বাগদাদের বইপাড়া
১৬ মার্চ ২০১২শহরে কখন যে কোথায় বোমা হামলা ঘটে, তা বলা মুশকিল৷ কিন্তু তা বলে তো সারাদিন বাড়িতে বসে থাকা যায় না! এই অবস্থায় বুদ্ধিজীবীরা মুতানবি স্ট্রিট'এ নিজেদের একটি মরূদ্যান খুঁজে নিয়েছেন৷ শুক্রবার ছুটির দিনে গোটা এলাকার মেজাজ বদলে যায়৷ প্রাচীন বইয়ের দোকানের পাশাপাশি বসে বইয়ের হাট৷ বেচাকেনার পাশাপাশি শোনা যায় আরবি ভাষায় কবিতা আবৃত্তির সুর৷ শাবান্দার কাফে'তে বসে লেবু চায়ে চুমুক দিতে দিতে অনেকে উপভোগ করেন সেই মনোরম পরিবেশ৷ শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব, জাতিগত পার্থক্য ভুলে, অসহিষ্ণুতা ও ঘৃণা সরিয়ে রেখে এখানে মানুষই একমাত্র পরিচয়৷ বইয়ের জগতেই মগ্ন হয়ে থাকেন দোকানদার, ক্রেতা ও পথচারীরা৷ সাদ্দাম হুসেনের আমলে বেশিরভাগ বই ছিল আরবি ভাষায়, নেতার খোশামোদ করে লেখা৷ ছিল কিছু বিদেশি ভাষার বইও৷ গণতান্ত্রিক ইরাকে এখন বইয়ের বৈচিত্র্য অনেক বেড়ে গেছে৷
মুতানবি স্ট্রিট'কে ঘিরে এই পরিবেশ নতুন নয়৷ সেই ১৯৩২ সালে বাদশাহ ফয়জালের আমলে সড়কটি উদ্বোধন করা হয়েছিল৷ দশম শতাব্দীর কবি আবু আল তায়িব আল মুতানবি আজকের ইরাকেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন৷ গোটা আরব জগতের বুদ্ধিজীবীদের আখড়ায় পরিণত হয় এলাকাটি৷ এক কোণে শোভা পাচ্ছে কবির একটি প্রতিমূর্তি৷ রয়েছে তাঁর কাব্য থেকে একটি উদ্ধৃতি – ‘‘মরুভূমি আমাকে ভালোভাবেই চেনে, চেনে রাত্রি ও সশস্ত্র যোদ্ধারা, যুদ্ধ ও তরবারি, কাগজ ও কলম৷''
হিংসায় জর্জরিত ইরাকে মুতানবি স্ট্রিট একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ বা মরূদ্যানের মতো৷ তবে হিংসালীলা থেকে রেহাই পায় নেই এই সড়কও৷ ২০০৭ সালের ৫ই মার্চ এক আত্মঘাতী হামলায় কমপক্ষে ৩০ জন নিহত ও ৬০ জন আহত হয়েছিল৷ রেহাই পায় নি শাবান্দার কাফে'ও৷ নিহতদের মধ্যে ছিলেন কাফের মালিকের ৫ পুত্রও৷ পুত্রশোক সহ্য করতে না পেরে তাঁদের মা প্রথমে অন্ধ হয়ে যান, কয়েক মাসের মধ্যেই তাঁর মৃত্যু হয়৷ শোকের ঢেউ সামলে উঠে ২০০৮ সালে আবার কাফে'টি খোলেন ৮০ বছরের বৃদ্ধ মহম্মদ আল-খাশালি৷
এলাকার মানুষ সুখদুঃখ ভাগ করে নিতে অভ্যস্ত৷ হামলার দিনে পবিত্র শহর নাজাফ'এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিলেন এলাকার একটি বইয়ের দোকানের মালিক আবু রাবেয়া৷ সেখানে পৌঁছে বাগদাদে বোমা বিস্ফোরণের খবর পেলেন৷ হারানো বন্ধুদের কথা ভেবে এখনো কান্নাকাটি করেন তিনি৷ তবে উত্থান-পতন সত্ত্বেও আকর্ষণ হারায় নি মুতানবি স্ট্রিট৷ মানুষ এখনো সেখানে গিয়ে দুদণ্ড শান্তি উপভোগ করে আসেন৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