করোনায় বিসিএস: যেসব বিষয় নিয়ে বিভ্রান্তি
১৭ মার্চ ২০২১যেসব পরীক্ষার্থী কোভিড আক্রান্ত বা অসুস্থ হবেন তাদের জন্য কী ব্যবস্থা, তা নির্দেশনায় নেই৷
অবশ্য পিএসসির সদস্য ও ৪১তম বিসিএসের দায়িত্বে থাকা শাহজাহান আলী মোল্লা জানিয়েছে, ‘‘তাদের জন্য সিক বেডের ব্যবস্থা থাকবে৷ পরীক্ষার হল থেকে কাউকে ফিরিয়ে দেয়া হবে না৷’’
স্বাস্থ্য নির্দেশনার মধ্যে করোনার সময় স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রচলিত নিয়মগুলোই রয়েছে৷ মাস্ক পরে আসতে হবে৷ পরীক্ষার হলে ঢোকার সময় তিন ফুট দূরত্ব রেখে লাইন ধরে ঢুকতে হবে৷ হলের ভিতরে দুই ফুট দূরত্ব রেখে আসন বিন্যাস করা হবে৷ আর তাপমাত্রা মেপে পরীক্ষার হলে ঢুকানো হবে৷ ঢাকাসহ দেশের সব বিভাগীয় শহরে দুই ঘণ্টার এই পরীক্ষা হবে৷ চার লাখ ৭৫ হাজার পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা নিতে আরো সমপরিমাণ কর্মকর্তা ও কর্মচারী যুক্ত থাকবেন৷ যদিও পরীক্ষার্থীদের সাথে তাদের স্বজনদের কেন্দ্র এলাকায় যেতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে৷
পরীক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশ্ন ও বিভ্রান্তি:
এত বেশি পরিমাণ মানুষের উপস্থিতিতে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কার বাইরেও পরীক্ষার্থীরা যেসব প্রশ্ন তুলেছেন সেগুলো হলোঃ
১. কারুর শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের বেশি হলে কি পরীক্ষা দেয়ায় বিরত রাখা হবে?
২. করোনা ছাড়াও অন্য কারণেও তো শরীরের তাপমাত্রা বেশি হতে পারে৷ সেটা কীভাবে চিহ্নিত করা হবে?
৩. করোনার উপসর্গ প্রকাশ পেতে তো সময় লাগে৷ তাহলে উপসর্গ প্রকাশের আগেই যদি পরীক্ষার হলে কেউ প্রবেশ করেন?
৪. পরীক্ষা দিতে গিয়ে যদি কেউ করোনা আক্রান্ত হন তার দায় দায়িত্ব কে নেবে?
৫. যারা পরীক্ষার দায়িত্বে থাকবেন তাদের তাপমাত্রা কি পরীক্ষা করা হবে?
এর আগে পরীক্ষার্থীরা ৪১তম বিসিএস পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে আন্দোলন, সংবাদ সম্মেলন ও হাইকোর্টে রিটও করেছেন৷ কোনো কাজ হয়নি৷ রিটও খারিজ হয়ে গেছে৷ তাই বাধ্য হয়েই আতঙ্কের মধ্যে তারা পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন৷ তাদেরই একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মার্কেটিং বিভাগ থেকে পাস করা মেহেদী হাসান বলেন, ‘‘এই পরীক্ষার্থীরা করোনায় ঢাকা বা বিভাগীয় শহর ছেড়ে চলে গেছেন৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হলগুলোও বন্ধ৷ তারা ঢাকায় এসে করোনার মধ্যে কোথায় থাকবেন? আর এত পরীক্ষার্থীর স্বাস্থ্য ঝুঁকি কীভাবে এড়ানো যাবে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘শরীরের তাপমাত্রা বেশি হলে তারা কোথায় পরীক্ষা দেবেন? তাদের কি আইসিইউতে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে? এসব আমরা কিছুই জানি না৷’’
আরেকজন পরীক্ষার্থী অনামিকা সরকার বলেন, ‘‘বিসিএস পরীক্ষা অনেক চাপের৷ ফলে সেই চাপের কারণেও তো তাপমাত্রা বাড়তে পারে৷ তাহলেও কি তিনি পরীক্ষা দিতে পারবেন না? আর করোনা আক্রান্ত হলে পরীক্ষায় যদি বসতে না দেয়া হয় তাহলে তা কি সঠিক হবে? কারণ যেকেনোভাবেই হোক চাকরি প্রার্থীরা এই পরীক্ষাটি মিস করতে চান না৷’’
তিনি মনে করেন, তিন ফুট দূরত্বের লাইন করতে গেলে আরেকটি ভোগান্তি হবে৷ পরীক্ষার্থীদের অনেক আগে গিয়ে লাইনে দাঁড়াতে হবে৷ তিনি জানান, তার সিট পড়েছে ভাসানটেক গ্রিণ ফিল্ড স্কুলে৷ ওই কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী এক হাজার ৫০০৷ তিন ফুট দূরত্বে লাইন করলে তা মিরপুর ১০ পর্যন্ত চলে যাবে৷ এটা কীভাবে সম্ভব?
