1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হটলাইনের ২৫০ অভিযোগ আমলে নিয়েছে দুদক

৭ আগস্ট ২০১৭

প্রায় এক লাখ কল, আট হাজার মৌখিক টেলিফোন অভিযোগ৷ দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগের জন্য হটলাইন চালুর পর এই হলো অবস্থা৷ এর থেকে ২৫০টি অভিযোগ যাছাইবাছাই করে তদন্ত করবে দুদক৷ ওদিকে অভিযোগ এসে চলেছে এখনও৷

https://p.dw.com/p/2hpBg
ছবি: DW

দুদকে চিঠির মাধ্যমে বা সরাসরি অভিযোগ করার সুযোগ আগেও ছিল৷ দুদকের সামনে আছে অভিযোগ বাক্স৷ কিন্তু তাতে তেমন অভিযোগ জমা হতো না৷ তাছাড়া অভিযোগগুলো নিয়ম করে মনিটরিং-এরও ব্যবস্থাও ছিল না৷ কিন্তু পরিস্থিতি বদলে যেতে থাকে ২৭ জুলাই থেকে৷ ঐ দিন দুদক আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ দেয়ার জন্য টেলিফোন হটলাইন চালু করে৷ সংবাদমাধ্যম তা ব্যাপকভাবে প্রচারও করা হয়৷ ভুক্তভোগী নগরিকরা যাতে অভূতপূর্ব সাড়া দেন৷

দুদক জানায়, সাত কর্মদিবসে প্রায় ৯২ হাজার কল এসেছে হটলাইনে৷ এর মধ্যে আট হাজারেরও বেশি কল রিসিভ করে কথা বলেছেন দুদকের দায়িত্বপ্রাপাপ্ত কর্মকর্তারা৷ তারমধ্যে বাছাই করে ২২৫টি থেকে ২৫০টি অভিযোগ তদন্তের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে৷ তবে এখনও প্রতিদিন গড়ে কল আসছে ১৩ হাজারেরও বেশি৷

এটা দুর্নীতি দমনে কতটা সহয়ক হবে সেটা পরের প্রশ্ন: প্রণব কুমার ভট্টাচার্য

যেভাবে কাজ করে হটলাইন:

দুদকের হটলাইন টেলিফোন নাম্বারটি হলো:১০৬৷ এটি একটি হান্টিং নাম্বার৷ একইসঙ্গে ৩০টি ফোন কল করা যায় এই নম্বরে৷ এর সঙ্গে কম্পিউটার সংযুক্ত করা৷ তাই কোনো কল রিসিভ করা না গেলে যিনি ফোন করেছেন তাঁর নাম্বারসহ কল রেকর্ড হয়ে যায়৷ আর যাঁদের ফোর রিসিভ করা হয়, তাঁদের কথোপকথনও রেকর্ডে থাকে৷ দুদকের উপ-পরিচালক এবং জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আমাদের একটি কল সেন্টার আছে এবং এই কল সেন্টারে কমপক্ষে সহকারী পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তারা কাজ করছেন৷ ছুটির দিন বাদে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মোট ২০ জন কর্মকর্তা কাজ করেন এই কল সেন্টারে৷’’

তিনি আরো জানান, ‘‘যেসব কল রিসিভ করা হয় তাদের মধ্যে যেসব অভিযোগ দুর্নীতি সংক্রান্ত নয়, সেগুলো কোথায় করতে হবে তার পরামর্শ আমরা দেই৷ আর দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগগুলো আমরা বিস্তারিত নিই৷ আমরা দুর্নীতির যেসব অভিযোগ পেয়েছি, তার মধ্যে যাচাইবাছাই করে অন্তত ২২৫টি অভিযোগ তদন্তের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে৷’’

এই অভিযোগগুলো নিয়ে কী করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের একটি যাচাইবাছাই কমিটি আছে৷ তারা এখন এগুলো দেখবেন, কীভাবে তদন্ত করা যায় তার নির্দেশনা দেবেন৷ তারপর তদন্ত শুরু হবে একটা চলমান প্রক্রিয়ায়৷’’

তিনি বলেন, ‘‘আমরা তিনটি স্পেশাল টিম গঠন করেছি৷ এমন কোনো অভিযোগ যদি পাওয়া যায় যে তাৎক্ষণিক অভিযান চালানো প্রয়োজন, তাহলে তাঁরা অভিযান চালাবেন৷ যেমন ঘুস লেনদেনের সঠিক খবর পাওয়া গেলে আমাদের বিশেষ টিম অভিযান চালবে৷ হটলাইন চালুর পর এ রকম একটি খবর পেয়ে আমরা তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়েছিও৷ এই টিমের সদস্যদের জন্য তিনটি গাড়ি এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিকসহ সবকিছু সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তত রাখা হয়েছে৷’’

কী ধরনের অভিযোগ আসে?

