‘এখনও টিকার প্রক্রিয়ায় ‘স্কয়ার’ যুক্ত হয়নি’
৩০ এপ্রিল ২০২১ডয়চে ভেলে: টিকা নিয়ে কী স্কয়ার কোনো কাজ করেছে?
আহমেদ কামরুল আলম : আমাদের টিকার ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্ট এই মুহূর্তে নেই৷ কিন্তু ভবিষ্যতে এই টিকার প্রয়োজনীয়তা থেকে যাবে বলে আমরা মনে করছি, সে কারণে প্রাথমিক প্রস্তুতির বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা চলছে৷ এই মুহুর্তে স্কয়ার হাউজে করোনার ভ্যাকসিন আসার সম্ভাবনা কম৷
টিকা নিয়ে আপনাদের পরিকল্পনাগুলো কেমন?
সামনে যে টিকাগুলো আসছে, সেদিকে আমাদের নজর আছে, আমরা খোঁজ-খবর রাখছি৷ এই টিকাগুলোর মধ্যে কোনটা আমাদের জন্য সঠিক হবে বা সেগুলোর ম্যানুফ্যাকচারিং কমপ্লায়েন্স কতটুকু, সেটা নিশ্চিত করে আমরা মুভ করতে পারি, সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের বৈজ্ঞানিক পর্যায়ে আলোচনা চলছে৷ আমাদের রিসার্চার যারা আছেন, তারা এগুলো নিয়ে গবেষণা করছেন৷
টিকা নিয়ে সরকার বা বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনার কোনো উদ্যোগ কি আপনারা নিয়েছেন?
একদম স্ট্র্যাটেজিক পয়েন্টে আমাদের কোনো প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে সেটা আমি বলবো না৷ কিন্তু বিভিন্ন স্টাডি পর্যায়ে আমাদের আলোচনা শুরু হয়েছে৷ টিকার কার্যকারিতা বা আমাদের সক্ষমতা নিয়েও নিজস্ব আলোচনা চলছে৷
টিকা নিয়ে আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আমরা শুধু করোনার ভ্যাকসিনের বিষয়টিই মাথায় রাখছি না, অন্যান্য ডিজিজের বিষয়েও আমাদের কাজ চলছে৷ সামগ্রিকভাবেই আমরা ভাবছি যে, দেশের জনগণের জন্য অন্যান্য ডিজিজকে সামনে রেখে কিভাবে ভ্যাকসিন দেওয়া যায়, সেগুলো নিয়ে আমাদের নিজস্ব চিন্তা -ভাবনা এখনো আছে৷ কিন্তু সেগুলো এখনো প্রকাশ করার মতো বড় আকারে কিছু হয়েছে, সেটা আমরা বলছি না৷
এখন তো টিকা আনার নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ এর কোনো প্রক্রিয়ার সঙ্গে কি স্কয়ার যুক্ত হয়েছে?
আমরা এখনো পরিষ্কারভাবে কারো সঙ্গে যুক্ত হইনি৷ কিন্তু যে বলছিলাম, আমাদের নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে৷
রাশিয়া তো বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে টিকা উৎপাদনে আগ্রহী৷ স্কয়ারের কি এই ধরনের কোনো আগ্রহ আছে বা সক্ষমতা আছে?
আমাদের সরাসরি ভ্যাকসিন ম্যানুফ্যাকচারিং সক্ষমতা নেই৷ কিন্তু আমরা যদি পরিকল্পনা স্থির করি, তাহলে সেটা করতে পারবো৷ সেক্ষেত্রে আমরা সক্ষমতা অর্জন করবো৷ এই মুহূর্তে যেহেতু আমাদের ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট নেই, তাই আমাদের বিষয়গুলো আলোচনার পর্যায়েই আছে৷
বাংলাদেশে কি টিকা উৎপাদনে কোনো প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা আছে?
হ্যাঁ, সক্ষমতা আছে৷ এর মধ্যে একটি সরকারি এবং দু'টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের৷
স্কয়ারের সামনে এমন সুযোগ এলে সেটা কাজে লাগাতে আগ্রহী?
অবশ্যই৷ আমরা হেলথ কেয়ার ইন্ডাস্ট্রিতে আছি৷ জনগণের উপকারের জন্য যে কোনো ধরনের উদ্যোগ, অর্থাৎ, সেটা টিকা হতে পারে, ওষুধ হতে পারে, আমরা অবশ্যই সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করবো৷
এখন তো টিকার বাজার উন্মুক্ত৷ আপনারা কি আমদানির ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন?
সরকারের অনুমতি একটা ভালো দিক৷ কিন্তু উৎপাদন সক্ষমতা একটা বড় ব্যাপার৷ আমারা যেহেতু উৎপাদন সক্ষমতা তৈরি করিনি, তাই নিজেরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছি যে, আমরা কীভাবে এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারি৷ আমদানির ব্যাপারে আমাদের ইচ্ছা আছে৷ কিন্তু আমাদের আরো স্টোরেজ সুবিধা, মূল্য, সরকারি যোগাযোগসহ অনেক কিছু ভেবে এগিয়ে যেতে হবে৷
করোনার নুতন ভেরিয়েন্টের জন্য পৃথক টিকার কী প্রয়োজন? আপনাদের গবেষণা কী বলছে?
