1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্কুলে হবে এক শিফট, জানুয়ারিতে বই নিয়ে অনিশ্চয়তা

৩১ অক্টোবর ২০২২

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আগামী বছর থেকে ক্লাস হবে এক শিফটে৷ আর এটা করতে গিয়ে শিক্ষকের সংখ্যা বাড়াতে হবে৷ প্রয়োজন হবে অবকাঠামোর উন্নয়ন৷

https://p.dw.com/p/4ItdG
বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাইকেলে করে মেয়ে শিশুদের স্কুলে যাওয়ার চর্চা বাড়ছে৷
বাংলাদেশে সাইকেলে করে স্কুলে যাচ্ছে একদল শিক্ষার্থী (ফাইল ফটো)ছবি: Ashraful Islam/DW

অন্যদিকে, বিনামূল্যে বই ছাপানো নিয়ে জটিলতা চলছে৷ তাই নতুন বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের বই পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে৷

বাংলাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে এখন দুই শিফট চালু আছে৷ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেনি৷ আর দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত তৃতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়৷ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘এক শিফট করতে গিয়ে অবকাঠামোর সমন্বয় করা হবে৷ আর এটা করতে গিয়ে কোনো স্কুল বন্ধ করা হবে না৷ কোনো শিক্ষক চাকরিও হারাবেন না৷ এই প্রক্রিয়ায়ার প্রায় ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে৷'' 

‘প্রকাশকরা যাই বলুক শিক্ষার্থীদের হাতে ১ জানুয়ারি বই যাবে’

জানা গেছে, জানুয়ারি মাস থেকেই স্কুলগুলো এক শিফটে চলে যাবে৷ একবারে সম্ভব না হলে পর্যায়ক্রমে এটা করা হবে৷ বাংলাদেশে মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৬টি৷ এই সব স্কুলের মধ্যে এক রুম থেকে তিন রুমের অনেক স্কুল আছে৷ সেখানে শিফটের কোনো বিকল্প নাই৷ আবার ২০১০ সাল থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিকও শুরু হয়েছে৷ আগামী বছর থেকে সব সরকারি স্কুলেই প্রাক-প্রাথমিক চালু হবে৷

প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষকেরা আলাদা এবং তাদের নিয়োগও আলাদা৷ সেক্ষেত্রে কীভাবে এক শিফটে সামাল দেয়া হবে?

এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা হলো, একই এলাকায় পাশাপাশি স্কুলগুলোকে এক করে ফেলা৷ যেমন পুরান ঢাকার লালচান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এক রুমের৷ সেখানে শিক্ষার্থৗও নেই বললেই চলে৷ আবার পাশের গোয়ালঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বড় এবং ছাত্র-ছাত্রী অনেক৷ এই দুইটি স্কুল এক করা হবে এবং এক শিফটে সকাল থেকে দুপুর ক্লাস নেয়া হবে৷

ঢাকার বিহারি ক্যাম্প এলাকার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সাদিয়া ইসলামের এক শিফট ও দুই শিফট উভয় ধরনের স্কুলে পড়ানোর অভিজ্ঞতা আছে৷ তিনি বলেন, ‘‘এখনো দেশে অনেক স্কুলে এক শিফট চালু আছে৷ এটা নির্ভর করছে স্কুলের অবকাঠামো ও শিক্ষকের সংখ্যার ওপর৷''

তার কথা, ‘‘এখন প্রি-প্রাইমারিসহ প্রাথমিকে মোট ছয়টি শ্রেণি আছে৷ আবার তৃতীয় শ্রেণি খেকে সাবজেক্ট বাড়তে থাকে৷ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে তিনটি করে বিষয় পড়ানো হয়৷ তৃতীয় থেকে পঞ্চম ছয়টি বিষয়৷ ফলে শিক্ষক এবং অবকাঠামোর যা অবস্থা তাতে শিক্ষক বাড়াতে হবে৷ অবকাঠামোও বাড়াতে হবে৷ নয়তো এক শিফট অনেক কঠিন হয়ে পড়বে৷''

