1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি

৩০ এপ্রিল ২০২১

বাংলাদেশে যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন তাদের মধ্যে অন্তত ১৩ লাখের জন্য দ্বিতীয় ডোজের টিকার ব্যবস্থা এই মুহূর্তে নেই ৷ তাদের জন্য দ্বিতীয় ডোজের টিকা সংগ্রহই এখন বড় চ্যালেঞ্জ৷

https://p.dw.com/p/3soSr
বাংলাদেশে যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন তাদের মধ্যে অন্তত ১৩ লাখের জন্য দ্বিতীয় ডোজের টিকার ব্যবস্থা এই মুহূর্তে নেই ৷
বাংলাদেশে যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন তাদের মধ্যে অন্তত ১৩ লাখের জন্য দ্বিতীয় ডোজের টিকার ব্যবস্থা এই মুহূর্তে নেই ৷ ছবি: Mortuza Rashed/DW

এরা সবাই নিয়েছেন ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি  অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা৷ কিন্তু সেরামের কাছ থেকে প্রতিশ্রুত টিকা পাওয়ার সুনির্দিষ্ট কোনো আশ্বাস মেলেনি এখনো৷

তাই রাশিয়া ও চীন থেকে ৪৫ লাখ ডোজ টিকা আসার কথা থাকলেও বাংলাদেশ অন্তত ২০ লাখ ডোজ অক্সফোর্ডের টিকার জন্য হন্যে হয়ে বিভিন্ন দেশের সাথে যোগাযোগ করছে৷ কিন্তু প্রতিশ্রুতি মেলেনি এখনো৷ অন্যদিকে দ্বিতীয় ডোজের জন্য অক্সফোর্ডের টিকাই লাগবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা৷ কারণ, দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে অন্য ব্র্যান্ডের টিকা দেয়ার বিষয়টি এখনো অনুমোদিত বা পরীক্ষিত নয়৷

বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি করা অক্সফোর্ডের টিকা হাতে পেয়েছে এক কোটি তিন লাখ ডোজ৷ দুই ডোজ করে এই টিকা ৫১ লাখ ৫০ হাজার মানুষকে দেওয়া সম্ভব৷

মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান

সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে বাংলাদেশ বেক্সিমকোর মাধ্যমে তিন কোটি ডোজ অক্সফোর্ডের টিকা কেনার চুক্তি করে৷  চুক্তি অনুাযয়ী প্রথম চালানের ৫০ লাখ টিকা আসে গত জানুয়ারি মাসে৷ ফেব্রুয়ারি মাসে আসে ২০ লাখ৷ এরপর সেরাম আর কোনো টিকা পাঠায়নি৷ কথা ছিল প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা পাঠাবে তারা৷

এই চুক্তির বাইরে ভারত সরকারের কাছ থেকে শুরুতেই ২০ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে পায় বাংলাদেশ৷ এছাড়া নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরের সময় উপহার হিসেবে আসে আরো ১২ লাখ৷ ভারতের সেনা প্রধান বাংলাদেশের সেনা প্রধানকে উপহার দিয়েছেন এক লাখ৷

বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে  প্রথম ডোজ টিকা দেয়া শুরু হয় গত ৭ ফেব্রুয়ারি৷ এরপর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া শুরু হয় ৮ এপ্রিল থেকে৷

বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৬১৬ জন৷ দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছেন  ২৮ লাখ পাঁচ হাজার ৯৯৪ জন৷ সব মিলিয়ে ৮৬ লাখ ২৫ হাজার ৩৫০ ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে৷ এখন বাংলাদেশের হাতে আছে ১৬ লাখ ৭৪ হাজার ৬৫০ ডোজ ৷  কিন্তু যারা এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাদের মধ্যে ৩০ লাখ ১৩ হাজার ৬২২ জন দ্বিতীয় ডোজ পাননি৷ ফলে প্রথম ডোজ নেয়া সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দিতে হলে বাংলাদেশের আরো ১৩ লাখ ৩৮ হাজার ৯৭২ ডোজ অক্সফোর্ডের টিকা লাগবে৷ এই পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহে প্রথম ডোজ টিকা দেয়া স্থগিত করা হলেও নানা চাপের কারণে তা পুরোপুরি কার্যকর করতে পারছে না স্বাস্থ্য অধিদপ্তর৷

বাংলাদেশ এখন চেষ্টা করছে যেসব দেশের কাছে অক্সফোর্ডের টিকা মজুদ আছে, সেসব দেশ থেকে কিনে আনতে৷ এজন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক ও অস্ট্রেলিয়াসহ সাতটি দেশের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত আছে৷  স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম মনে করেন, সেরাম না দিলেও ওইসব দেশ থেকে অন্তত ২০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়া যাবে৷ তার মতে, " প্রথম ডোজ নেয়ার সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নিতে হয়৷''

