কাশ্মীর: জাতিসংঘের বৈঠক নিয়ে নিরুত্তাপ দিল্লি
১৭ ডিসেম্বর ২০১৯নরেন্দ্র মোদী সরকার ৩৭০ ধারা বিলোপ ও কাশ্মীরকে আলাদা রাজ্য থেকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করার কিছুদিনের মধ্যে প্রথমবার তা নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছিল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ৷ সেই বৈঠকে ভারত বিরোধী কোনও অবস্থান নেওয়া হয়নি৷ কাশ্মীর নিয়ে কোনও চাপের মুখেও পড়েনি নয়াদিল্লি৷ এখন আবার চীনের অনুরোধে দ্বিতীয় বৈঠক হচ্ছে৷ কাশ্মীর নিয়ে মোদীর সিদ্ধান্তের ১৩৩ দিন পরে৷ প্রায় সাড় চার মাস সময় কাশ্মীর কার্যত নিরাপত্তা রক্ষীদের বলয়ের মধ্যে অবরুদ্ধ হয়ে আছে৷ টেলিফোন পরিষেবা চালু হয়েছে ঠিকই, কিন্তু ইন্টারনেট নেই৷ কিছু স্কুল খুলেছে৷ কিছু নয়৷ আপেল বাগানে কাজ করতে গিয়ে কয়েকজন শ্রমিক জঙ্গিদের হাতে মারা গিয়েছেন৷ কার্ফু নেই ঠিকই, কিন্তু নিরাপত্তা রক্ষীদের টহল আগের মতোই আছে৷
এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে কতটা লাভ হবে? প্রবীণ সাংবাদিক ও বিদেশ নীতি বিশেষজ্ঞ প্রণয় শর্মা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''রুদ্ধদ্বার বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে, তা সাধারণত বাইরে বলা হয় না৷ তা ছাড়া আন্তর্জাতিক দুনিয়ার প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয় না কিছু হবে বলে৷ তাছাড়া কাশ্মীর নিয়ে চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে স্বার্থের ফারাক আছে৷ চীন অনেক বেশি করে লাদাখ নিয়ে উৎসাহী৷ তারা মনে করে, এখানে বিবাদিত ভূমি রয়েছে৷'' প্রণয় শর্মার মতে, আমেরিকার সংগঠন ছাড়া অন্য কোনও দেশ বা সংগঠনের তরফে কাশ্মীর নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়নি৷ তাঁদের প্রশ্ন নেই, এমন নয়, কিন্তু তা তারা প্রকাশ্যে বলছে না। একে ভারতীয় কূটনীতির সাফল্য বলা যায়৷
সাধারণত দেখা যায়, সিদ্ধান্ত যখন নেওয়া হয়, তারপরেই বিভিন্ন দেশ তার প্রতিক্রিয়া জানায়৷ এখন তো প্রায় সাড়ে ৪ মাস কেটে গিয়েছে৷ তাই চীন ও পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে এখন নতুন করে কোনও দেশের কাশ্মীর বিরোধিতার সম্ভাবনা কম৷ কাশ্মীরে গিয়ে তিনদিন থেকে এসেছেন সমাজকর্মী ও রাজনৈতিক নেতা যোগেন্দ্র যাদব৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''মানবাধিকার নিয়ে চীনের রিপোর্ট যথেষ্ট খারাপ৷ তাই তারা কী বলছে তা নিয়ে আমি একেবারেই উৎসাহী নই৷ কাশ্মীরের বিষয়টি আমাদের দেশের ভিতরের লড়াই৷ আমাদের তা লড়তে হবে৷ কশ্মীরেতিনদিন থেকে মনে হয়েছে, সেখানে ভারতের পতাকাধারী যাঁরা ছিলেন, তাঁরাও চুপ করে গিয়েছেন৷''
এই ভাবনার প্রতিধ্বনি দেখা যাচ্ছে, কাশ্মীরের প্রবীণ সাংবাদিক আলতাফ হুসেনের কথায়৷ ডয়চে ভেলেকে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে আলতাফ বলেছেন, ''আন্তর্জাতিক দুনিয়ার ওপরে কাশ্মীরের লোকের আস্থা নেই৷ কাশ্মীরের লোক সিদ্ধান্ত মেনে নিতে রাজি নয়৷ তারা এটাও মনে করছে, যা করার নিজেদেরই করতে হবে৷''
তাই কাশ্মীরের লোক বা ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন না, জাতিসংঘের বৈঠকের কোনও প্রভাব দিল্লির ওপর পড়বে৷
জেএইচ/এসজি