1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হাঁটার গতি গাড়ির গতি একই!

২০ মে ২০১৮

রাজধানী ঢাকায় যানজটের কারণে প্রতিদিন ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়৷ আর এই যানজটে বছরে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩৭ হাজার কোটি টাকা, যা জাতীয় বাজেটের ১১ ভাগের এক ভাগ৷ বুয়েটের গবেষণায়এই তথ্য উঠে এসেছে৷

https://p.dw.com/p/2y28A
Bangladesch Stau in Dhaka
ছবি: AFP/Getty Images/M. Uz Zaman

শনিবার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের(বুয়েট) অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউট (এআরআই) এবং রোড সেফটি ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এই তথ্য জানান ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোয়াজ্জেম হোসেন৷ তিনি বলেন, ‘‘নগরের যানজট যদি ৬০ শতাংশ কমানো যায় তবে ২২ হাজার কোটি টাকা বাঁচানো যাবে৷''

তিনি তাদের গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য উল্লেখ করে বলেন, ‘‘ঢাকায় যানজটের কারণে পিক আওয়ারে গণপরিবহনগুলোর গতিবেগ ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটারে নেমে এসেছে, যেখানে পায়ে হেঁটে চলার গড় গতিও ৫ কিলোমিটার৷'' তার মানে হল পিক আওয়ারে গাড়ির গতি এবং হাঁটার গতি একই

‘যখন দেখে আইন অমান্য করলেই ভাল, তখন আইন মানতে চাইবে না’

১২ বছর আগেও এই গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার৷ ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকার ফলে যাত্রীদের মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে৷ এই চাপ আবার কাজ করছে অন্যান্য রোগের উৎস হিসেবে৷ যানজট ৯ ধরনের মানবিক আচরণকে প্রভাবিত করছে৷

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিউটের অধ্যাপক ডা.তাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যানজটের কারণে মানুষের ধৈর্য এবং সহনশীলতা কমে যাচ্ছে৷ মানুষের মধ্যে খিটখিটে ভাব কাজ করছে৷ অল্পতেই মানুষ উত্তেজিত হয়ে পড়ছে৷ এ কারণে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা জাতীয় রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ৷ কেউ কেউ হিংস্র আচরণও করেন৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘এটা মানুষকে আইন এবং রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থার প্রতিও বীতশ্রদ্ধ করে তুলছে৷ মানুষের মধ্যে আইন অমান্য করার প্রবণতা বাড়ে৷ কারণ মানুষ যখন দেখে আইন অমান্য করলেই ভাল থাকা যায়, তখন সে আইন মানতে চাইবে না৷''

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো গবেষণা নাই৷ তবে আমরা দীর্ঘ পর্যবেক্ষণে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর যানজটের এই নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করছি৷''

প্রতিমাসেই এখন এআরআই ঢাকার যানবাহন, সড়ক দুর্ঘটনা, যানজটের নানা দিক নিয়ে সেমিনার ও আলোচনার আয়োজন করে৷ গত মার্চে আরেকটি সেমিনারে একই গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘‘২০১৫ সালের সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি) অনুযায়ী, ঢাকায় দৈনিক প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ যাত্রা (ট্রিপ) হয়৷ একজন মানুষ কোনো একটি বাহনে উঠে নির্ধারিত গন্তব্যে নামলে একটি যাত্রা বা ট্রিপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ বর্তমানে যানজটে দৈনিক ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে৷ ঢাকা শহরে গণপরিবহনগুলা প্রতিদিন ৩৬ লাখ ট্রিপে ৩৫ শতাংশ যাত্রীকে কর্মক্ষেত্রে নিয়ে যায়৷''

‘প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা’

যানজটের আর্থিক ক্ষতি নিয়ে নানা ধরণের গবেষণা হয়েছে৷ ২০ হাজার থেকে ৫৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক ক্ষতির হিসাব দেয়া হচ্ছে৷ তার সেইসব হিসেবের গড় করে এআরআই যানজটের কারণে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বছরে ৩৭ হাজার কোটি টাকা বলে হিসেব করেছে৷ সড়ক খাতে বিনিয়োগ, যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও যানজট নিরসনে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এই ক্ষতির অন্তত ৬০ শতাংশ বা ২২ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব৷

এআরআই -এর অধ্যাপক ড. মোয়াজ্জেম হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ঢাকার গণপরিবহণ ব্যবস্থায় একটা নৈরাজ্য চলছে৷ এখানে গণপরিববহণের দিকে কারুর নজর নাই৷ বলা হচ্ছে তুমি যেভাবে পার ব্যবসা করো৷ কোনো সাবসিডি নাই৷ ফলে নিম্নমানের পরিবহণ ও চালক দিয়ে চলে গণপরিবহণ ব্যবস্থা৷ এই জনপরিবহণ দেখার জন্য ন্যূনতম লোকবলও নাই৷ নাই দক্ষ প্রতিষ্ঠান৷''

তিনি বলেন, ‘‘এর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা৷ সেটা না হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে৷''

গত বছর বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১০ বছরে ঢাকায় যান চলাচলের গড় গতি ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার থেকে ৭ কিলোমিটার পর্যন্ত নেমে এসেছে৷ যানজটের কারণে বাংলাদেশের রাজধানীতে প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে৷

আর পরিবেশ আন্দোলন বাংলাদেশের ২০১৪ সালের এক গবেষণায় দেখানো হয়, যানজটের কারণে দিনে ৮০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়৷

সড়ক ও জনপথ বিভাগের ২০১৩ সালে তার এক গবেষণায় দেখানো হয়, শুধু যানজটে কর্মঘণ্টা নষ্টের জন্য বছরে ক্ষতি হয় ১২ হাজার কোটি টাকা৷

‘বড় কারণ হল ব্যক্তিগত যানবাহন’

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস-এর অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যানজটের কারণে অর্থিক ক্ষতি নিয়ে আরো অনেক গবেষণা আছে৷ কিন্তু আমরা দেখেছি ঢাকা শহরে যনজটের নানা কারণের মধ্যে একটি বড় কারণ হল ব্যক্তিগত যানবাহন (প্রাইভেট কার)৷ এই প্রাইভেট কার ব্যবহারের কারণে কম সংখ্যক মানুষ বেশি সড়ক ব্যবহার করছে৷ মাত্র চারজনের জন্য একটি প্রাইভেটকার যে পরিমান সড়ক ব্যবহার করে, গণপরিবণ ওই একই পরিমাণ সড়ক দখল করে ৬০ জন যাত্রী পরিবহন করে পারে৷ তাই আমরা যদি গণপরিবহণ ব্যবস্থা উন্নত করতে পারি তাহলে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার কমবে এবং যানজটও কমবে৷''

তিনি বলেন, ‘‘গণপরিবহণ ব্যবস্থা ভালো নয় বলেই অনেকে ধার করে বা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে একটি ব্যক্তিগত পরিবহণ কিনছেন৷ তিনি তাতে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি না হয়ে আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘গণপরিবহনের জন্য এখন মেট্রোরেলের কাজ চলছে৷ এটা হয়তো কিছুটা সমাধান দেবে৷ কিন্তু আরো বিকল্প গণপরিবহণ দরকার৷ আর দরকার রাস্তা প্রশস্ত করা৷ আর এটা চাইলেইতো সম্ভব হয়না৷ তাই ঢাকার নৌপথ কার্যকরভাবে ব্যবহার করা দরকার৷''

এ বিষয়ে আপনার মতামত জানান৷ লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য