জাহিদ হোসেন

কিন্তু যারা প্রথম ডোজ হিসেবে অক্সফোর্ডের টিকা নিয়েছেন, তাদের দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে অক্সফোর্ডের টিকাই নিতে হবে বলে জানান আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন৷  তবে সেটা সেরামেরই হতে হবে এমন কোনো কথা নেই৷

বাংলাদেশ সেরাম থেকে চুক্তির বাকি দুই কোটি ৩০ লাখ ডোজ টিকা কবে পাবে তা এখন অনিশ্চিত৷ এ নিয়ে সেরাম ইনস্টিটিউটকে ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে মেইল করলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি৷ তবে গত সপ্তাহে সেরামের বাংলাদেশি এজেন্ট বেক্সিমকো ফার্মার চিফ অপারেটিং অফিসার রাব্বুর রেজা ডয়চে ভেলেকে বলেন," আমরাও নিশ্চিত নই৷ তারা কোনো সুনির্দিষ্ট ডেট না দেয়া পর্যন্ত আমরা বলতে পারছি না কবে টিকা পাবো৷ ভারত সরকার আপাতত টিকা রপ্তানি বন্ধ রেখেছে৷

ভরসা চীন রাশিয়া

জরুরি প্রয়োজন মেটাতে বাংলাদেশ রশিয়ার স্পুটনিক ভি এবং চীনের সিনোফর্মের টিকার অনুমোদন দিয়েছে৷  এই দুইটি দেশের সাথে বাংলাদেশের ‘জি টু জি' চুক্তি হয়েছে বলে ডয়চে ভেলকে জানিয়েছেন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান৷  তিনি আশা করেন, দুই সপ্তাহের মধ্যেই চীন থেকে পাঁচ লাখ টিকা পাওয়া যাবে৷ আর রাশিয়া থেকে পাওয়া যাবে ৪০ লাখ জুন মাসের মধ্যে৷ তবে এই টিকার দাম কেমন হবে তা এখনো ঠিক হয়নি বলে জানান তিনি৷

তিনি বলেন, "আগে শুধু অক্সফোর্ডের টিকার জরুরি অনুমোদন ছিল৷ এখন আরো দুটি টিকা অনুমোদন দেয়া হলো৷ আমরা আরো টিকার অনুমোদন দেবো৷''

চীন ও রাশিয়ার টিকা বাংলাদেশে উৎপাদনের অনুমতিও দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি৷ আর সেটা বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানই তাদের সহায়তায় উৎপাদন করবে৷

ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন

বাংলাদেশের তিনটি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রাশিয়া ও চীনের টিকা উৎপাদন করবে বলে জানা গেছে৷ সেগুলো হলো ইনসেপ্টা, পপুলার ও হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস৷ ইনসেপ্টার কান্ট্রি ম্যানেজার (সেলস) জাহিদ হোসেন বলেন, ‘‘আমাদের ওই টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা সম্পন্ন প্ল্যান্ট আছে৷ তবে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু এখনো জানানো হয়নি৷” তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, "ইচ্ছা অনিচ্ছার বিষয় নয়, দেশের প্রয়োজনে আমরা কাজ করতে প্রস্তুত আছি৷''

উৎপাদনে যেতে চায় গ্লোব বায়েটেক

বাংলাদেশের গ্লোব বায়েটেক নামে একটি প্রতিষ্ঠান বঙ্গভ্যাক্স নামে একটি টিকার উৎপাদনে যেতে চায়৷ তারা এখন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে যাওয়ার অনুমতির অপেক্ষায়৷ প্রতিষ্ঠানটির হেড অব কোয়ালিটি অ্যান্ড রেগুলেটরি ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন দাবি করেন, তাদের প্রতিমাসে এক কোটি ডোজ ভ্যাকসিন উৎপাদনের সক্ষমতা আছে৷ ঔষধ প্রশাসন তাদের ভ্যাকসিন উৎপাদনের লাইসেন্সও দিয়েছে কিন্তু তিনি জানান, তারা বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল থেকে তৃতীয় ধাপের এথিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন এখনো পায়নি৷

ড. মহিউদ্দিন বলেন, "বাংলাদেশে আগে টিকা উৎপাদন হয়েছে, কিন্তু টিকা আবিষ্কারের ঘটনা এই প্রথম৷ তাই আমাদের নানা ধরনের বাধা উৎরাতে হচ্ছে৷ তবে আমরা অনুমোদন পেলে তিন-চার মাসের মধ্যেই হিউম্যান ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের কাজ শেষ করতে পারবো৷ গত অক্টোবর থেকে অনুমতি পাওয়ার চেষ্টা করছি৷'' তার কথা, এই টিকার একটি ডোজই যথেষ্ট৷ দ্বিতীয় ডোজ লাগবে না৷