1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তিরস্কার পাত্তা দেয় না বলে ১০ লাখ টাকা জরিমানার আইন

১৫ জুন ২০২২

শুধু তিরস্কারে কাজ হয় না বলে সাংবাদিকদের সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে প্রেস কাউন্সিল আইন সংশোধন হচ্ছে বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন কাউন্সিল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম।

https://p.dw.com/p/4Cjtt
Bangladesh Zeitungen
ফাইল ফটোছবি: DW

আইনটি মন্ত্রিপরিষদ অনুমোদন দিলে সংসদে উঠবে বলে জানান তিনি।

অবশ্য ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধানের প্রসঙ্গে এই আইনের বিরোধীরা বলছেন, সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণের জন্য দেশে অনেক আইন আছে। ১০ লাখ টাকা জরিমানার আইন হলে তা সাংবাদিকদের ওপর নতুন আরেকটি চাপ সৃষ্টি করবে। আর প্রেস কাউন্সিলের আইনগত ক্ষমতা না থাকায়  এ ধরনের শাস্তি দিতে পারে না বলেও মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম মঙ্গলবার রাজশাহীতে এক অনুষ্ঠানে প্রথম ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে আইন সংশোধনের কথা বলেন। এরপর বুধবার দুপুরে তিনি ডয়চে ভেলেকে এর ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন," প্রেস কাউন্সিলে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা হলে তাদের সর্বোচ্চ তিরস্কার করা যায়। আর কোনো ব্যবস্থা নেয়া বা শাস্তি দেয়া যায় না। তিরস্কারকে তো অনেকে পাত্তাই দেয়না। ফলে প্রেস কাউন্সিল একটা ক্ষমতাহীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তাই কাউন্সিলকে ক্ষমতাবান করার জন্য ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান নিয়ে আসা হচ্ছে। এটা নতুন কোনো আইন নয়, প্রেস কাউন্সিল আইনকে সংশোধন করা হচ্ছে। আর এটার সর্বোচ্চ সীমা ১০ লাখ টাকা। ১০ লাখ টাকাই যে জরিমানা করা হবে তা নয়, প্রেস কাউন্সিল বিচার করে এর চেয়ে কমও জরিমানা করতে পারবে।”

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা

আর কম করে হলেও সাংবাদিকদের একদিনের জেল দেয়ার ক্ষমতা চান প্রেস কাউন্সিল চেয়ারম্যান। তিনি বলেন," এটা আমরা ব্যক্তিগত চিন্তা। এটা নিয়ে কোনো আইন হচ্ছে না। কোনো প্রস্তাবও পাঠানো হয়নি।”

তিনি সাংবাদিকদের পেশাগত উন্নয়নে জেলায় জেলায় প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনার কথা জানিয়ে বলেন," সাংবাদিকতার সর্বনিম্ন যোগ্যতা কী হবে সেটা নিয়েও আমরা কাজ করছি। মতামত নিচ্ছি। প্রস্তাব আছে সর্বনিম্ন গ্রাজুয়েট হতে হবে। আবার অভিজ্ঞতা থাকলে এটা শিথিল হবে। তবে এটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।”

প্রস্তাবিত নতুন এই আইনের প্রতিক্রিয়ায় প্রেস কাউন্সিলের সাবেক সদস্য এবং গ্লোবাল টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন,"প্রেস কাউন্সিল তার ক্ষমতা বা জুরিসডিকশনের বাইরে গিয়ে কাজ করছে। শাস্তি দেয়া তার কাজ নয়। সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতা ও পেশাগত দক্ষতার উন্নয়ন তার কাজ। সাংসাদিকদের নিয়ন্ত্রণের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, মানহানির আইনসহ প্রচুর আইন আছে। আমি বুঝি না তারপরও কোন চিন্তা থেকে আবার নতুন একটা আইন করা হচ্ছে।”

তিনি বলেন," সাংবাদিকতা , সংবাদমাধ্যমের উন্নয়নে তো প্রেস কাউন্সিলকে কোনো কাজ করতে দেখি না। তারা নীতি নৈতিকতার উন্নয়নে কাজ করুক। কিন্তু সেটা শাস্তি দিয়ে কেন করতে হবে! আমার তো জানা নেই যে দুনিয়ায় কোথাও প্রেস কাউন্সিল শাস্তি দেয়।”

