1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাড়ে চার মাসে বিএনপির দেড় হাজার নেতা-কর্মীর সাজা

১৪ ডিসেম্বর ২০২৩

সাড়ে চার মাসে বিভিন্ন মামলায় বিএনপির কমপক্ষে দেড় হাজার নেতা-কর্মীর সাজা দিয়েছেন আদালত৷ বুধবার এক দিনে সর্বোচ্চ ১১৯ জন নেতা-কর্মীর সাজা হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/4a9b8
গত কয়েক মাসে গ্রেপ্তার হওয়া বিএনপির নেতা-কর্মীদের অনেকের সাজা হয়েছে
পুলিশ ভ্যানে কয়েকজন বিএনপি কর্মী (ফাইল ফটো)ছবি: Mahmud Hossain Opu/AP Photo/picture alliance

বিএনপির অভিযোগ, সরকার এখন বিরোধী নেতা-কর্মীদের দমনে আদালতকে সরাসরি ব্যবহার করছে৷

অবশ্য রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী দাবি করছেন,‘‘যা হচ্ছে আইন মেনেই হচ্ছে৷'' বুধবার মোট ছয়টি মামলায়  বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের ১১৯ জন নেতা-কর্মীর বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড নতুন করে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে৷  ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত রায়গুলো দিয়েছেন৷  ছয় মাস থেকে সর্বোচ্চ দুই বছর ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷  দণ্ডিত ১১৯ জনের মধ্যে আছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম, হাজারীবাগ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল আজিজ, বনানী থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান৷

যে ছয়টি মামলায় বুধবার রায় দেয়া হয়েছে তারমধ্যে পাঁচটি মামলার বাদি পুলিশ  এবং ২০১৮ সালে দায়ের করা, আর একটি মামলা ২০১৩ সালের৷  মামলাগুলোর মধ্যে দুইটি উত্তরখান থানায় আর বাকি চারটি মামলা ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী ও কামরাঙ্গিরচর থানার৷  ওইদিন হাজারিবাগ থানার আরেকটি মামলায় সবাইকে খালাস দেয়া হয়েছে৷  মামলাগুলোতে মূল অভিযোগ পুলিশের কাজে বাধা দেয়া, হামলা ও ভাঙচুর৷ বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচির সময়ে ওই ঘটনাগুলো ঘটে বলে অভিযোগ করা হয়৷

‘গত আাড়াই মাসেই এক হাজার ২৬ জনকে দণ্ড দেয়া হয়েছে’

আদালত থেকে পাওয়া তথ্য মতে, এনিয়ে গত সাড়ে চার মাসে ৭৩ মামলায় বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের কমপক্ষে এক হাজার ১৪৫ জন নেতা-কর্মীর সাজা হলো৷  জামায়াতের কিছু নেতা-কর্মীও দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে আছেন৷  কয়েকজন আছেন যারা একাধিক মামলায় সাজা পেয়েছেন৷

বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল জানান, ‘‘আমার জানা মতে গত আাড়াই মাসেই এক হাজার ২৬ জনকে দণ্ড দেয়া হয়েছে ৬৯টি মামলায়৷  এই মামলাগুলো ২০১৩-১৪ এবং ২০১৮ সালের৷  মামলাগুলোর কথিত অভিযোগ হলো পুলিশের কর্তব্যকর্মে বাধা এবং নাশকতার৷  মামলাগুলো আমাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি চলার সময়ে৷ বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের মধ্যম পর্যায়ের নেতারাই মূলত এইসব মামলার আসামি৷''

তার দাবি, ‘‘গুম হওয়া, মারা যাওয়া ব্যক্তিদের সাজা দেয়া হচ্ছে৷  এমনকি উচ্চ আদালতের বিচার স্থহিত করা মামলায়ও সাজা দেয়ার একটি নজির আমরা পেয়েছি৷  তাই বলা হচ্ছে বিচার প্রক্রিয়াকে এখন কবরে পাঠানো হচ্ছে৷  এটা বিচারের নামে পলিটিক্যাল ট্রায়াল৷ ''

তিনি অভিযোগ করেন,‘‘মামলাগুলোর রায় রাজনৈতিক কারণে দেয়া হচ্ছে৷  ঠিক মত সাক্ষীও নেয়া হচ্ছেনা৷  বিচারক শুধু রায় পড়ছেন৷  কয়েকটি কোর্ট এই কাজ করছে৷ আদালতকে ব্যবহার করে বিরোধীদের দমন ছাড়া আরো উদ্দেশ্য হলো এরা যেন কোনো পর্যায়ে নির্বাচনে দাঁড়াতে না পারেন৷  সেজন্য অধিকাংশকেই দুই বছরের বেশি জেল দেয়া হচ্ছে৷সাগর-রুনি হত্যার বিচার হয় না বছরের পর বছর৷  দুর্নীতি ও ব্যাংক লুটপাটের মামলার বিচার হয় না৷  কিন্তু বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে  মামলার স্পিডি ট্রায়াল হচ্ছে৷ এটা প্রহসন ছাড়া আর কিছুই না৷ ''

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ বলেন, ‘‘আমরা ধারণা করেছিলাম সংবাদমাধ্যমের লেখালেখি ও সমালোচনার কারণে এই ধরনের বিচার বন্ধ হবে৷ কিন্তু সেটা বন্ধ না হয়ে কিছু রাজনৈতিক মামলার বিচার আরো স্পিডি হচ্ছে৷  তাতে আমার মনে হচ্ছে শক্ত পরিকল্পনা করেই এই কাজ করা হচ্ছে৷  এর মাধ্যমে বিচার বিভাগ ও জনগণকে মুখোমুখি অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷  এটা দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য ভাল না৷ ''

‘বিচার বিভাগ ও জনগণকে মুখোমুখি অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে’

তিনি বলেন,‘‘বিরোধীদের বিরুদ্ধে মামলা,তদন্ত ও বিচার এক ধরনের লাইনে চলে৷ আর যারা ক্ষমতায় আছেন তাদের জন্য আরেক ব্যবস্থা৷  দুই লাইনে চলার কারণে মানুষ মনে করে আদালতকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ আর  মানুষের এই যে ধারণা তা দূর করতে সরকারও কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেনা৷ ''

তবে ঢাকা মহানগন দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আবু দাবি করেন, ‘‘রাজনৈতিক কারণে কাউকে দণ্ড দেয়া হচ্ছে না৷  যাদের বিরদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হচ্ছে তারাই দণ্ডিত হচ্ছেন৷ ''

পর্যাপ্ত সাক্ষ্য গ্রহণ না করে রায় দেয়ার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করে বলেন, ‘‘হঠাৎ কোনো রায় হচ্ছে না৷  মামলাগুলো পুরানো৷ দীর্ঘদিন ধরেই বিচার কাজ চলছিল৷ এখন রায় হচ্ছে৷''

মৃত ও গুম হওয়া ব্যক্তির বিরুদ্ধে রায় হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আসামিরা পলাতক অবস্থায় মারা গেলে তা তো আদালতকে জানাতে হবে৷  না জানালে আদালত জানবেন কীভাবে? হাইকোর্ট যদি কোনো মামলার বিচারকাজ স্থগিত রাখার আদেশ দেন তাও বিচার আদালতকে জানানো আসামি পক্ষের দায়িত্ব৷''