সাংবাদিকরা হুমকির মুখে?
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭মোটরসাইকেলসহ ‘দুর্ঘটনা'য় পড়া ইংরেজি দৈনিক ‘ডেইলি অবজাভার'-এর অপরাধবিষয়ক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মামুনুর রশীদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, একটি প্রাইভেট কার তাকে অনুসরণ করছিল৷ বেশ কয়েকবার চাপা দেওয়ারও চেষ্টা করেছে৷ কারওয়ানবাজার আন্ডারপাসের কাছাকাছি আসার পর আবারও তাকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করলে তিনি দ্রুত পাশ কাটাতে যান৷ একটি শিশু চলে আসে গাড়ির সামনে৷ মামুনুর রশীদের দাবি, সেই শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে মোটরসাইকেল থেকে তিনি প্রায় ৬০ ফুট দূরে গিয়ে ছিটকে পড়েন এবং মারাত্মক আহত হন৷ বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন৷
তাঁর অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে৷ বাংলা ট্রিব্রিউন জানিয়েছে, ২৩ জানুয়ারি ডেইলি অবজারভারে ‘পুলিশ অ্যাওয়েট পিএম'স অর্ডার টু ক্র্যাকডাউন অন ড্রাগ লর্ডস' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়৷ এতে সরকার দলীয় চারজন সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে মাদক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ করা হয়৷ ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পরই পত্রিকাটির সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও প্রতিবেদক মামুনুর রশীদের বিরুদ্ধে ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী ১০ কোটি টাকার মানহানির মামলা দায়ের করেন৷ জাতীয় সংসদেও তিনি ইকবাল সোবহান চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন৷ নিজাম উদ্দিন হাজারী ছাড়াও নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানও বিষয়টি নিয়ে ইকবাল সোবহান চৌধুরীর সমালোচনা করেন৷
মোস্তাফিজুর রহমান সুমন ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, ‘‘আহত মামুন ভাই জানিয়েছে, রহস্যজনকভাবে কালো কাঁচের প্রাইভেটকারটি ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়৷ গাড়িটি ফার্মগেট থেকে ফলো করছিল৷ মামুন ভাইয়ের জন্য সবাই দোয়া করবেন, যাতে উনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেন৷''
সাংবাদিক আবুল কালাম আজাদ লিখেছেন, ‘‘যার জন্য আমরা রাজপথে আন্দোলন করছি, যার রিপোর্টের কারণে মাদক সিন্ডিকেটের সম্রাটরা সংসদে গলাবাজি করে, সাংবাদিক সমাজের অবিসংবাদিত নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরীর বিরুদ্ধে সংসদে বিষোদগার করে, সেই রিপোর্টার মামুন গুরুতর আহত৷ আসুন আমরা রুখে দেই সকল ষড়যন্ত্র৷''
সাংবাদিক হারুন উর রশীদ ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, ‘‘কী কারণে প্রাইভেট কারটি তাকে ধাওয়া করেছে জানতে চাইলে মামুন বলেছেন তিনি বিভিন্ন সময় মাদক ও সন্ত্রাসীদের নিয়ে সংবাদ করেছেন৷ তবে এ কারণেই তার ওপর আক্রমণ করা হয়েছে কিনা তিনি নিশ্চিত না৷ তার মনে হচ্ছে, এটিও একটি কারণ হতে পারে৷''
এদিকে, সাংবাদিক শিমুল হত্যা মামলায় সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শাহজাদপুর পৌরসভার মেয়র হালিমুল হক মিরুসহ ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ৷ গত ২ ফেব্রুয়ারি মেয়রের শটগানে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান সমকালের শাহজাদপুর প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম শিমুল৷
বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাভার প্রতিনিধি নাজমুল হুদা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন৷ আদালত সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার আশুলিয়ায় তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সাম্প্রতিক আন্দোলন নিয়ে রিপোর্ট করার কিছুদিনের মধ্যেই নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনসহ ছয়টি মামলা করা হয়৷
সাংবাদিক হারুন-অর-রশীদ ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, ‘‘৫২ দিন পর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন সাভারের সাংবাদিক নাজমুল হুদা৷পুলিশ তাঁকে ২৩ ডিসেম্বর আটকের পর তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা দেয়৷ নাজমুলকে দু'দফা পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে৷'' তিনি প্রশ্ন রেখেছেন, নাজমুলকে কেন এই হয়ারানি, কেন এই নির্যাতন? এর নেপথ্যে কারা আছেন?''