1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্বপ্ন এবার আকাশ ছোঁয়ার

নোমান মোহাম্মদ
২৮ মে ২০১৯

বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জিততে পারবে কি না, এর উত্তর সময়ের হাতে৷ তবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা যে এখন বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন নিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করতে পারেন এ অর্জনটাও কম কী! আর সে স্বপ্ন যে অলীক কিছু নয়, ক্রিকেটবিশ্ব তা মানে৷

https://p.dw.com/p/3J4kE
ছবি: picture-alliance/empics/A. Davy

১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম অংশগ্রহণ ছিল স্বপ্নের মতো; পাকিস্তান-স্কটল্যান্ডকে হারানোর কারণে৷

২০০৩ বিশ্বকাপ দুঃস্বপ্নের; ক্যানাডা-কেনিয়াসহ সব দলের কাছে হারের জন্য৷

২০০৭ আসরে আবার আকাশ-ছোঁয় স্বপ্নঘুড়ি; ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার মতো পরাশক্তিদের বিপক্ষে জয়ের উল্লাসে৷

২০১১ সালে সে স্বপ্নঘুড়ির ভোকাট্টা; ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজ-দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৫৮ ও ৭৮ রানে অলআউটের বেদনায়৷

২০১৫ বিশ্বকাপ পুণরায় উত্‍সবের রঙ ছড়িয়ে যায় ৫৬ হাজার বর্গমাইলে; প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলার কারণে৷

বিশ্বকাপ থেকে বিশ্বকাপে স্বপ্ন-দুঃস্বপ্নের পর্যায়ক্রমিক যাত্রা কি অব্যাহত থাকবে এবারও? ২০১৯ বিশ্বকাপ বিষাদকাব্য হয়ে তাহলে অপেক্ষা করে আছে বাংলাদেশের জন্য? 

‘‘আমাকেও চেনে ওই ২০০৭ বিশ্বকাপ দিয়েই’’

নাহ্, কেউই তা ভাবছে না৷ কারণ, ক্রিকেটটা অমন পাটিগণিতের মতো সরল অঙ্ক না৷ পিটি ক্লাসের ‘ওয়ান গ্যাপ ওয়ান ক্ল্যাপ' কসরত মেনে চলে না৷ এবারের দল বরং এমন এক লক্ষ্য নিয়ে বিশ্বকাপে যাচ্ছে, যেটি আগের পাঁচ অংশগ্রহণের সময় ভাবনার চৌহদ্দিতেও ছিল না৷ বাংলাদেশের পক্ষে এবার বিশ্বকাপ জয় পর্যন্ত সম্ভব বলে যে হুঙ্কার ছেড়ে গেছেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা,

এ বিশ্বাসের জ্বালানি মূলত দুটি৷ প্রথমত দলের ধারাবাহিক উন্নতির পারফরম্যান্স৷ ২০১৫ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ; ২০১৭ সালে আরেকটি বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে৷ দ্বিপাক্ষিক সিরিজে হারিয়েছে পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলকে৷ গত বছরই তো উঠেছে তিন-তিনটি টুর্নামেন্টের ফাইনালে– ওয়ানডেতে ঘরের মাঠের ত্রিদেশীয় সিরিজ, দুবাই-আবুধাবির এশিয়া কাপ এবং টি-টোয়েন্টিতে নিদাহাস ট্রফি৷ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি টুর্নামেন্ট আয়ারল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজেও৷ তাহলে বিশ্বকাপ জয়ের আত্মবিশ্বাস থাকবে না কেন?

দ্বিতীয় কারণ অভিজ্ঞতা৷ ১৬ কোটি ক্রিকেটপ্রাণের যে ১৫ প্রতিনিধি বিশ্বকাপে লাল-সবুজের প্রতিনিধি, তাঁদের মধ্যে পঞ্চপাণ্ডবের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা অতুলনীয়৷ মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা ২০৯, মুশফিকুর রহিম ২০৫, সাকিব আল হাসান ১৯৭, তামিম ইকবাল ১৯৩ এবং মাহমুদ উল্লাহ ১৭৫ ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন৷ তাঁদের চেয়ে বেশি ওয়ানডে খেলা ক্রিকেটার ঢের আছে বিশ্বকাপে৷ কিন্তু ১০ দলের কোনোটিতে একসঙ্গে এমন পাঁচ ক্রিকেটার নেই, যাঁদের প্রত্যেকের ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা কম-বেশি ২০০ ম্যাচের৷ এই পাঁচ জনের জন্যই এটি হতে যাচ্ছে চতুর্থ বিশ্বকাপ৷ অমন যূথবদ্ধ অভিজ্ঞতাও নেই ভারত-অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকাসহ কোনো দলের৷ 

‘‘বিশ্বকাপ জয় সম্ভব’’

বাংলাদেশ তাই আকাশ ছোঁয়ার স্পর্শ দেখবেন না কেন?