তিনি জানান, তিনি গত মেয়াদে যখন প্রেস কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন তখন এই ধরনের কোনো আইনের প্রস্তাব করা হয়নি। তখন সাংবাদিকতার উন্নয়নে আইন সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছিলো।

প্রেস কাউন্সিলের সদস্য এবং দ্য ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী অবশ্য জানান বছর দুই আগে এই আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। তার কথা,"প্রেস কাউন্সিল একটি কোয়াসি জুডিশিয়াল বডি। তাকে শক্তিশালী করার জন্য জরিমানার বিধান করা হচ্ছে। এটা কোনো ফৌজদারি আইন নয়। এখন যে বিধান আছে তাতে প্রেস কাউন্সিল শুধু তিরস্কার করতে পারে। তিরস্কারও এক ধরনের শাস্তি। এখন তিরস্কারের জায়গায় জরিমানার বিধান করা হচ্ছে।”

তিনি দাবি করেন," এটা হলে সাংবাদিকদের ওপর বাড়তি চাপ হবে না। কারণ প্রেস কাউন্সিলের বডিতে সাংবাদিক প্রতিনিধি, সম্পাদক, সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রতিনিধি আছেন। তাই একতরফা সিদ্ধান্ত হওয়ার আশঙ্কা নাই। আর প্রেস কাউন্সিলে মামলা হয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। তাই জরিমানা হলে প্রতিষ্ঠানকে দিতে হবে।”

প্রেস কাউন্সিলের  আরেকজন সদস্য এবং বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন,"নতুন এই আইনটি সম্পর্কে আমার জানা নেই। কারণ এটা আমাদের সময় প্রস্তাব করা হয়নি। গত মেয়াদে করা হয়েছে। ওই মেয়াদে যারা ছিলেন তারা বলতে পারবেন। তবে প্রেস কাউন্সিলে মামলা ব্যক্তির বিরুদ্ধে হয় না, প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে হয়।”

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন আর্টিকেল নাইনটিন-এর দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ফারুক ফয়সাল  মনে করেন, প্রেস কাউন্সিলের আইনগত বিচার করে শাস্তি দেয়ার কোনো ক্ষমতা নাই। তিনি বলেন,"সাংবাদিকদের বিচার করার জন্য নানা আইন-আদালত আছে। এখন প্রয়োজন সাংবাদিকদের সুরক্ষা আইন। বিভিন্ন দেশে সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য নানা আইন আছে। পাকিস্তানেও আছে। আর বাংলাদেশে সাংবাদিকদের হয়রানি করার জন্য সরকার উঠে পড়ে লেগেছে। নানা আইন করছে। এটা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশে এক সময় কয়েকটি পত্রিকা ছাড়া আর সব বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। সেই পরিস্থিতি আমরা আবার চাই না।”

এই আইনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে তার ধারণা,"বাংলাদেশে নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে সাংবাদিকদের মুখ তত বন্ধ করারর ব্যবস্থা হচ্ছে।”

আইমন্ত্রী আনিসুল হক অবশ্য বলেন,"প্রেস কাউন্সিল একটি কোয়াসি জুডিশিয়াল বডি। আইন অনুযায়ী শাস্তি দেয়ার এখতিয়ার তাদের আছে। নতুন আইনটির ব্যাপারে আমি  শুনেছি। এখনো দেখিনি। তথ্য মন্ত্রণালয় জানবে। কেবিনিটে পাস হলে ভেটিং-এর জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আসবে। আইনটিতে কী আছে তখন আমি দেখব।  কী শাস্তি দেবে তখন ওটাও আমি দেখব। আমাদের ভেটিং-এর পর সংসদে ওঠার প্রশ্ন আসবে।”

এর আগেও গত ১০ এপ্রিল  সচিবালয়ে  সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ জানিয়েছিলেন প্রেস কাউন্সিল ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার ক্ষমতা পাচ্ছে।