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. শামসুদ্দিন বলেন, ‘‘আগামী বছর থেকে সব স্কুলেই প্রি-প্রাইমারি চালু হবে এবং দুইটি ক্লাস হবে৷ সে কারণে যেসব স্কুলের এখন ছয়টি শ্রেণি কক্ষ আছে তাদের সাতটি শ্রেণি কক্ষ লাগবে৷ শিক্ষকও বেশি লাগবে৷ প্রি-প্রাইমারির শিক্ষকরা ওই ক্লাসের জন্যই নির্ধারিত৷ স্কুলগুলোতে একজনের বেশি প্রি-প্রাইমারি শিক্ষক নেই৷''

তার কথা, ‘‘যদি অবকাঠামো বাড়ানো যায় এবং পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ দেয়া যায় তাহলে এক শিফটই ভালো৷ আমাদের শিক্ষকদের জন্যও ভালো৷ এখন তো আমাদের সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত স্কুলে থাকতে হয়৷''

তিনি জানান, ‘‘সরকার অবশ্য আগামী বছর ৪৫ হাজারেরও বেশি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ করতে যাচ্ছে৷''

আর এক শিফট চালু হলে কোনো শিক্ষকের চাকরি চলে যাওয়ার আশঙ্কার কথা ঠিক নয়, বরং শিক্ষক আরো বেশি লাগবে বলে জানান তিনি৷

বই সংকট:

বাংলাদেশে ১ জানুয়ারি প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই দেয়া হয়৷ এজন্য মোট ৩৫ কোটি বই লাগে৷ তার মধ্যে মাধ্যমিকের বই দেরিতে হলেও ছাপা শুরু হয়েছে৷ কিন্তু প্রাথমিকের বই এখনো ছাপা শুরু হয়নি৷ প্রাথমিকের মোট বই ১২ কোটি৷ 

‘‘আমাদের শিক্ষকদের জন্যও ভালো’‘

জানা গেছে, মাধ্যমিকের এপর্যন্ত দুই কোটি বই ছাপা হয়েছে৷ আবার নতুন বছরে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমের বই দেয়ার কথা৷ ওই দুই শ্রেণির বই এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানা গেছে৷

নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে আর মাত্র দুই মাস বাকি৷ বই ছাপার পর তা আবার বিতরণের জন্য পাঠাতে হয়৷ সেটাও এক মাসের কাজ৷ সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ওয়ার্ক অর্ডারে দেরি হওয়া, লোডশেডিং এবং ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে৷ কোনো কোনো প্রকাশক আংশিক বা পুরো অর্ডার এখন ফিরিয়ে দিতে চাইছেন৷

বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আপনি নিশ্চিত থাকেন এবার আমরা ঠিক সময়ে বই দিতে পারছিনা৷ এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়৷ কারণ টেন্ডার ছয় মাস আগে হলেও আমাদের ওয়ার্ক অর্ডার দেয়া হয়েছে এক মাস আগে৷ ডলারের দাম বেড়েছে৷ কাগজ পাওয়া যাচ্ছে না৷ লোডশেডিং এসব কারণে আমরা বই ছাপতে পারছি না৷ হয়তো ৮০ ভাগ ছাপতে পারবো৷ তাতে তো আর জানুয়ারির ১ তারিখে বই পাবে না৷''

তবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘‘প্রতিবারই শেষ সময়ে প্রকাশকেরা কিছু সুবিধা নেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে৷ এবারও তারা তাই করছে৷ তারা নানা অজুহাতে ছাপার দর টেন্ডারের অতিরিক্ত বাড়িয়ে নিতে চাইছে৷ কিন্তু আমরা অনঢ়৷ তাদের তো অন্য সুবিধা দিই৷ প্রেসে যাতে লোডশেডিং না হয় তার ব্যবস্থা করেছি৷ পরিবহণ ও ফেরির সুবিধা দিচ্ছি৷''

তার কথা, ‘‘প্রকাশকরা যাই বলুক শিক্ষার্থীদের হাতে ১ জানুয়ারি বই যাবে৷ আশঙ্কার কোনো কারণ নেই৷''  এবার বই ছাপার দায়িত্ব পেয়েছে ১০৫টি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান৷