জয় দিয়ে শুরু টাইগারদের বিশ্বকাপ মিশন
২ জুন ২০১৯যে ম্যাচগুলোতে জিতেছিল টাইগাররা, তাঁর একটি ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে৷
ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসরে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর সেই স্মৃতি ওভালে যে ফিরতে পারে সেই ইঙ্গিত বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসেই দিয়েছিল৷ তামিম-সৌম্য’র চমৎকার সূচনার পর সাকিব-মুশফিকের রেকর্ড জুটি আর শেষ বেলায় মাহামুদুল্লাহ-মোসাদ্দেকের লড়াকু ব্যাটিংয়ে এখন অবধি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ স্কোর করে ফেলে বাংলাদেশ৷ দলের ৩৩০ রানের সেই ইনিংস শেষে সাকিব আল হাসানতো বলেই ফেললেন, ‘‘ড্রেসিংরুমে সবার বিশ্বাস আমরা ম্যাচটা ধরে রাখতে পারবো৷’’
সাকিবের কথা সত্যি হয়েছে৷ তবে, সহজে নয়৷ নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারালেও প্রোটিয়ারা ম্যাচটাকে টেনে নিয়ে গেছে শেষ অবধি৷ ফাফ দু প্লেসি’র ৬২ আর একে মারক্রাম, রাসি ফন ডার ডাসেন, ডেভিড মিলারদের চেষ্টায় ৩০৯ রান পর্যন্ত করতে সক্ষম হয় দক্ষিণ আফ্রিকা৷ আর ২১ রানের জয় পায় বাংলাদেশ৷
একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে সর্বোচ্চ রান করে জয় ছাড়াও এই ম্যাচে বাংলাদেশের আরো একটি বড় অর্জন আছে৷ বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান সবচেয়ে দ্রুত ওয়ানডেতে ২৫০ উইকেট প্রাপ্তি এবং পাঁচহাজারের বেশি রান করার রেকর্ড সম্পন্ন করেছেন এই ম্যাচে, পাশাপাশি প্রবেশ করেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এগারো হাজার রান পার করা ক্রিকেটারদের তালিকায়৷ তামিমের পর দ্বিতীয় কোন বাংলাদেশির অর্জন এটি৷ ওভালে প্লেয়ার অব দ্যা ম্যাচও হয়েছেন সাকিব আল হাসান৷
শেষের দিকে সাইফ, মুস্তাফিজের আঘাতে কাবু প্রোটিয়ারা
বাংলাদেশের ৩৩১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে প্রথম ৩৫ ওভারে অনেকটাই এগিয়ে যায় প্রোটিয়ারা৷ কিন্তু ৩৫ ওভারের শুরুতে মিলারকে ফিরিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে খানিকটা বেকায়দায় ফেলতে সক্ষম হন মুস্তাফিজুর রহমান৷ মিলার-ড্যুসেনের বিপজ্জনক জুটি ভাঙ্গার পর কিছুটা থমকে গেলেও দ্রুতই আবার খেলায় ফেরে প্রোটিয়ারা৷ জন পল ডুমিনিকে সঙ্গে নিয়ে কঠিন লক্ষ্য সহজ করার চেষ্টা করেন ড্যুসেন৷ তবে বোলিং আক্রমণে ফিরে ৩৯তম ওভারের প্রথম বলে তাঁকে বোল্ড করেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন৷ চল্লিশ ওভারে দলটির স্কোর দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ২২৮ রান৷
তারপরও ছুটতে থাকা প্রোটিয়াদের আবারো আটকে দেন সাইফ৷ ৪৩তম ওভারে আন্দিলে ফেলুকোয়ায়োকে বিদায় করেন তিনি৷ আর ৪৬ তম ওভারে ক্রিস মরিসকে বিদায় করে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করে ফেলেন মুস্তাফিজুর রহমান৷
২০৬ বলে দু’শো রান
বাংলাদেশের ৩৩১ রানের কঠিন লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে ৩৪ ওভার দুই বলে দু’শো রান করে ফেলে প্রোটিয়ারা৷ ডেভিড মিলার এবং রাশি ফান ডেয়ার ড্যুসনের একাধিক ক্যাচ মিস করেছিল টাইগাররা৷ ডেভিড মিলারের একটি ক্যাচ তালুবন্দি করতে পারিননি সৌম্য সরকার৷ তবে এটাই শেষ নয়, তেত্রিশতম ওভারে তাঁর আরেকটি ক্যাচ তালুবন্দি করতে ব্যর্থ হয়েছেন মাহমুদুল্লাহ৷
বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচের উত্তেজনার পারদ তখন ক্রমশ উপরের দিকে উঠতে থাকে৷ তখন তিন উইকেট হারিয়ে ফেললেও ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া ছিল প্রোটিয়ারা৷ ডেভিড মিলার এবং রাশি ফান ডেয়ার ড্যুসন জুটি শান্তভাবে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন৷
ওয়ানডে ক্রিকেটে সাকিবের ২৫০ উইকেট
দক্ষিণ আফ্রিকার এইডেন মারক্রামকে ফিরিয়ে ওয়ানডেতে আড়াইশো উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়লেন সাকিব আল হাসান৷ প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে এখন অবধি সবচেয়ে বেশি রান করা এবং উইকেট নেয়া বাংলাদেশি ক্রিকেটারও তিনি৷
প্রোটিয়াদের উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গেন মুশফিক
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহের জবাব দিতে মাঠে নেমে শুরুতে শান্ত মেজাজেই ছিল প্রোটিয়াদের উদ্বোধনী জুটি৷ ৪৯ রানের মাথায় সেই জুটি ভাঙতে সক্ষম হয়েছেন মুশফিকুর রহিম৷
দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্বোধনী জুটি যখন টাইগার সমর্থকদের মাঝে দুশ্চিন্তা সৃষ্টি করছিল, ঠিক তখনই আঘাত হানেন রহিম৷ ডি কককে রান আউটে সক্ষম হন বাংলাদেশের স্কিপার৷ তাঁর আগে অবশ্য এইডেন মারক্রামকে সঙ্গে নিয়ে ৪৯ রান করেন তিনি৷ ডি ককের পর মাঠে নামের ফাফ দ্যু প্লাসি৷
এখানে বলা প্রয়োজন, দক্ষিণ আফ্রিকা ক্যানিংটন ওভালে গত আটটি ওয়ানডে ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতে জিতেছে৷ ২০০০ সাল থেকে এখন অবধি তাদের একমাত্র জয়টি ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে৷ অন্যদিকে বাংলাদেশ এই মাঠে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দু’টি ম্যাচে হেরেছে এবং অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একটি ম্যাচ বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়েছে৷
বাংলাদেশের রানের রেকর্ড
বিশ্বকাপ ক্রিকেট শুরুর আগেই অনেকে ভবিষ্যদ্বানী করেছিলেন যে এবার দলগুলো রানের পাহাড় গড়বে৷ তবে প্রথম পাঁচ ম্যাচের মাত্র দু’টিতে স্কোর তিনশো পেরেয়েছে, যার একটি করেছে বাংলাদেশ৷
ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বড় স্কোর গড়তে সক্ষম হয় টাইগাররা৷ ছয় উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ করে ৩৩০ রান৷ চলতি বিশ্বকাপে এখন অবধি যে দু’টো ম্যাচে স্কোর তিনশো রান পেরিয়েছে, সেই দু’টোই ঘটেছে ওভালে এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে৷ আগের ম্যাচে ইংল্যান্ডের ৩১১ রানের জবাবে ২০৭ রানেই থেমে গিয়েছিল প্রোটিয়ারা৷
পরিসংখ্যান বলছে ২০১৬ থেকে এখন অবধি ২৫০ রানের বেশি চেজ করে শুধু একটি ম্যাচই জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা৷ সেটা বাংলাদেশের বিপক্ষে কিম্বারলিতে, ২০১৭ সালে৷ ২৭৯ রান করে জিতেছিল প্রোটিয়ারা৷ আজ অবশ্য রান আরো অনেক বেশি৷
সাকিব-মুশফিকের রেকর্ড জুটি ভাঙ্গার পর মোসাদ্দেক এবং মেহেদি হাসানকে সঙ্গে নিয়ে দলের স্কোর দ্রুত বাড়াতে থাকেন মাহমুদুল্লাহ৷ ৩৩ বল খেলে ৪৬ রান করেন তিনি৷ আর বাংলাদেশ পৌঁছে যায় এখন অবধি দলটির সবচেয়ে বড় ওয়ানডে স্কোরে৷
মুশফিকেরও সেঞ্চুরি হলো না
এদিকে, সাকিবকে সঙ্গে নিয়ে রেকর্ড জুটি গড়লেও তাঁর বিদায়ের পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি মুশফিক৷ দলের আড়াইশ রানের মাথায় ডিপ পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নিয়েছেন তিনি৷ ব্যক্তিগত রান ৭৮৷
