হারিয়ে যাচ্ছে বেশিরভাগ বীজ
২৪ আগস্ট ২০২২বিজ্ঞান এখন পর্যন্ত চার লাখ প্রজাতির উদ্ভিদের সন্ধান পেয়েছে৷ এর ১০ ভাগেরও কম খাবার উপযোগী৷
ভূট্টা, চাল ও গম পৃথিবীর অর্ধেরও বেশি খাদ্যের যোগান দেয়৷ যখন থেকে মানুষ স্থির জীবন বেছে নিয়েছে, তখন থেকে এসব শস্যের বীজ সংগ্রহ শুরু করেছে৷ ১০ হাজার বছরেরও আগে প্রথম মেসোপটোমিয়া অঞ্চল বা এখনকার ইরাক ও তুরস্কে প্রথম শস্য চাষ করা হয়৷ তখন থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ প্রজাতির শুধু গমই চাষ হয়েছে৷
নানা শস্যের যোগান এবং একটি শস্যের একাধিক জেনেটিক ভিন্নতা আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য জরুরি৷ যত বেশি ভিন্ন প্রজাতির গম বা অন্য শস্য চাষ হবে, তত বেশি কোন রোগের কারণে এই শস্য পৃথিবী থেকে মুছে যাবার ঝুঁকি কম হবে৷
আর তাই বীজ ব্যাংক এত গুরুত্বপূর্ণ৷ সবচেয়ে পুরোনো বীজব্যাংক আছে সেন্ট পেটার্সবুর্গে, এটি স্থাপিত হয় ১৮৯৪ সালে৷ আজ জার্মানির গাটার্সলেবেনের বীজব্যাংকটি পৃথিবীর সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় বীজব্যাংকগুলোর একটি৷
ব্যাংকগুলো বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নানান বীজ ও শস্য সংগ্রহ করে৷ এর অনেকগুলো নরওয়ের স্পিটসব্যার্গেন দ্বীপে বৈশ্বিক বীজ ভল্টে সংরক্ষণ করা হয়৷
তবে মাঠপর্যায়ের ছবিটি উলটো৷ জাতিসংঘ বলছে, ২০ শতকে প্রায় ৭৫ভাগ শস্য প্রজাতি হারিয়ে গেছে৷ এর কারণ অনেক৷
শিল্পপর্যায়ে কৃষি উৎপাদনের কারণে শস্যগুলোকে নানান শর্তপূরণ করতে হচ্ছে৷ তাদের উচ্চফলনশীল হতে হবে, সব একইসময়ে পাকতে হবে এবং বড় বড় যন্ত্র নিয়ে ফসল তোলার সময় যেন কোন ক্ষতি না হয় তেমনভাবে বেড়ে উঠতে হবে৷
আধুনিক বৈশ্বিক ট্রেড নেটওয়ার্কের অর্থ হল দূরপাল্লায় ফল ও সবজি পরিবহণের সময় তা তাজা থাকতে হবে৷ খুব কম প্রজাতিই এসব চাহিদা পূরণ করতে পারে৷ সুপারমার্কেটগুলোতে যা পাওয়া যায় বলে বলা হয়, তার সব সত্য নয়৷ যেমন নানা রকমের টমেটো বা শসা দেখতে ভিন্ন হলেও আসলে জিনগতভাবে তারা প্রায় একই৷
এই জিনগত দৈনতা ঝুঁকিমুক্ত নয়৷ ৭০ এর দশকে একটি ভাইরাস এশিয়াজুড়ে একমেয়াদে সব চালের উৎপাদন নষ্ট করে দেয়৷ এরপর একটি বুনো চালের সঙ্গে এর ক্রস প্রজনন করা হলে সেই ভাইরাসের হাত থেকে চাল রক্ষা পায়৷
হাজারো বছর ধরে চাষীরা বীজ সংগ্রহ করেছেন এবং নিজেদের মধ্যে আদানপ্রদান করেছেন, যাতে উন্নত ও বৈচিত্র্যময় ফলন পাওয়া যায়৷
কিন্তু গেল কয়েক দশকে হাতে গোণা কয়েকটি বীজ কোম্পানি কয়েক ধরনের বীজই সরবরাহ করছে৷ যেমন, ৯৫ ভাগ বাধাকপির ধরন হারিয়ে গেছে৷
এসব কোম্পানি নিজেদের শস্য ডিজাইন করে এবং তার স্বত্ব সংরক্ষণ করে৷ আন্তর্জাতিক বাজারের দুই তৃতীয়াংশ বীজ তাদের দখলে৷ চাষীরা অনেকসময় বীজ সংগ্রহ করতে না পেরে এমনকি নির্দিষ্ট সার ও কীটনাশক কিনতেও বাধ্য হয়৷
তবে বিশ্বজুড়ে এখন শস্য বৈচিত্র্য বাড়ানো এবং স্বত্ব ছাড়া বীজ বিতরণ করার ঝোঁক কিছুটা বেড়েছে৷ যেমন আর্চে নোয়াহ নামের একটি এনজিও পুরোনো বিলুপ্তির ঝুঁকিতে পড়া বীজ সংগ্রহ করছে৷
তারা এই বীজের প্রচার করে এবং সেসব চেইন সুপারমার্কেটের কাছে সরবরাহ করে, যারা বীজ ও তা থেকে উৎপাদিত শস্য বিক্রি করে৷
কর্নেলিয়া বোরমান/জেডএ