১১ বছর কেটে গেলো, কবে শেষ হবে রাইটার্স সংস্কারের কাজ?
২০১৩ থেকে সংস্কারের কাজ শুরু হয়, ১১ বছর পেরিয়েও শেষ হলো না। এখন কেমন চেহারায় আছে রাইটার্স বিল্ডিং?
প্রায় আড়াইশো বছর
কলকাতার কেন্দ্রস্থলে দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় আড়াইশো বছরের পুরনো এই ভবনে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বহু পরিবর্তন হয়েছে। ইউরোপীয় নির্মাণশৈলীতে তৈরি এই বাড়ির নামও বদলেছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। রাইটার্স বিল্ডিং হয়েছে মহাকরণ। আগেও অনেকবার সংস্কারের কাজ হয়েছে, তবে তৃণমূল সরকারের আমলে যে সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছিল, তা আজও শেষ হলো না।
রাইটার্স বিল্ডিংস হলো মহাকরণ
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতালাভের পর রাইটার্স বিল্ডিংস পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রাজ্য সচিবালয়ে পরিণত হয়। এই সময় বাংলায় ভবনটির নামকরণ হয় "মহাকরণ"। যদিও ইংরেজি নাম হিসেবে ‘রাইটার্স বিল্ডিংস’ কথাটিই প্রচলিত।
তৃণমূল আসার পর
দীর্ঘকাল মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মহাফেজখানা সহ রাজ্য সরকারের একাধিক সরকারি বিভাগের প্রধান কার্যালয় এই মহাকরণেই ছিল। ২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার দুই বছর পর ২০১৩ সালে ঐতিহ্যশালী ‘রাইটার্স বিল্ডিঙয়ের সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রশাসনিক কার্যালয় হাওড়ার নবান্নতে স্থানান্তরিত করা হয়।
জড়িয়ে আছে ইতিহাস
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাইটারদের(জুনিয়র ক্লার্ক) জন্য তৈরি হয় এই ভবন। স্বাধীনতার আগে ও পরে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে যুক্ত এই ভবন। এই ভবনের পরতে পরতে জড়িয়ে আছে ইতিহাস। ১১ বছর ধরে সংস্কারের কাজ চললেও আজও কেন তা সম্পূর্ণ হলো না।
মুছে গেছে অধ্যায়?
প্রফুল্ল ঘোষ, বিধান চন্দ্র রায়, প্রফুল্ল সেন, অজয় মুখোপাধ্যায়, সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়, জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মতো মুখ্যমন্ত্রীরা তাদের কার্যকালের পুরোটাই এই ভবন থেকে পরিচালনা করেছেন। তাদের ব্যবহৃত চেয়ার, টেবিল, ল্যান্ডলাইন টেলিফোন — কোনোকিছুরই চিহ্ন নেই আজ। বিরোধীদের দাবি, ইতিহাসের একটা অধ্যায় মুছে ফেলতে চাইছে বর্তমান প্রশাসক।
আরো জীর্ণ অবস্থা
২০১৩ সালে সংস্কার শুরু হয় মহাকরণের, অস্থায়ী ভাবে প্রশাসনিক কার্যালয় গঙ্গা পেরিয়ে নবান্নে চালু হলেও কথা ছিল সংস্কারের পর কিছুদিনেই আবার মহাকরণে ফিরবে সব। কিন্তু, সেই থেকে দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেছে এগারোটা বছর। আরও জীর্ণ হয়েছে কলকাতার অন্যতম ঐতিহ্যশালী এই ভবন।
মমতা আর ফেরেননি
একটা সময় অনেকের কাছেই মহাকরণ ‘লালবাড়ি’ নামে পরিচিত ছিল। সংস্কারের কাজ শুরু হওয়ার পর পেরিয়ে গিয়েছে দু’টো বিধানসভা ভোট। কিন্তু ‘লালবাড়িতে’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর ফেরেনি। তার প্রশাসনিক ঠিকানা এখনও সেই গঙ্গার ওপারের নবান্ন। সেখানে গড়ে উঠেছে সারি সারি নীল-সাদা সরকারি দফতর।
ক্যান্টিন শ্রমিকের কথায়
মহাকরণে যে সংস্কারের কথা বলা হয়েছিল, তা দীর্ঘ এগারো বছরেও শেষ হল না কেন? অনেকের মনেই প্রশ্ন। অনেকে আবার ভুলেতেও বসেছেন। ৪৬ বছর ধরে মহাকরণের ক্যান্টিনে কাজ করছেন পূর্ণচন্দ্র প্রধান। জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আমল দেখেছেন এই ক্যান্টিনে বসেই। একটা সময় গমগম করত এই ক্যান্টিনগুলো, আজ মাত্র কয়েকটি দপ্তর চালু আছে, হাতে গোনা কিছু মানুষ খেতে আসেন।
আর কতদিন লাগবে?
আর কবে শেষ হবে এই সংস্কারের কাজ? উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, সংস্কারের কাজ অনেকদিন ধরেই থমকে! দেড় বছর ধরে রাইটার্স বিল্ডিংয়ে সংস্কারের কাজ বিশেষ হচ্ছে না।
কতটুকু কাজ হয়েছে?
২০২১ সালে ব্লক ওয়ান এবং ব্লক টু-সহ মেন ব্লকের কিছু অংশে কাজ শেষ হয়ে গেছে। কাজ বাকি রয়েছে মেন ব্লকের আরেকটি অংশে। এছাড়াও কাজ বাকি রয়েছে, ব্লক ৩, ব্লক ৪, ব্লক ৫ এর।
বিরোধীদের অভিযোগ
কানেক্টিং ব্লক এবি,ইএফ ভাঙা হলেও সি, ডি, জি এখনও ভাঙা বাকি রয়েছে। এগারো বছরে সংস্কারের কাজ শেষ হল না কেন? তা নিয়ে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে সিপিএম। কয়েক ধাপ এগিয়ে বিজেপির নেতা অর্জুন সিং অভিযোগ করেছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই মহাকরণ বেচে দেওয়ার চেষ্টা করছেন, ঠিক যেমন তিনি আলিপুরের জেল বেচে দিয়েছেন।”
প্রশাসনের দাবি
প্রশাসন সূত্রে দাবি, তারা কোনও তাড়াহুড়ো করতে চাইছে না। ভবিষ্যতে রাইটার্স বিল্ডিংকে কীভাবে ব্যবহার করা হবে সেই নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে।
'হৃদয় উপড়ে নিয়েছে'
অনুপম ভট্টাচার্য চাকরি জীবন শুরু করেছিলেন রাইটার্সের ই ব্লকে, শ্রম দপ্তরে। এখন তিনি নবান্নতে বসেন। সেই ই ব্লক ভেঙে ফেলা হয়েছে। অনুপম বললেন, ''মনে হয় হৃদয় উপড়ে নিয়েছে। সন্ধ্যার পর গেলে মনে হবে হানাবাড়ি।
'ধরা থাক কলকাতার বিবর্তন ও পুরনো বই'
ইতিহাসবিদ, লেখক, সম্পাদক অধ্যাপক অভ্র ঘোষের প্রস্তাব, রাইটার্স বিল্ডিংয়ে করা হোক একটা পুরনো বইয়ের লাইব্রেরি। আর সেখানে ধরা থাক কলকাতার একটা গ্রাম থেকে মহানগর হয়ে ওঠার বিবর্তনের ইতিহাস। গ্রাফিক্সের মাধ্যমেও সেই ইতিহাস ধরে রাখা যেতে পারে।