অভিযোগকরীরা ভূমি দখল, মাদক ব্যবসা, পুলিশ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য সেবা, পাসপোর্ট, ভিজিএফ, কাবিখা, কাবিটাসহ সরকারি ত্রাণ কার্যক্রম ও নিয়োগের ব্যাপারে অভিযোগ জানাচ্ছেন৷ এমনকি গৃহকর্মী নির্যাতনের খবরও দেয়া হয়৷ তবে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ করা হয় জমিজমা নিয়ে৷ জমি দখল, জমি উদ্ধার, জাল দলিলপত্র প্রভৃতি৷ কেউ কেউ তাৎক্ষণিক সমাধানও চান৷ কিন্তু দুর্নীতির বাইরে কোনো অভিযোগ নেয়ার সুযোগ থাকে না৷

প্রণব কুমার ভট্টাচার্য জানান, ‘‘কিন্তু আমরা মানুষকে নিরুৎসাহিত করি না৷ আমরা ধৈর্যের সঙ্গে অভিযোগ শুনি এবং কোনো পরামর্শ থাকলে তা তাঁদের জানিয়ে দিই৷ কোন অভিযোগ কোথায় করতে হবে তার পরামর্শও দিই৷ অভিযোগ শুনে আমার মনে হয়েছে বাংলাদেশের মানুষ জমিজমা নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় আছে৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমাদের নীতি হলো, কোনো অভিযোগকারীর সাথে খারাপ ব্যবহার করা যাবে না৷ কেউ খারাপ আচরণ করলেও, আমরা কেউ খারাপ ব্যবহার করবো না৷ বিনয়ের সাথে কথা বলবো৷ শুনবো বেশি, বলবো কম৷’’

যত জন কল করবেন সবার কল ডকুমেন্ট ফোন নম্বরসহ কম্পিউটারে থাকছে: রাজিব আহসান

দুদকের সিস্টেম এনালিস্ট রাজিব আহসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের এই হটলাইন সিস্টেমটি পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয়৷ যতজন কল করবেন সবার কল ডকুমেন্ট করা হবে৷ অর্থাৎ ফোন নাম্বারসহ কম্পিউটারে থেকে যাবে৷ আমরা এ পর্যন্ত ৮,২০০ জনের কল রিসিভ করে কথা বলেছি৷ বাকিদের কল রিসিভ করা হয়নি৷ মোট ২০ জন কর্মকর্তা কাজ করলেও প্রতি শিফটে কাজ করেন পাঁচজন৷ ফলে জনবল একটা বিষয়৷’’

তিনি বলেন, ‘‘আমরা বুঝতে পারছি মানুষ সরাসরি অভিযোগ জানাতে চায়৷ আর দুদকের প্রচলিত পদ্ধতিতে অভিযোগ করা অনেক জটিল৷ লিখতে হয়, সশরীরে আসতে হয়, জমা দিতে হয়৷ অথচ হটলাইন সিস্টেমে কোনো ঝামেলা নেই৷ কল করে মুখে অভিযোগ জানালেই হলো৷ এরপর তা দেখার কাজ আমাদের৷ তবে মানুষ এমন অনেক অভিযোগ করে, যা আমাদের কাছে করার কথা নয়৷ আসল কারণ হলো তারা অভিযোগ করার জায়গা পাচ্ছে না৷ এবার সুযোগ পেয়ে এখানেই সব অভিযোগ করছে৷’’

প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এটা দুর্নীতি দমনে কতটা সহয়ক হবে, সেটা পরের প্রশ্ন৷ তবে দুর্নীতি দমনে নাগরিকের সঙ্গে দুদকের সরাসরি যোগাযোগ অপরিহার্য৷ এই হটলাইন সেই সুবিধা করে দিচ্ছে৷’’

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য