলা প্রত্যাহারের দাবিও উঠছে৷

সব মিলিয়ে কালিহাতির ঘটনায় পুলিশের প্রতিটি পদক্ষেপই হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ, বিতর্কও বেড়েছে৷

সাম্প্রতিক কালে অবশ্য আরো কিছু ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা এবং উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ কয়েক দিন আগে রাজধানী ঢাকার বনশ্রী থেকে ১০ শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশ৷ তখন চারজন তরুণকেও গ্রেপ্তার করা হয়৷ তরুণরা দাবি করছেন, সেবার উদ্দেশ্য নিয়েই তাঁরা ‘অদম্য বাংলাদেশ' নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে ওই শিশুদের লালন-পালন ও পড়াশুনা করাচ্ছিল৷ শিশুদের পাচার করা বা ওদের কোনো ক্ষতি করার উদ্দেশ্য তাদের ছিল না৷ কিন্তু পুলিশ তরুণদের শুধু গ্রেপ্তারই করেনি, অতি দ্রুত রিমান্ডে নিয়েছে৷ এখনো সেই চার তরুণ কারাবন্দি

পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের সহকারি কশিমনার মিরাশ উদ্দিন বলেছেন, ‘‘অদম্য বাংলাদেশ সংগঠনটির যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিবন্ধন নেই, নেই এনজিও ব্যুরোর কোনো ছাড়পত্র বা সমাজসেবা অধিদপ্তরের কোনো সনদ৷ ভিযুক্তরা শিক্ষিত, লেখাপড়া জানা নাগরিক৷ অথচ আইন জানেন না৷''

শিক্ষিত যুবকদের আইন জানার কথা৷ কিন্তু ১১ মাসের শিশুর পক্ষে তা-ও সম্ভব নয়৷ অথচ বগুড়ায় এক নারীর সঙ্গে তাঁর ১১ মাসের সন্তানকেও ১৯ ঘণ্টা কারাগারে রেখেছে পুলিশ

পুলিশের পক্ষ থেকে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, এত কম বয়সি শিশু মা-কে ছাড়া থাকতে পারবে না বলেই এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে৷

চট্টগ্রামে দুই পা হারানো এক আসামিকেও হাতকড়া পরানোয় গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে৷পরে একজন পা-হীন ব্যক্তিকে হাতকড়া পরানোয় তিন পুলিশ সদস্যকে ‘ক্লোজড' করা হয়৷

এর আগে সাংবাদিক, শহিদ পরিবারের সন্তান প্রবীর সিকদারকে হাতকড়া পরিয়ে তড়িঘড়ি রিমান্ডে নেয়ার কারণেও সমালোচনার মুখে পড়েছিল পুলিশ৷ সন্ত্রাসী হামলার কারণে প্রবীর সিকদারেরও একটি পা এখন অকেজো৷

পুলিশের এমন প্রশ্নবিদ্ধ আচরণের পাশাপাশি দু-একটি ভালো দৃষ্টান্তও দেখেছে বাংলাদেশের মানুষ৷ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভ্যাট বিরোধী আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে প্রত্যাশিত সহনশীলতাই প্রদর্শন করেছে পুলিশ৷

চট্টগ্রামে এক শিশুর প্রাণও বাঁচিয়েছে এক পুলিশ সদস্য

সংকলন: আশীষ চক্রবর্ত্তী

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য