বিশ্বের বাজারে যেগুলো আছে, সেগুলোই এখন পর্যন্ত কার্যকর৷ বাংলাদেশের জনগণের উপর এই টিকাগুলোই কার্যকরী বলে আমরা রিসার্চ পেপার থেকে জেনেছি৷ সুতারং, এই মুহূর্তে নতুন কোনো আবিস্কারের প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করছি না৷ ইতিমধ্যে আবিষ্কৃত টিকাগুলোর প্রতিটিই কার্যকর বলে আমরা জেনেছি৷
বলা হচ্ছে, কেউ অক্সফোর্ডে একডোজ টিকা নিলে অন্য কোম্পানির আরেক ডোজ নিতে পারবেন না৷ আপনাদের বিজ্ঞানীরা কী বলছেন?
বিভিন্ন জার্নালে যে তথ্যগুলো এসেছে, সেগুলোর উপর নির্ভর করে মন্তব্য করতে হচ্ছে৷ আমরা যেটা জেনেছি, প্রথম ডোজের টিকা যে কোম্পানি থেকে দেওয়া হয়েছে, দ্বিতীয় ডোজও সেই কোম্পানির দেওয়া সর্বদিক থেকে নিরাপদ ও কার্যকরী৷
রাশিয়ার যে টিকা আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, এটার ব্যবস্থাপনা কি অক্সফোর্ডের টিকার মতোই, নাকি আলাদা ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন?
আলাদা কোনো ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন নেই বলেই আমি জানি৷ এটার ব্যবস্থাপনা অক্সফোর্ডের মতোই৷
টিকা নিয়ে আপনাদের সর্বশেষ অবস্থা কী?
আমরা নিজেরা আলোচনা করছি, যথোপযুক্ত সময়ে আমরা এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবো৷
রেমডিসিভিরসহ করোনার যে ওষুধ, সে ব্যাপারে স্কয়ারের কাজ কতখানি?
প্রথম দিন থেকেই ওষুধের ব্যাপারে অত্যন্ত আগ্রাসীভাবেই কাজ করেছি আমরা৷ আমরা বিজ্ঞানীদের যুক্ত করে সর্বোচ্চ কম সময় যাতে লাগে, সেটা নিশ্চিত করে ইতিমধ্যে বাজারজাত করেছি৷ রেমডিসিভির তার মধ্যে অন্যতম৷ এছাড়াও সেভিপ্রাজিল, হাইড্রোকোরোকুইনসহ যতগুলো ওষুধ জরুরি ভিত্তিতে অনুমতি পেয়েছে বিশ্বে প্রতিটি স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল বাজারজাত করেছে এবং এখনো করে যাচ্ছে৷ রেমডিসিভির থেকে শুরু করে করোনা চিকিৎসাকে সাহায্য করে এমন ওষুধ আমরা বাজারজাত করছি৷
স্কয়ার যে ওষুধগুলো বাজারজাত করেছে, সেগুলো দেশি বাজারের জন্য, নাকি আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য?
সবার আগে দেশের মানুষের স্বার্থ লক্ষ্য রাখতে হয়৷ দেশের বাজারের চাহিদা নিশ্চিত করার পর আমরা আন্তর্জাতিক বাজারের কথা চিন্তা-ভাবনা করছি৷
বিশ্বের কয়টি দেশে আপনাদের এই ওষুধগুলো চলছে?
শুধু করোনার ওষুধ নয়, অন্যান্য ওষুধও তো আমরা রপ্তানি করছি আনুমানিক ৩০ থেকে ৪০টি দেশে চলছে৷
আমরা দেখছি, ভারতে রেমডিসিভিরের চাহিদা অনেক বেশি৷ অনেক বেশি দামেও সেখানে পাওয়া যাচ্ছে না৷ সেখানে কি আপনারা রপ্তানি করছেন?
না, ভারতে এই মুহূর্তে আমরা রপ্তানি করছি না৷
দেশের বাজারে কি রেমডিসিভিরের কোনো ঘাটতি আছে?
আমার জানা মতে, কোনো ঘাটতি নেই৷ আমি যেটা বলতে চাই, করোনার ওষুধ বলেন, টিকা বলেন, সেটার দরকার হয় আমি যখন আক্রান্ত হবো৷ কিন্তু স্কয়ার উদ্যোগ নিয়েছে, আমরা যেন করোনায় আক্রান্ত না হই৷ অর্থাৎ, করোনা যেন আমাদের আক্রমণই না করতে পারে সে পদক্ষেপ আমাদের আছে৷ এই কারণে আমাদের গ্রুপ থেকে আমরা ফেসমাস্ক বাজারে দিচ্ছি৷ এছাড়া সচেতনতামূলক কাজও আমরা করছি৷ তবে করোনা হয়ে গেলে ওষুধ বা টিকার বিষয়টি আসে বটে৷