‘দেহদানের সুনির্দিষ্ট আইন করার সময় এসেছে'
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ডয়চে ভেলে : দেহদান কেন করা হয়?
অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া : শিক্ষা ও গবেষণার জন্য মানুষের দেহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নিয়ে এখনো গবেষণার বহু স্কোপ আছে। যেমন ব্রেন। এই ব্রেনের মধ্যে অনেক জিনিস আছে, এনাটোমিক্যালও স্টাকচারালি এবং ফাংশনালি অনেক রহস্য আছে। যেগুলো এখনও মানুষ উদঘাটন করতে পারেনি। দেহদান করা হলে গবেষণা করে অনেক রহস্যের উদঘাটন করা সম্ভব।
দেহদান করার উপায় কী?
যিনি দেহদান করতে চান, তাকে স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে একটা ডিক্লায়ারেশন দিতে হবে এবং মেডিকেল ইনস্টিটিউশনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। কিছুদিন আগে আপনারা দেখেছেন, নোয়াখালির গান্ধী আশ্রমের সচিব একজন নারী তিনি দেহদান করেছেন। সেটা এনে এনাটমি বিভাগের গবেষণা সেলে রাখা হয়েছে। মৃত্যুর পর উনার আত্মীয় স্বজনকেও ইতিবাচক হতে হবে। অনেক সময় ডিক্লায়ারেশন দেওয়ার পর স্বজনরা সেটা মেনে নেন না।
যে কেউ চাইলেই কি দেহদান করতে পারেন?
হ্যাঁ, যে কেউ চাইলেই দেহ দিতে পারেন। তাকে ডিক্লায়ারেশন দিতে হবে, সে অনুযায়ী মেডিকেল ইনস্টিটিউশন ব্যবস্থা নেবে।
দেহদানের জন্য কোনো নির্দিষ্ট আইন আছে?
আমার জানা মতে, দেহদানের জন্য নির্দিষ্ট কোন আইন নেই। আমার মনে হয়, এখন সুনির্দিষ্ট একটা আইন করে নেওয়ার সময় এসেছে।
যারা দেহ দিতে চান তাদের সবারটা কী নেওয়া হয়?
হ্যাঁ। এখন পর্যন্ত যারা দিতে চেয়েছেন আমরা তাদের কাউকেই না করিনি। এখানে একটা বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। সেটা হল, মৃত্যুর পর একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমরা যদি দেহটা পাই তাহলে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট হতে পারে। চোখের কর্নিয়া নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু অনেক সময় দেহ পেতে আমাদের অনেক সময় লেগে যায়।
কারা দেহ দেন, দেহ পাওয়ার পর সেগুলো কী করা হয়?
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মৃত্যুর অনেক পরে আমাদের দেহ দেওয়া হয়েছে। ফলে শুধুমাত্র এটাকে গবেষণার জন্য আমরা কাজে লাগাই। অর্গান ট্রান্সপ্লান্ট করার মতো দেহ এখনও আমরা পাইনি।
দেহ দেয়ার পর ইন্টারনাল অর্গানগুলি কী কাজে লাগে?
একটা সময় আছে। তার মধ্যে পেলে কাজে লাগে। কিন্তু দেরী হলে আর সেটা কাজে লাগানো যায় না। কারোটাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে না। যারা আইসিইউতে মারা যাচ্ছেন তাদের দেহ দিলে অর্গানগুলো কাজে লাগানো যায়।
দেহদান করা ব্যক্তির জীবিত স্বজনরা কী কোনো সুবিধা পান?
স্বজনদের সুবিধা দেওয়ার জন্য কোন ব্যবস্থা নেই।
দেহদান কী ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়? না কি প্ররোচিতও করা হয়?
যারা দিচ্ছেন স্বপ্রনোদিত হয়েই দিচ্ছেন। সারাদেশে এই সংখ্যা একেবারেই কম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় গত এক বছরে ২/৩টি দেহ পেয়েছে।
কোনো জটিলতা আছে কিনা? অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কি বিক্রি করা হয়?
এর মধ্যে কোন জটিলতা নেই। অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি করার কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। তবে বেওয়ারিশ লাশের ক্ষেত্রে অনেক সময় হাড় বিক্রির কথা শোনা যায়। তাও এখন আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামকে দেওয়া হয়। সেটাও শোনা যায় না। কারণ বেওয়ারিশ লাশের সংখ্যা তো খুবই কম। সবারই তো আত্মীয় স্বজন আছে।
আপনারা দেহদান করার জন্য কাউকে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন কিনা? আইনে কি সুযোগ আছে?
হ্যাঁ। আমরা প্রচারণা চালাতে পারি।
আপনারা কি কখনও এমন উদ্যোগ নিয়েছেন?
এখন পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। আসলে গবেষণার জন্য তো দেহ দরকার। এখন কেউ দেহ দিলে সেটাতো আমাদের সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে। সেই আয়োজন করে আমরা এমন উদ্যোগ নেব।
ডা. কনক কান্তি বড়ুয়ার সাক্ষাৎকারটি নিয়ে আপনার মতামত জানান নীচের ঘরে৷