অথচ একটা সময় বাংলাদেশের জন্য বিশ্বকাপ খেলাই ছিল বিশ্বকাপ জয়ের সমান৷ ২০ বছর আগে বিশ্ব আসরে প্রথম অংশগ্রহণের সময় ক্রিকেট বোর্ডে থাকা আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি এখনো বোর্ডে আছেন পরিচালক হিসেবে৷ তিনিই বলছিলেন সে কথা, ‘‘তখন যে বিশ্বকাপে খেলছি, সেটিই ছিল সবচেয়ে বড়৷ এর চেয়ে বড় পাওয়া ওই সময় আর কিছু ছিল না৷ যখন টেস্ট স্ট্যাটাস পাইনি, তখনো মনের মধ্যে সুপ্ত বাসনা ছিল যে, আমরা টেস্ট খেলতে পারব৷ কিন্তু লাজ-সংকোচের কারণে বলতে পারতাম না৷ এখনো তেমনি বিশ্বাস করি, যে কোনো জায়গায় ভালো করার সামর্থ্য আমাদের দলের রয়েছে৷''

১৯৯৯ সালের সে দলটির সদস্য আকরাম খানের কথাতেও ফুটে ওঠে সে সময়কার ক্রিকেটচিত্র, ‘‘তখন আমাদের জন্য সব ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ৷ আইসিসি ট্রফি গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ, সেখানে ভালো করলে বিশ্বকাপ খেলতে পারব৷ প্রথম ওয়ানডে জেতা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কেনিয়ার বিপক্ষে জিতলাম, পরে ওয়ানডে স্ট্যাটাস পেলাম৷ ১৯৯৯ বিশ্বকাপ খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ, আমরা তখন টেস্ট স্ট্যাটাস পাবার প্রক্রিয়ায় ছিলাম৷ সেবার বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানোর পর আমাদের সে দাবি জোরালো হয়৷ বাংলাদেশ যে ভালো দল, সেটি বিশ্বকাপের মাধ্যমেই সবার কাছে প্রমাণিত হয়৷''

আর এখন যে অজেয় হয়ে ওঠার পথে বাংলাদেশের ক্রিকেট, তার শুরুটা ২০০৭ বিশ্বকাপে বলে মনে করেন সে দলটির অধিনায়ক হাবিবুল বাশার, ‘‘২০০৭ বিশ্বকাপ নিয়ে এখনো লোকে কথা বলে৷ প্রদর্শনী ক্রিকেট বা ঘুরতে এখনো ভারতে গেলে ওরা এ নিয়ে কথা বলে৷ ভারতীয় সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষরা বাংলাদেশের কাছে হারটি ভুলতে পারেনি৷ আমাকেও চেনে ওই ২০০৭ বিশ্বকাপ দিয়েই৷ অবশ্যই তা ভালো লাগে৷ ওই বিশ্বকাপে আমরা বিশেষ কিছু করতে পেরেছি৷ বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন যে অবস্থায় আছে, সে 'স্টেটম্যান্ট' বোধহয় আমরা ২০০৭ বিশ্বকাপেই দিতে পেরেছিলাম৷''

এবারের দলের ওপর প্রত্যাশা অনেক বেশি৷ কারণ হিসেবে অভিজ্ঞতার কথাই আগে বলেন হাবিবুল, ‘‘দলটি অনেকদিন একসঙ্গে খেলছে৷ প্রস্তুতি নিয়েছে লম্বা সময় ধরে৷ দলটির অতীত সাফল্যও অনেক বেশি৷ এত অভিজ্ঞতা নিয়ে বাংলাদেশ কখনো কোনো বিশ্বকাপে যায়নি৷ সব মিলিয়েই এ দলের উপর প্রত্যাশা অন্য সব বিশ্বকাপের চেয়ে বেশি৷ কারণ, এত অভিজ্ঞ দল বাংলাদেশ আবার কবে পারে, কখনো পাবে কিনা, সে প্রশ্ন থেকেই যায়৷' সে দলের পক্ষে বিশ্বকাপ জয় অসম্ভব বলে মনে করেন না এই সাবেক অধিনায়ক, ‘‘কঠিন কাজ; তবে অসম্ভব না৷ বিশ্বকাপ জিততে হলে অনেক কিছু লাগে৷ পারফরম্যান্স লাগে, ভাগ্য লাগে৷ তবে আমি মনে করি, কোনো প্রতিযোগিতায় নামার সময় অবশ্যই লক্ষ্য থাকা উচিত এবং সেটি চূড়ান্ত লক্ষ্যই হওয়া উচিত৷ আমরা জিতি বা না জিতি, লক্ষ্যটা শিরোপা জয়ই হওয়া উচিত৷''

