২০১৭ সালের জীবজন্তু
প্রতিবছর বিভিন্ন পরিবেশ ও অন্যান্য বিজ্ঞানভিত্তিক সংগঠন বিশেষভাবে বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর নাম ঘোষণা করে৷ ২০১৭ সালের প্রাণীরা হলো...
চোরকুঠুরির ভক্ত
এই ফোর-স্পটেড ইখনয়মন ওয়াস্প বা ভিমরুলটি শীত কাটায় গুহা, খনি কিংবা মাটির তলার ভাঁড়ারে৷ বরফ মুক্ত পরিবেশ ছাড়া এরা বাঁচে না৷ জার্মানির স্পেলিওলজিস্ট বা গুহাবিজ্ঞানীরা এই ভিমরুলটিকে ২০১৭ সালের ‘গুহা প্রাণী’ আখ্যা দিয়েছেন৷
সর্বঘটে
জার্মানির অ্যারাখনোলজিস্ট অর্থাৎ মাকড়শা বিজ্ঞানীরা এই ওয়ালনাট অর্ব-উইভারটির দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছেন৷ এখানে প্রায় সব বাড়ি কি বাগানে এদের দেখতে পাওয়া যায়৷ এরা পুরনো কড়িকাঠ, গাছের ছাল কিংবা মরা গাছের কাঠে থাকতে ভালোবাসে৷ এদের বোনা জালগুলো হয় সুন্দর আর ব্যাসে ৫০ ইঞ্চি অবধি বড়৷
সাপ নয়, কেঁচো
জার্মানিতে ২০১৭ সালের সরীসৃপ হলো এই ব্লাইন্ডওয়র্ম নামের কেঁচো৷ এদের সাপ ভেবে অনেকেই মারতে বসেন! নাম ব্লাইন্ডওয়র্ম বা কানা কেঁচো হলেও, এরা কানা নয় - তবে নিরীহ ও নির্বিষ৷ তাদের নামের মধ্যে ব্লাইন্ড বা (জার্মানে) ‘ব্লিন্ড’ কথাটি এসেছে সাবেক আমলের জার্মান থেকে, যখন এর মানে ছিল মাছের আঁশের মতো ছোট ছোট লোহার পাত দিয়ে তৈরি যুদ্ধের পোশাক৷
‘টনি’ বা তামাটে পেঁচা
২০১৭ সালের পাখি হলো ‘টনি আউল’ বা তামাটে পেঁচা৷ এরা সাধারণত গাছ কিংবা বাড়ির গায়ের ফুটোফাটাতে বাসা বাঁধে৷ আসলে এরা জঙ্গলে পুরনো গাছের ফোকরে থাকতে ভালোবাসে৷ সেই কারণে জার্মানির পরিবেশ সুরক্ষা সমিতি ‘নাবু’ পুরনো পার্ক আর বনজঙ্গলের সুরক্ষার দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করার উদ্দেশ্যে এই পাখিটিকে বেছে নিয়েছে৷
ইঁদুর, কিন্তু নেংটি নয়...
জার্মানির ২০১৭ সালের ‘বন্যজন্তু’ হলো এই খুদে ‘হ্যাজেল ডরমাউস’ নামের প্রাণীটি৷ শীতকালটা এরা ঘুমিয়ে কাটায়, কিন্তু গরম পড়লেই এদের লাফঝাঁপ শুরু হয়৷ বিশ্বাস করা শক্ত, এই একরত্তি প্রাণীটি আজ বিপন্ন৷ তাই জার্মান বন্যপ্রাণী নিধি ঠিক এই প্রাণীটিকেই নির্বাচন করেছে৷
চাঁদামাছের মতো...
জার্মান মৎস্যশিকারী সমিতি এই ‘ফ্লাউন্ডার’ মাছকে ‘২০১৭ সালের মাছ’ নির্বাচন করেছেন৷ এই মাছ প্রধানত বালটিক আর উত্তর সাগরের সমুদ্রগর্ভে দেখতে পাওয়া যায়৷ সৌখিন মাছ-ধরিয়েরা সাগরের দূষণ ও সাগরে নির্মাণকার্যের বিপদ সম্পর্কে সচেতন করে দিতে চান৷
লাল প্যান্ট পরা মৌমাছি
জার্মানির বুনো মৌমাছির তালিকা সংগঠন এই ‘মাইনিং বি’-কে ২০১৭ সালের মৌমাছি নির্বাচিত করেছে৷ ‘লাল প্যান্ট’ পরা মৌমাছিটি যে পরাগের প্যাক বহন করে, তার রঙও লাল! মাত্র তিন ধরনের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে এই অপরূপ প্রাণীটি৷
পতঙ্গ, নাকি শাঁকচুন্নি?
এই হলো সেই প্রেয়িং ম্যান্টিস, যাকে দেখলে মনে হবে যেন সে প্রার্থনা করছে৷ আসলে রয়েছে শিকার ধরার অপেক্ষায়৷ মুশকিল এই যে, সেই শিকারের মধ্যে নিজের স্বামীটিও পড়েন৷ যৌনমিলন সম্পন্ন হবার পরেই স্ত্রী ম্যান্টিস পুরুষ ম্যান্টিসটিকে খেয়ে ফেলে! এই কারণে তাদের ‘নাম খারাপ’ বলেই এবার প্যানেল এই অদ্ভুত জীবটিকে ২০১৭ সালের পতঙ্গের ‘সম্মান’ দিয়েছেন৷
সুন্দরী ফড়িং
জার্মানির ওডোনাটোলজিস্ট বা ফড়িং বিশেষজ্ঞরা এই সাধারণ ‘ক্লাবটেইল’ ফড়িংটিকে ২০১৭ সালের ফড়িং হিসেবে নির্বাচন করেছেন৷ বহু কীটপতঙ্গ নদী-খাল-ঝর্ণার কাছে ছাড়া বাঁচতে পারে না৷ বিশ বছর আগেও এরা জার্মানিতে বিপন্ন বলে গণ্য হতো৷ ছোট ছোট ঝর্ণা ও নদী সুরক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া পরে তাদের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে৷
‘ফিকে মেঘাচ্ছন্ন হলুদ’
এই হলো এই প্রজাপতিটির নাম, যদিও ফিকেই বা কেন আর মেঘই বা এলো কোথা থেকে, তা বোঝা দায়৷ যা-ই হোক, এরা হলো ২০১৭ সালের প্রজাপতি৷ এরা ফুলে ভরা মাঠপ্রান্তর ভালোবাসে৷ বিশেষ করে আলফালফা আর ক্লোভার ঘাসের ফুল পছন্দ করে এরা৷ আধুনিক কৃষিকাজই এদের যম হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
প্রতিবেদন: ফাবিয়ান স্মিট/এসি
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী