ওয়াজের ভালো-মন্দ যাচাই করবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন
২০ জানুয়ারি ২০২১সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হাসান ১৮ জানুয়ারি সরকারের চারটি সংস্থাকে পাঠানো নোটিশে অভিযোগ করেছেন, ওয়াজ মাহফিল ও ধর্মীয় বক্তৃতায় নানা ধরনের কাল্পনিক গল্প বা রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে৷ কারো বক্তব্য জঙ্গিবাদ উসকে দিচ্ছে৷ ওয়াজে নানা ধরনের গল্প ও কবিতা বলা হয়ে থাকে যা ইসলামের সাথে যায় না৷ তাই আগামী ৩০ দিনের মধ্যে ওয়াজের মধ্যে এগুলো নিষিদ্ধ করতে তিনি মন্ত্রিপরিষদ সচিব, ধর্মমন্ত্রণালয়ের সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালককে নোটিশ দিয়েছেন তিনি৷ এগুলো বন্ধের ব্যবস্থা না করলে তিনি আইনের আশ্রয় নিয়ে হাইকোর্টে রিট করবেন বলে জানিয়েছেন৷
অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হাসান বলেন, ''বাংলাদেশ সংবিধানের ২ (ক) অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম৷ তাই ইসলাম ধর্মের পবিত্রতা রক্ষা করা এবং ইসলাম ধর্ম সঠিকভাবে প্রচার করা সরকারের আবশ্য দায়িত্ব৷ বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিল ও ধর্মীয় বক্তৃতায় বক্তারা যেন পবিত্র কোরআন ও বিশুদ্ধ হাদিসের রেফারেন্স উল্লেখ করে বক্তব্য দেন এবং রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য পরিহার করেন, এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া দরকার৷''
তিনি প্রাথমিক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কোরআন ও বিশুদ্ধ হাদিস গ্রন্থের অনুবাদ পড়ানো বাধ্যতামূলক করারও দাবি জানিয়েছেন৷
তার কাছে ওয়াজ মাহফিলে অসত্য ও কল্পকাহিনী প্রচারের সুনির্দিষ্ট উদাহরণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমি কারো নাম উল্লেখ করে কিছু বলতে চাই না৷ আপনার ইউটিউব ও ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর অনেক উদাহরণ পাবেন৷’’
ফাইজার টিকার আবিষ্কারক তুরস্কের ফাইজার!
সাম্প্রতিক সময়ে একজন মাওলানার করোনা টিকা নিয়ে একটি বক্তব্য বেশ হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে৷ তিনি ওয়াজে বলেছেন, ফাইজারের টিকা আবিস্কার করেছে তুরস্কের ফাইজার নামে ১৭ বছরের এক কিশোর৷ এর আগে তিনিই বলেছিলেন, করোনার টিকায় মাইক্রো চিপস আছে, যার মাধ্যমে মুসলামানদের সব তথ্য নিয়ে যাওয়া হবে৷ করোনা শুরুর প্রথম দিকে একজন ওয়াজে বলেছিলেন, করোনায় মারা গেলে তিনি শহীদ হিসেবে গণ্য হবেন৷ তাই করোনার চিকিৎসার প্রয়োজন নেই৷
ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের কিছু কারণ
বিশিষ্ট ওয়াজেরিন মাওলানা হাবিবুর রহমান মিসবাহ বলেন, ‘‘ওয়াজে যে কিছু বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়া হয় না তা নয়৷ কিছু তরুণ ওয়াজেরিন আবেগপ্রবণ হয়ে এটা করেন৷ আর ফেসবুক ও ইউটিউবের যুগে তারা জনপ্রিয়তা বাড়াতেও কিছু গাল-গল্প করেন৷ এগুলো পরিহার করা প্রয়োজন৷ তরুণ কিছু ওয়াজেরিনের জ্ঞানের গভীরতা কম থাকায় এরকম হয়৷''
তবে ওয়াজে সরকারবিরোধী বক্তব্যের ব্যাপারে তার ভিন্নমত আছে৷ তিনি বলেন, "ওয়াজে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলা হয়৷ এটাতো বলতে হবে৷ অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বললে যদি সরকারবিরোধিতা বলা হয় তা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়৷”
তার মতে, "ভাস্কর্য আর মূর্তি একই জিনিস৷ মূর্তি ইসলামে হারাম। তাই মূর্তির বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে৷ তবে আমাদের কাজ হলো এটা বলা, কোনো উগ্রতা সৃষ্টি আমাদের কাজ নয়৷”
পর্যবেক্ষণে ইসলামিক ফাউন্ডেশন
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এরইমধ্যে ওয়াজ মনিটিরিংয়ের চিন্তা করছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ৷ তিনি বলেন. ‘‘তবে এই মূহুর্তে আমরা মনিটরিং করতে পারছি না। কারণ, আমাদের জনবল ও লজিস্টিক-এর অভাব আছে৷’’
তিনি জানান, দেশের বিশিষ্ট আলেম ও ইসলামি চিন্তাবিদদের নিয়ে একটি প্যানেল করতে চাচ্ছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন৷ তারা সারাদেশের ওয়াজে যদি ভুল বা বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়া হয়, তাহলে তা ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে জানাবে৷ এরপর ফাউন্ডেশন ব্যবস্থা নেবে৷ আর ফাউন্ডেশনের গবেষণা সেলের লোকবল বাড়িয়ে একটি মনিটরিং সেলও করা হবে বলে জানান তিনি৷
মাওলানা হাবিবুর রহমান মিসবাহ বলেন,‘‘মনিটরিং সেলে আমাদের আপত্তি নেই৷ তবে তা সরকারের পছন্দের লোকজন নিয়ে করলে হবে না৷ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য দেশের বিশিষ্ট আলেম-ওলামাদের নিয়ে এটা করতে হবে৷’’
প্রসঙ্গত, দুই বছর আগে ওয়াজ নিয়ে সরকারের একটি গোয়েন্দো সংস্থা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন দিয়েছিল৷ তখনও মনিটরিং সেল গঠনের কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু এতদিনেও তা হয়নি৷