আকরামও মনে করেন, বিশ্বকাপ জয় সম্ভব৷ যুক্তিই তাঁকে অমন স্বপ্ন দেখার সাহস যোগাচ্ছে, ‘‘শিরোপা জেতা সম্ভব ১০০%৷ কোনো টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল খেলতে পারলে কেন ফাইনাল খেলা যাবে না? ফাইনাল খেললে কেন শিরোপা জেতা যাবে না? এটি সহজ যুক্তি৷'' আহমেদ সাজ্জাদুলের কাছেও তা অসম্ভব মনে হচ্ছে না, ‘‘এটি ক্রিকেট খেলা৷ প্রতিটি দলের বিপক্ষে আমরা আগে যেমন পারফর্ম করেছি, তেমনটা করতে পারলে জেতা সম্ভব৷ সেটি শুরুর দিকের ম্যাচে হতে পারে, ফাইনালেও হতে পারে৷ অধিনায়ক আত্মবিশ্বাস নিয়ে বিশ্বকাপ জয়ের কথা বলেছেন৷ সেটি হতেই পারে৷ বিশ্বকাপ জেতা তাই সম্ভব৷ কারণ, আমরা সবার সঙ্গে পারফর্ম করেছি৷ বড় বড় সব দলকে হারিয়েছি৷ আর শেষ কথা হচ্ছে, খেলাটি ক্রিকেট৷ এখানে যে কোনো কিছুই সম্ভব৷''

পরম প্রার্থিত সে ট্রফি জয়ের জন্য নির্দিষ্ট কারো উপর নির্ভর করতে চান না বর্তমান নির্বাচক হাবিবুল৷ বরং সবার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে মানছেন তিনি, ‘‘চ্যাম্পিয়ন হওয়া পরের ব্যাপার, যদি বিশ্বকাপে ভালোও করতে চান, তাহলে এক-দুজনের পারফরম্যান্সের জন্য বসে থাকলে চলবে না৷ আমি মনে করি, তামিম খুব ভালো করবে৷ ওপেনিংয়ে ওর সঙ্গে সৌম্য-লিটন যে-ই খেলুক, তার পারফরম্যান্স গুরুত্বপূর্ণ হবে, যদি বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যেতে চায়৷ সাকিব-মুশফিক-মাহমুদ উল্লাহর মিডল অর্ডার নিয়ে আমি খুব আত্মবিশ্বাসী৷ ইংল্যান্ডের এবারের বিশ্বকাপের উইকেট ব্যাটিং সহায়ক হবে বলে সবাই বলছেন৷ আমিও তাই মনে করি৷ আর ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে বোলারদের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়৷ কারণ, এখানে ব্যাটসম্যানরা ভালো করবেই; বোলিং কেমন হয় তার উপর অনেক সময় জয়-পরাজয় নির্ধারণ হয়ে যায়৷ সেক্ষেত্রে আমাদের বোলারদের পারফরম্যান্স গুরুত্বপূর্ণ৷ মাশরাফি-মুস্তাফিজের বোলিং গুরুত্বপূর্ণ৷ ডেথ ওভারে সাইফ উদ্দিনের বোলিংও৷ স্পিনার হিসেবে সাকিব এবং সঙ্গে মিরাজ খেললে ওদের ভূমিকাও থাকবে অনেক৷'' 

‘‘আমরা বিশ্বাস করি যে, এ দল বিশ্বকাপ জিততে পারে’’

১০ দলের এবারের বিশ্বকাপ হবে সিঙ্গেল লিগ পদ্ধতিতে৷ সবার সঙ্গে সবাই খেলে সেরা চার দল উঠবে সেমিফাইনালে৷ তাতে বাংলাদেশের কাজটি কঠিন হয়ে যাচ্ছে বটে৷ তবু যে মাশরাফির দল বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন নিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করছে, এটি বড় প্রাপ্তি মনে হয় আকরামের কাছে, ‘‘বাংলাদেশ এখন এমন পর্যায়ে এসেছে যে, ভালো খেললে ম্যাচ জিতব৷ কিন্তু আমাদের সময়ে ভালো খেললেও ম্যাচ জিততাম না৷ কারণ, ক্রিকেটীয় মান নিয়ে অনেক প্রশ্ন ছিল; সর্বোচ্চ দিয়ে খেললেও জিততে পারতাম না৷ এক সময় আমরা ম্যাচ জেতার স্বপ্ন দেখতাম; এখন বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন দেখছি৷ এর চেয়ে বড় জিনিস আর কী হতে পারে!''

সংগঠক হিসেবে ক্রিকেটের সঙ্গে এক জীবন কাটিয়ে দেয়া আহমেদ সাজ্জাদুলও তাই মনে করেন৷ চিরকালের স্বপ্ন দেখা মানুষটিতে বাংলাদেশ ক্রিকেটের এ অবস্থা তৃপ্তি দিচ্ছে খুব, ‘‘এখন আমাদের চিন্তা-চেতনার স্তর উন্নত হয়েছে৷ আমরা সত্যি বিশ্বাস করি যে, এ দল বিশ্বকাপ জিততে পারে৷ এটি বিরাট ব্যাপার৷ অবশ্যই তা সংগঠক হিসেবে খুবই তৃপ্তিদায়ক৷''

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান