সোশাল মিডিয়ায় ২৪ ঘন্টা নজরদারি
১০ সেপ্টেম্বর ২০২১নবগঠিত ‘সাইবার সিকিউরিটি সেল'-এর মাধ্যমে ওয়েবসাইট এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী'সহ বিভিন্ন রকমের ‘আপত্তিকর' কন্টেন্ট সব সময় নজরদারিতে রাখতে চায় টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি৷ পাশাপাশি সামাজিক, রাজনৈতিক, পর্নগ্রাফিক, সাংস্কৃতিক কিংবা ধর্মীয় বিষয়ে উসকানিমূলক ও উগ্রবাদী কন্টেন্টও সার্বক্ষণিক নজরে রাখতে কাজ করবে সাইবার সিকিউরিটি সেল৷
বিটিআরসি এর আগে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা নিয়মিতভাবে ‘আপত্তিকর' কন্টেন্ট অপসারণে অনুরোধ জানালে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতো৷ তবে এখন থেকে এ সেলের মাধ্যমে নিজ উদ্যোগে পদক্ষেপ নেওয়া হবে৷
ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে প্রাথমিকভাবে এ কাজ শুরু হয়েছে বলে কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার জানিয়েছেন৷
তিনি বলেন, ‘‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সাইবার জগতের কনটেন্ট মনিটরিং ও ব্যবস্থাপনায় ‘সাইবার সিকিউরিটি সেল' গঠন করা হয়েছে, খুব শিগগির এ সেল ২৪ ঘণ্টা কাজ শুরু করবে৷'' সাইবার সিকিউরিটি সেলের কাজ পরিচালনায় নতুন কোনো প্রযুক্তির প্রয়োজন হবে কিনা বা কেনা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আগামীতে আমরা এ উদ্যোগ নেবো, তবে এসব প্রযুক্তি বেশি দামের হবে না, খুব সহজেই পুরো কাজ আমরা শুরু করতে পারবো৷''
নজরদারি করা গেলেও বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় সোশাল মিডিয়াসহ অন্যান্য ওয়েবসাইট থেকে কন্টেন্ট অপসারণ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, কেননা কমিশন বা সরকার চাইলেও প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিয়ম-নীতির বাইরে কোনো পদক্ষেপ নিতে চায় না৷ এ নিয়ে নিজেদের ‘অসহায়ত্বের' কথা বলেছেন টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার৷
এছাড়াও নতুন সাইবার সিকিউরিটি সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিটিআরসির ঊধর্বতন এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘প্রাথমিকভাবে কমিশনের ১০ জন কর্মকর্তা এ সেলের দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন, আগামীতে আরো বড় পরিসরে কাজ শুরু হবে৷ বিটিআরসি কোনো আপত্তিকর কন্টেন্ট পাওয়া মাত্র ব্যবস্থা নেবে৷''
সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে ২০১২ সালে একটি বিশেষ দল গঠন করে বিটিআরসি৷ বাংলাদেশ কম্পিউটার সিকিউরিটি ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম (বিডি-সিএসআইআরটি) নামে সেসময় কাজ শুরু করলেও তা কয়েক বছর পর আর কার্যকর ছিল না৷ বিডি-সিএসআইআরটির ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘‘লোকবল, বিশেষ করে সাইবার বিশেষজ্ঞ না থাকায় কয়েক বছর পর সেই টিমটি আর এগিয়ে যেতে পারেনি৷ এই সেলে বিটিআরসি থেকে ১০ জন কর্মকর্তা থাকলেও মোবাইল ফোন অপারেটরসহ অন্যান্য অপারেটর থেকে সাইবার অপরাধ বা এসব বিষয়ে অভিজ্ঞ সদস্য নেওয়া হবে৷ সবাই একযোগে কাজ করা যায়, তাই এই উদ্যোগ৷''
হাইকোর্ট সোশাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ব্যক্তিগত ভিডিও, ছবি অপসারণে বিটিআরসির ভূমিকা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করায় সোশাল মিডিয়ায় ‘আপত্তিকর' কন্টেন্ট অপসারণের বিষয়টি সম্প্রতি আবার সামনে আসে৷
সংবাদ সম্মেলনে সোশাল মিডিয়ার কন্টেন্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির ‘অসহায়ত্বের' কথা স্বীকার করে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইচ্ছা করলেই কোনো কন্টেন্ট সরিয়ে ফেলতে পারে না, বড় জোর অনুরোধ করতে পারে৷ সিদ্ধান্ত নেয় সোশাল মিডিয়া কর্তৃপক্ষগুলো৷
বিটিআরসির তথ্য অনুয়ায়ী, গত এক বছরে ১৮ হাজার ৮৩৬টি ‘আপত্তিকর' ফেসবুক লিংক বন্ধ করার অনুরোধ জানায় বাংলাদেশ সরকার৷ এর মধ্যে চার হাজার ৮৮৮টি লিংক বন্ধ করা হয়েছে৷ ৪৩১টি ইউটিউব লিংক বন্ধ করার অনুরোধে ইউটিউব কর্তৃপক্ষ মাত্র ৬২টির ক্ষেত্রে সাড়া দিয়েছে৷
তবে চাইলে বাংলাদেশ থেকে যে কোনো ওয়েবসাইট দেখার সুযোগ বন্ধ করে দিতে পারে বিটিআরসি৷ গত এক বছরে এক হাজার ৬০টি ওয়েবসাইটের লিংক বন্ধ করা হয়েছে৷
এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)