সাকিব আল হাসানের বিদায়ের পর মোহাম্মদ মিঠুনের সঙ্গে জুটি গড়তে চেয়েছিলেন মুশফিক৷ কিন্তু মিঠুন চটপট ২১ রান তুলেই বিদায় নিলেন ইমরান তাহেরির বলে বোল্ড হয়ে৷ এরপর সেঞ্চুরির পথে থাকা মুশফিকও আন্দিলে ফেলুকোয়াকোর বলে ছয় মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নিয়েছেন৷
এগারো হাজারের এলিট ক্লাবে সাকিব
দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগ অবধি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিব আল হাসানের মোট রান ছিল ১০৯৯৫৷ পরিসংখ্যান বলছিল, পাঁচ রান করতে পারলেই দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে এগারো হাজার রানের এলিট ক্লাবে নাম লেখাবেন সাকিব৷
তবে শুধু সেই ক্লাবে নাম লেখানোই নয়, প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে ক্যারিয়ারের ৪৩তম অর্ধশতকও করে ফেললেন আইসিসি ব়্যাংকিং অনুযায়ী বর্তমানের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান৷
বিশ্বকাপে ওভালে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মুশফিককে সঙ্গে নিয়ে ১৪২ রানের রেকর্ড জুটি গড়েন সাকিব৷ এখন অবধি বিশ্বকাপের কোন খেলায় এটাই বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বড় জুটি৷ ইমরান তাহিরের বলে তিনি যখন বোল্ড হন দলের স্কোর তখন ২১৭৷
দুই জেষ্ঠ্য ক্রিকেটারের পার্টনারশিপের কারণেই মূলত বাংলাদেশ এই খেলার সুবিধাজনক অবস্থায় পৌঁছে যায়৷ ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে অর্ধশতক সম্পন্ন করে সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম৷
তামিমের পর মাঠ ছাড়লেন সৌম্য
শুরুটা চমৎকার করলেও বেশিক্ষণ টেকেনি টাইগারদের উদ্বোধনী জুটি৷ তামিম ইকবালের পর মাঠ ছেড়েছেন সৌম্য সরকারও৷ ব্যক্তিগত ৪২ রানের মাথায় ক্রিস মোরিসের বল ''কট বিহাইন্ড'' তিনি৷
অথচ সৌম্য সরকার দিনের শুরুটা সুন্দর করেছিলেন৷ একদিকে তামিম যখন শান্ত মেজাজে খেলেছেন, তখন সৌম্য সরকার মাঝেমাঝেই চার হাঁকিয়েছেন৷ কিন্তু তামিমের বিদায়ের পর বেশিক্ষণ টিকলেন না তিনিও৷ ক্রিস মোরিসের বলে কট বিহাইন্ড তিনি৷ দলের স্কোর তখন ৭৫ রান৷ সাকিব আল-হাসানের সঙ্গে মাঠে তখন জুটি গড়েন মুশফিকুর রহিম৷
তামিমের বিদায়
শুরুটা ধীরেসুস্থে করেছিলেন সৌম্য সরকার ও তামিম ইকবাল৷ সৌম্য সরকার হাত খুলে খেললেও তামিম ছিলেন বেশ শান্ত৷ কিন্তু তাসত্ত্বেও বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না তিনি৷ মাত্র ১৬ রান করে ফেলুকোয়ায়ো’র বলে কট বিহাইন্ড হন তিনি৷ তাঁর বিদায়ের পর মাঠে নামেন অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান৷
তামিম-সৌম্যর চমৎকার সূচনা
বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে রবিবার ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি বাংলাদেশ৷ টসে হারায় আগে ব্যাট করতে নামতে হয় টাইগারদের৷ তবে, ইনজুরিতে পড়ায় শঙ্কা থাকার পরও শেষমেষ মাঠে নামেন তামিম ইকবাল৷
ওভাল স্টেডিয়ামে তামিম ইকবালের অতীত রেকর্ড বেশ উজ্জ্বল৷ ইতোপূর্বে দু'বার এই মাঠে খেলেছেন তিনি৷ আর তাতে রান করেছেন ১২৮ এবং ৯৫৷ তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে তাঁর ইনিংস শেষ হয় ১৬ রানে৷
বাংলাদেশ একাদশ: তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিঠুন, মাহমুদউল্লাহ, মোসাদ্দেক হোসেন, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মেহেদী হাসান মিরাজ, মাশরাফি বিন মুর্তজা ও মোস্তাফিজুর রহমান৷