মরণোত্তর দেহদান এত জটিল!
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯মরণোত্তর দেহদানের বিষয়টি প্রথম ভাবিয়েছিল খুব ছোটবেলায়৷ ক্লাস থ্রি বা ফোরে পড়ি তখন৷ হঠাৎ বিজ্ঞান শিক্ষক জানালেন স্কুলে একটা মানুষের কঙ্কাল এসেছে৷ এবং সেটা একটি সত্যিকারের মৃত মানুষের কঙ্কাল, প্লাস্টিকের না৷ সেই কঙ্কাল আবার রাখা হয়েছে যেখানে আমাদের ক্লাস হয় তার উপরের তলায়৷ তো দু'তিন বন্ধুকে সাথে নিয়ে একদিন টিফিনের সময় দুরু দুরু বুকে গিয়েছিলাম সেটি দেখতে৷ বদ্ধ ঘরে কঙ্কালটা কোন কারণে একটু নড়ে উঠেছিল৷ আর তাতেই ভয়ে আমাদের অবস্থা কাহিল৷ তারমধ্যে আবার এক সহপাঠী বললো, জানিস, যাদের কবর দেয়া হয়না, তাদের আত্মা চারপাশে ঘুরে বেড়ায়!
কঙ্কাল নিয়ে সেই ভীতি অবশ্য আর নেই৷ এখন কঙ্কাল দেখলে আর আত্মার কথা মনে হয় না৷ তবে, নিজে কঙ্কাল হয়ে যাবার সময় ঘনিয়ে আসছে সেটাও মনে করছি না৷ মাঝবয়সে এসে তাই হঠাৎ এক সহকর্মীর মরণোত্তর দেহদানের পোস্ট দেখে খানিকটা বিচলিত বোধ করছিলাম৷ পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে আগ্রহও তৈরি হলো৷ তাঁর পোস্টের সূত্র ধরেই কিছুটা খোঁজ নিলাম৷
যা তথ্য পেলাম, তাতে আসলে দেহদানে মানুষ উৎসাহিত হওয়ার চেয়ে নিরুৎসাহিতই হবে বেশি৷ কেন বলছি সেকথা:
প্রথমত, জার্মানির হাসপাতাল এবং গবেষণাকেন্দ্রগুলোর যত মরদেহ প্রয়োজন, তারচেয়ে অনেক বেশি মরদেহ দেয়ার আগ্রহী মানুষ রয়েছেন৷ আর প্রয়োজনের চেয়ে বেশি মরদেহ জমা রাখার জন্য দরকারি হিমাগার এবং অন্যান্য সুযোগসুবিধারও ঘাটতি রয়েছে৷ ফলে, গবেষণাগারগুলো মানুষকে মরণোত্তর দেহদানে বরং নিরুৎসাহিত করছে৷ তারপরও কেউ যদি দেহদান করতে চান, তাহলে তার অন্তত ৬০০ ইউরো ফি দিতে হবে৷
দ্বিতীয়ত, বিষয়টি এমন নয় যে জার্মানিতে অনেক মানুষ বিজ্ঞান এবং চিকিৎসা খাতে অধিকতর গবেষণার স্বার্থে মরণোত্তর দেহদান করছেন৷ আসলে, জার্মানিতে মৃতদেহের সৎকার অনেক ব্যয়বহুল এবং ক্ষেত্রবিশেষে তাতে জনপ্রতি ছয়হাজার ইউরো পর্যন্ত খরচ হতে পারে৷ আর এই খরচের কিছুটা আগে স্বাস্থ্যবীমা থেকে পাওয়া গেলেও এখন আর তাও পাওয়া যায়না৷ ফলে অনেকে এই খরচ বাঁচাতে মরণোত্তর দেহদান করতে চান৷
তবে, পুরো দেহ না চাইলেও মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গদান করাকে উৎসাহিত করছে জার্মানি৷ এমনকি দেশটির প্রত্যেক নাগরিককে স্বয়ংক্রিয়ভাবে একজন মরণোত্তর অঙ্গদানকারী হিসেবে নথিভুক্ত করার আইনও প্রস্তাব করা হয়েছে৷ সেক্ষেত্রে কেউ যদি অঙ্গদান করতে না চান তাহলে তাকে আলাদাভাবে জানাতে হবে যে তিনি আগ্রহী নন৷
যাহোক, আমার সেই সহকর্মী অবশ্য ফি দিয়ে হলেও মরণোত্তর দেহদানে আগ্রহী৷ তিনি এজন্য হাজার ইউরো দিতেও প্রস্তুত৷ আর শুধু জার্মানিতে নয়, বাংলাদেশেও দেহদানের জন্য নথিভুক্ত তিনি৷ তাঁর এই মহানুভবতায় মুগ্ধ আমি৷ তবে, একটা প্রশ্ন মনে ঘুরছে, তৃতীয় কোন দেশে তিনি মৃত্যুবরণ করলে তখন কোন দেশ তাঁর মরদেহের দাবিদার হবে?
প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলতে চান? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