সাত জেলার লকডাউনে কি ঢাকা রক্ষা হবে?
২২ জুন ২০২১কিন্তু ঢাকায় করোনা সংক্রমণ বাড়ছে।
শুধু তাই নয় গবেষণা বলছে ঢাকায় আক্রান্তদের ৬৮ ভাগ ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে (ডেল্টা) আক্রান্ত। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটা একটা প্রমাণ যে সীমান্তের করোনা এখন ঢাকায় চলে এসেছে।
ঢাকায় আবার করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। ১৫ জুন থেকে ২২ জুন পর্যন্ত ঢাকায় করোনায় মুত্যু ঊর্ধ্বমূখী। ১৫ জুন ঢাকায় মারা গেছে ৬ জন, ১৬ জুন ৮, ১৭ জুন ১০, ১৮ জুন ১২, ১৯ জুন ১৪, ২০ জুন ২১, ২১ জুন ২৩ এবং২২ জুন ১৪ জন।
গত ১৯ জুন থেকে শনাক্তের হারও ঢাকায় বাড়তে শুরু করেছে ১৯ জুন শনাক্ত হয় এক হাজার ১১৪ জন, ২০ জুন ৮২২ জন, ২১ জুন এক হাজার ২৯৪ জন ২২ জুন এক হাজার ৯৬৭জন। কিন্তু ১৮ জুন ছিলো ৪৭৩ জন।
ঢাকার চারপাশে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ি ও মাদারীপুর এই সাতটি জেলায় লকডাউন শুরু হয়েছে । এর লক্ষ্য রাজধানী ঢাকাকে সুরক্ষিত রাখা। যদিও খুলনা মৃত্যুহারে ঢাকাকে সাময়িকভাবে ছাড়িয়ে গেছে তারপরও ঢাকা এখনও করোনার হটস্পট। এপর্যন্ত শুধু ঢাকায় করোনায় মারা গেছে সাত হাজার ৪১৫জন। সারাদেশে মারা গেছে ১৩ হাজার ৭০২ জন। আর এপর্যন্ত ঢাকায় মোট আক্রান্ত হয়েছে পাঁচ লাখ ৪০ হাজার ৭৮জন। আর সারাদেশে আট লাখ ৬১ হাজার ১৫০ জন।
করোনার তৃতীয় ঢেউ এসে ঢাকাকে যাতে পর্যুদস্ত করতে না পারে তার আগাম ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ঢাকায় আর লকডাউন দেয়ার ইচ্ছা নেই সরকারের। ঢাকাকে সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থাই এখন প্রধান লক্ষ্য।
কিন্তু ঢাকার আশপাশের সাতটি জেলা লকডাউন দিয়ে সেটা কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। মঙ্গলবার ঢাকা থেকে দূরপাল্লার বাস ছড়েনি। আসেওনি কোনো বাস। ঢাকা জেলায় লকডাউন না থাকায় অভ্যন্তরীণ রুটে যানবাহন চলাচল করেছে। আর ঢাকার সিটি সার্ভিস চলছে যথারীতি। তাতে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। ঢাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া এখন সবকিছুই খোলা।
গত ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে করোনায় মারা গেছে ৭৬ জন। আক্রান্ত হয়েছেন দুই হাজার ৩০৯ জন। সর্বোচ্চ সংখ্যক মারা গেছে খুলনায় ২৭ জন। তবে সংক্রমণে শীর্ষে ঢাকাই রয়ে গেছে। গত ২৪ ঘন্টায় ঢাকায় আক্রান্ত এক হাজার ৪৯৬ জন। আর সারাদেশে চার হাজার ৮৪৬ জন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী মনে করেন," সার্বিকভাবে সারাদেশের সংক্রমণ কমাতে হবে। সেটা না করে ঢাকাকে আলাদাভাবে সুরক্ষার কোনো উপায় নেই। আর সীমান্ত এলাকা থেকে সুরক্ষা দেয়া হলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। আর ঢাকায় তো ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ঢুকে গেছে। এখন এটা ঢাকায় স্থানীয়ভাবেই ছাড়াবে।” তিনি আরো বলেন," মাদারীপুরে লকডাউনের আগের দিন একটি নির্বাচন হল। সেখানে হাজার হাজার লোক জড়ো হলো। তাহলে এই লকডাউনের কী মানে হয়!”
আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন মনে করেন," যেখানেই সংক্রমণের হার ১০ ভাগের বেশি সেখানেই সংক্রমণ কমানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আলাদাভাবে কোনো এলাকা নয়।”
এদিকে আইসিসিডিআর,বি-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে ঢাকার কিছু বস্তি এবং সংলগ্ন এলাকায় ৭১ ভাগ মানুষের শারীরে করোনার অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। চট্টগ্রামে ৫৫ ভাগ। কিন্তু ডা. মুশতাক বলেন," এটা সাময়িক জরিপ। কারণ তিন মাস পর এই অ্যান্টিবডি থাকেনা। আর আক্রান্ত হয়ে অ্যান্টিবডি হওয়া অনেক মানুষের মৃত্যুঝুঁকি তৈরি করে। তাই দ্রুত সবাইকে ভ্যাকসিন দেয়া এবং স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নেই।”