1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সেকশন আর বেঞ্চের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

১৭ আগস্ট ২০২০

সুপ্রিম কোর্টের দুই বিভাগের বেঞ্চ আর সেকশনের বিরুদ্ধে আইনজীবীদের অনেক অভিযোগ৷ এছাড়াও আছে দালাল চক্র, যারা আদালতের সাথে কোনোভাবে সংশ্লিষ্ট না হয়েও নানা প্রতারণায় যুক্ত৷

https://p.dw.com/p/3h5Qw
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan

দুই হাজারেরও বেশি ‘টাউট বাটপার’ আছে আদালত এলাকায় ৷ আইনজীবীরা বলছেন, দুর্নীতি মুক্ত করতে হলে সমন্বিত অভিযান পরিচালনা করতে হবে৷ অন্য সময়তো বটেই এমনকি করোনাকালের জিজিটাল আদালতেও সেকশন ও বেঞ্চের এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী দুর্নীতির নতুন কৌশল আবিষ্কার করেন৷ শুধু তাই নয়, এটা বন্ধ করতে সেকশনে টোকেন সিস্টেম চালু করা হলে তার উল্টো প্রতিক্রিয়া হয়৷ লেনদেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেকশনের কাজে ঢিলেমি শুরু হয়৷

দুর্নীতির যত ঘাট:
উচ্চ আদালতে আপিলসহ যেকোনো মামলা বা আবেদনে হলফনামা (এফিডেভিট) দিতে হয়৷ এই কাজ সেকশনের৷ আর আদালতের বেঞ্চগুলো মামলার তালিকা করে৷ হলফনামার ক্ষেত্রে আবেদনকারীকে সশরীরে থাকতে হয়৷ বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, অনেক সময় তারা হাজির না থেকে সেকশন থেকে লেনদেনের বিনিময়ে হলফনামা করিয়ে নেন৷ আর সেকশনের লোকজন ছাড়াও এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকে আইনজীবীদের ক্লার্করা৷ আবার হলফনামা বেঞ্চে না গেলে মামলা তালিকায় থাকলেও শুনানি করা যায়না৷ তাই টাকা আদায়ের জন্য হলফনামা তৈরি করে বেঞ্চে পাঠাতে গড়িমসি করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে৷

বেঞ্চ অফিসারেরা মামলার তালিকা করেন৷ অভিযোগ, বেঞ্চে মামলার তালিকা হলো টাকা আদায়ের বড় সূত্র৷ শুনানির জন্য মামলা তালিকায় না থাকলে শুনানি হয়না৷ তাই তালিকায় তুলতে টাকা দিতে হয় ৷ শুধু তাই নয়, মামলাটি তালিকার আগে না পরে থাকবে তাই নির্ধারণ করা হয় টাকার বিনিময়ে৷ আবার আদেশ হওয়ার পর লিখিতভাবে তার কপি বের করার ব্যাপারেও আছে লেনদেনের বিষয়৷ কারণ লিখিত আদেশ না পেলে তার কোর্স অব অ্যাকশন শুরু হয় না৷ এটা ঝুলিয়ে রেখেও টাকা আদায়ের অভিযোগ আছে৷

ফোন করলে ই-মেল পাওয়া যায়নি বলে নানা অজুহাত দেয়া হয়: অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান

আইনজীবীদের এইসব অভিযোগের ভিত্তিতে সেকশনে কয়েক সপ্তাহ আগে টোকেন পদ্ধতি চালু করা হয়৷ নিয়ম করা হয়, মামলার হলফনামার জন্য কাগজপত্র জমা দিয়ে আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবীর ক্লার্ক একটি টোকেন নেবেন৷ আবার সেই টোকেন দেখিয়ে তারা গেটের বাইরে থেকেই কাগজপত্র নেবেন৷ সেকশনের ভিতরে ঢুকবেন না৷ এতে লেনদেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মাথায় বাজ পড়ে সেকশনের কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীর৷ যেহেতু স্পিড মানি নাই তাই তারা কাজের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন৷ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও আচরণবিধি কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান জানান, ‘‘রোববার যে ৪৩ জন ক্লার্ককে আটক করে পরে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয় তারা মূলত টোকেনসহ কাগজের জন্য ভিড় করেছিলেন৷ সেখানে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে অভিযান হয়৷ কিন্তু সেকশন থেকে নিয়ম অনুযায়ী হলফনামার কাগজ দিলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না৷’’

আদালতে ‘টাউট বাটপার’:

