হিন্দুত্বের তাস খেলছেন মমতাও
১০ মার্চ ২০২১হলদিয়ায় গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে নন্দীগ্রামে শিবমন্দিরে পুজো দিলেন, আরতি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিছুটা রাস্তা হেঁটে মন্দিরে গেলেন। আর গোটা রাস্তায় ঢাক, ঢোল, শাঁখ বাজল। পুজো দিয়ে বেরিয়ে সামনে থাকা সমর্থকদের পুজোর মিষ্টি দিয়ে দিলেন।
শুধু শিবমন্দিরে পুজো দেওয়াই নয়, মঙ্গলবার নন্দীগ্রামের জনসভায় ভাষণ দেয়ার আগে-পরে তিনি গোটা তিনেক মন্দির, একটি মাজারে যান। আর জনসভায় তিনি দীর্ঘক্ষণ ধরে চণ্ডীপাঠ করেন। মা দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী সহ অনেক দেবদেবীর নাম করেন। তিনি বলেন, হিন্দু ধর্মীয় আচার আচরণের সঙ্গে তার পুরোদস্তুর পরিচয় আছে। তিনি সমাবেশে উপস্থিত মানুষকে বলেন, ''ধর্ম নিয়ে খেলা হবে? লক্ষ্মীমন্ত্র, জগন্নাথমন্ত্র, জগদ্ধাত্রীমন্ত্র হবে?''
এভাবেই পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে হিন্দুত্বের তাস খেললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বললেন, ''যারা ৩০-৭০ করছে তাদের একটু শুনিয়ে দিই। হিন্দু ধর্ম নিয়ে আমার সঙ্গে কম্পিটিশন করুক।'' তারপর মমতার বক্তব্য, ''হিন্দু ধর্ম আমাকে শেখাচ্ছেন? কোনটা চান? চণ্ডীপাঠ করে বাড়ি থেকে বের হই। আমাকে হিন্দুধর্ম শেখাচ্ছে?'' ৩০-৭০ মানে পশ্চিমবঙ্গে ভোটদাতাদের মধ্যে ৩০ শতাংশ মুসলিম এবং ৭০ শতাংশ হিন্দু।
এর আগে বিজেপি-র হিন্দুত্বের মোকাবিলা করতে নরম হিন্দুত্বের পথে হেঁটেছিলেন রাহুল গান্ধী। তিনি বিশেষ সুবিধা করতে পারেননি। মন্দির দর্শন করে ভাষণ দেয়ার কৌশল উত্তর প্রদেশে কাজ দেয়নি। অন্য বেশ কয়েকটি রাজ্যেও নয়। কিন্তু দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরিওয়াল নরম হিন্দুত্বের পথে চলে বিজেপি-র কৌশল বানচাল করে দিয়েছিলেন। ফলে এই পথে বিজেপি-র মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে সাফল্য-ব্যর্থতা দুইই আছে।
মমতার ক্ষেত্রে কী হতে পারে? প্রবীণ সাংবাদিক সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, মমতাকে এই পথে হাঁটতেই হতো। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, মমতার এছাড়া উপায়ও নেই। বিজেপি যেভাবে চড়া হিন্দুত্বের পথে চলছে, তার মোকাবিলা করতে হতো। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার দলের মতে, মুসলিম ভোটের সিংহভাগ আগের মতো তাদের কাছেই আসবে। বিজেপি খুব সচেতনভাবে মমতাকে মুসলিমদের দিকে ঠেলে দিয়ে হিন্দুদের ভোটের সিংহভাগ পেতে চাইছে। জয় শ্রীরাম, রামনবমী, প্রকাশ্যে হিন্দুত্বের বড়াই সে জন্যই। মমতাকেও তাই প্রমাণ করতে হচ্ছে, তিনি হিন্দু বিরোধী নন।
সৌম্যের মতে, মমতা আগে থেকেই এই চেষ্টাটা করছেন। তিনি ইমাম-ভাতা চালু করেছেন, সেই সঙ্গে পুরোহিত ভাতাও। দুর্গাপুজোয় ক্লাবগুলিকে অর্থসাহায্য করছেন। কিন্তু আরেক প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তার মতে, মমতার উচিত ছিল তার আগে ঘোষিত ধর্মনিরপেক্ষতার রাস্তায় থাকা। রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা মন্দিরে মন্দিরে ঘুরে, সন্তদের দরজায় হত্যে দিয়ে পড়েও বিজেপি-কে আটকাতে পারেননি। মমতাও এভাবে হিন্দুত্বের পথে হাঁটলে তাতে বিজেপি-র সুবিধা। কারণ, খেলাটা তখন তাদের পিচে হবে। ভারতজুড়ে বিজেপি প্রমাণ করে দিয়েছে, এই পিচে তারা প্রায় অপ্রতিরোধ্য।
তবে সৌম্য মনে করেন, মমতা যে ভোট পান, সেটা মূলত গ্রামের গরিব মানুষ, কৃষক, খেটে খাওয়া মানুষের। তাদের জন্য তিনি ঢালাও সামাজিক প্রকল্প নিয়েছেন। তার উপর বিজেপি-র হিন্দুত্বের প্রচার ভোঁতা করতে তিনিও হিন্দুত্বের তাস খেলছেন।
এতে মমতা এবং তৃণমূলের লাভ না ক্ষতি সেটা ফলাফল বেরনোর পর বোঝা যাবে, আপাতত ঘটনা এটাই, নন্দীগ্রামে গিয়ে দুই দিন ধরে মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় সমানে হিন্দুত্বের তাস খেলে গেলেন।