রিটকারীদের একজন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যানে পাস করা মো. লিমন আহাদ আলী বলেন, ‘‘গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ৪২তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেন ৩০ হাজার৷ তাদের মধ্যে ৮-৯ জন করোনায় আক্রান্ত হন৷ কিন্তু এবার অংশ নিচ্ছেন চার লাখ ৭৫ হাজার৷ তাই আমাদের আতঙ্ক অনেক বেশি৷ এই আতঙ্ক নিয়েই পরীক্ষায় অংশ নিতে যাচ্ছি৷ যাদের এই করোনায় ঢাকায় থাকার জায়গা নাই তারা গণপরিবহণে করে ঢাকায় এসে পরীক্ষা দিয়ে আবার ফিরে যাবেন৷ তাদের কী অবস্থা হবে? আর এখন আবার করোনা বাড়ছে৷’’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের অভিমত:
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, ‘‘যে বিবেচনায় এখনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ সেই বিবেচনায় বিসিএস পরীক্ষা নিয়েও ভিন্ন চিন্তা করা যেত৷ পরীক্ষা আরো কিছু দিন পিছিয়ে দেয়া যেত৷ আর তাপমাত্রা মেপে করোনা আক্রান্ত বোঝা করা যায় না৷ ধারণা করা যায় মাত্র৷ পরীক্ষার সময় মানসিক চাপসহ অন্য কোনো কারণেও শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে পারে৷ আবার করোনা আক্রান্ত হলেই যে সাথে সাথে তাপমাত্রা বাড়বে তা নয়৷ ফলে একটি লেজেগোবরে অবস্থা হতে পারে৷ করোনা আক্রান্ত না হয়েও কেউ বিপাকে পড়তে পারেন৷ আবার কেউ আক্রান্ত হয়েও হলে ঢুকে যেতে পারেন৷’’
পিএসসি যা বলছে:
পিএসসির সদস্য শাহজাহান আলী মোল্লা বলেন, ‘‘এখন করোনা বাড়ছে, সামনে যে কমবে তা তো বলা যায় না৷ একটি দেশ তো এভাবে স্থবির হয়ে থাকতে পারে না৷ এখন তো সব কিছুই খোলা৷ তাহলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা কেন নেয়া যাবে না৷’’
তিনি জানান, বিসিএস পরীক্ষায় একটি জট তৈরি হচ্ছে৷ ৪২ তম বিসিএস পরীক্ষা তো গত বছর হওয়ার কথা ছিলো৷ ৪৩ তম বিসিএস এখনও পেন্ডিং আছে৷ চাকরিপ্রার্থীদের বয়স বেড়ে যাচ্ছে৷ শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে৷ আর যে পদগুলো খালি আছে নিয়োগ দিতে না পারায় তাদের সেবা থেকে দেশের মানুষ বঞ্চিত হচেছ৷ তাই সব মিলিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে৷
তিনি বলেন, ‘‘এবার পরীক্ষার হলে চিকিৎসকও থাকবেন৷ আর তাপমাত্রা মেপে বা অন্যভাবে কাউকে কোভিড আক্রান্ত সন্দেহ হলে তাদের সিক বেডে পরীক্ষার সুযোগ দেয়া হবে৷ আইসোলেশন প্রয়োজন হলে তার ব্যবস্থা করা হবে৷ সিক বেড এমনিতেই থাকে৷ অন্য কোনো কারণেও কেউ অসুস্থ হতে পারেন৷’’
দুই হাজার ১৬৬ শূন্যপদের জন্য ৪১তম বিসিএস অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷ এবার রেকর্ড সংখ্যক পরীক্ষার্থী আবেদন করেছেন৷ ১৯ মার্চ সকাল ১০ থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দুই ঘন্টা এই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেয়া হবে৷