আদালতে আইনজীবী, তাদের ক্লার্ক, বেঞ্চ এবং সেকশনের কর্মকর্তা কর্মচারীদের পরিচয়পত্র আছে৷ ক্লার্কদের নির্দিষ্ট পোশাকও আছে৷ তবে এর বাইরে আদালত এলাকায় বেশ কিছু লোক সক্রিয় ৷ তারা আইনজীবী অথবা ক্লার্ক পরিচয়ে সেখানে অবস্থান করেন৷ আইনজীবীর পোশাকও তারা ব্যবহার করেন৷ আদালত সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই চক্রটি অনেক বড়৷ তাদের সাথে আবার কোনো কোনো আইনজীবীর সম্পর্ক আছে৷ আইনজীবীদের রুমেও তাদের দেখা যায়৷ অভিযোগ তাদের কেউ কেউ আবার সুপ্রিম কোর্টের আশপাশ এলাকায় চেম্বার খুলেও বসেছেন৷ এই চক্রটি কোনো কোনো আইনজীবীর মক্কেল ধরার কাজ করেন৷ তারা মামলা পরিচালনা, সেকশন ও বেঞ্চের কাজ করে দেয়ার জন্য চুক্তি করেন৷

আরেকটি চক্র আছে যারা আদালতের ভুয়া আদেশ ও ভুয়া জামিন নামা তৈরি করে৷ গত কয়েক বছরে এরকম বেশ কিছু ভুয়া আদেশ ও জামিন নামা ধরা পড়েছে৷ এই চক্রটি আশপাশের সরকারি অফিসেও অবস্থান করে বলে জানা গেছে৷ সুপ্রিমকোর্ট ক্লার্ক (আইনজীবী সহকারী) সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান দাবি করেন, ‘‘এই চক্রের সাথে কতিপয় বেঞ্চ অফিসার যুক্ত৷ তাদের সহায়তা ছাড়া এই জালিয়াতি সম্ভব নয়৷’’ তার কথা, ‘‘আমরা সুপ্রিমকোর্ট এলকায় দুর্নীতি বিরোধী অভিযানকে স্বাগত জানাই৷ কিন্তু যারা এর সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে যেন ব্যবস্থা নেয়া হয়৷ আমরা আইন মেনে কাজ করি৷ আমাদের পরিচয় পত্র ও নির্দিষ্ট পোশাক আছে৷’’

এই চক্রের সাথে কতিপয় বেঞ্চ অফিসার যুক্ত: মিজানুর রহমান

ভার্চুয়াল আদালতও দুর্নীতি ঠোকাতে পারেনি:
অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান বলেন, ‘‘আমরা আশা করেছিলাম করোনার সময় যেহেতু ভার্চুয়াল আদালত তাই বেঞ্চ ও সেকশনের দুর্নীতি কমবে৷ কিন্তু তা কমেনি৷’’ সেটার কৌশল সম্পর্কে তিনি বলেন, আইনজীবীরা একটি নির্দিষ্ট ই-মেইলে তাদের আবেদন বা মামলা পাঠান৷ আবার ই-মেইলেই জবাব আসে৷ কিন্তু মামলার তালিকা তো বেঞ্চের হাতে৷ তাই দেখা গেছে আর্থিক যোগাযোগ না করলে মামলার তালিকায় নাম উঠিয়ে আদালতের লিংক আর পাঠানো হয়না৷ ফোন করলে ই-মেইল পাওয়া যায়নি বলে নানা অজুহাত দেয়া হয়৷ মোট কথা হলো তারা তুষ্ট না হলে কাজ হয়না৷

এইসব বিষয় নিয়ে এরইমধ্যে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইনজীবী সমিতি বৈঠক করেছে৷ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেয়ার জন্য একটি অভিযোগ বাক্সও রাখা হয়েছে৷ আইনজীবী সমিতি একটি আচরণবিধি কমিটিও করেছে৷

সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের মত জায়গায় কোনো অনিয়ম, ঘুস, দুর্নীতি থাকতে পারেনা৷ সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন এবং আইনজীবী সমিতি এব্যাপারে একমত৷ দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে৷’’

এবিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র সাইফুর রহমান জানান, ‘‘প্রধান বিচারপতি সুপ্রিমকোর্ট অঙ্গনে যেকোনো ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে আছেন৷ রোববার অভিযান হয়েছে৷ এখন বিচারপতি ইমান আলী একটি প্রতিবেদন দেবেন৷ তার ভিত্তিকে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে৷’’

তিনি বলেন, নিয়ম অমান্য করে সেকশনে ঢুকেছিলো বলে ওই ৪৩ জনকে আটক করা হয়েছিল৷