1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গাগা বিতর্ক

৩১ মে ২০১২

গাগার গান বাতিল হল ইন্দোনেশিয়ায়৷ কিন্তু বিতর্ক চলছেই৷ কেন গাগা, কেন এই অপসংস্কৃতি, কেনই বা ইন্দোনেশিয়ার তরুণ প্রজন্মের এই অবক্ষয়! এই হল সামাজিক প্রশ্ন৷

https://p.dw.com/p/155Ey
ছবি: AP

আগামী তেসরা জুন, রবিবার ইন্দোনেশিয়াতে লেডি গাগার গান গাওয়ার কথা ছিল৷ পপ সংস্কৃতির প্রভাব যে বিশ্বের প্রান্তে প্রত্যন্তে কী হারে ছড়িয়েছে, তার প্রমাণ দেখা যাচ্ছিল ইন্দোনেশিয়ার রক্ষণশীল সমাজেও৷ কারণ, মূলত তরুণ প্রজন্মের, টিন এজ ছেলেমেয়েরা সেই বাতিল হওয়া কনসার্টের চড়া দামের ৫২ হাজার টিকিট কিনে ফেলেছিল লেডি গাগার নাম শুনেই৷ কিন্তু আপত্তি এল পুলিশের কাছ থেকে৷ কারণ একটি ইসলামি সংগঠনের হুমকি ছিল, তারা কিছুতেই লেডি গাগাকে অনুষ্ঠান করতে দেবে না৷ ইসলামি ডিফেন্ডার ফ্রন্ট বা আইডিএফ নামের সেই সংগঠনের যুক্তি, গাগা মানেই ‘শয়তানের সংস্কৃতি'৷ সুতরাং, নিরাপত্তার কারণে পুলিশ সেই কনসার্টের অনুমতি দেয়নি৷

Lady Gaga Asien
ইন্দোনেশিয়ায় বিক্ষোভছবি: AP

কনসার্ট বাতিল, অতএব সেই ৫২ হাজার মনঃক্ষুণ্ণ টিকিট ক্রেতাকে তাদের টাকা ফিরিয়ে দিচ্ছে আয়োজক সংস্থা৷ কিন্তু এই ঘটনাকে ঘিরে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে ইন্দোনেশিয়ার প্রধান মিডিয়ারা৷ গাগাকে গান গাইতে না দেওয়াকে তারা ইন্দোনেশিয়ার আত্মপরিচয়ের ঘাটতি বলে বর্ণনা করছে৷ প্রশ্ন উঠছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও৷ ইন্দোনেশিয়ার ৫৬০ টি আসন বিশিষ্ট সংসদে এই আইডিএফ-এর দখলে রয়েছে সাকুল্যে ৩৮টি আসন৷ মিডিয়ার বক্তব্য, এত ছোট একটা দলের হুমকিতে ভয় পেয়ে পুলিশ যে গাগার কনসার্ট বাতিল করাল, সেটা পুলিশের অকর্মণ্যতার পরিচয়৷ সেইসঙ্গে বাইরের দুনিয়ার কাছে ইন্দোনেশিয়া একটা কট্টর ইসলামপন্থী দেশ হিসেবে পরিচিত হল, যার ফলে ভবিষ্যতে সেদেশে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাবে৷ নষ্ট হবে ভাবমূর্তি৷

কিন্তু কেন লেডি গাগাকে এমন কুলোর বাতাস দিয়ে তাড়াল ইন্দোনেশিয়া? কারণ খুব স্পষ্ট৷ শুধুমাত্র আইডিএফ একাই নয়, ইন্দোনেশিয়ার প্রধান প্রতিষ্ঠান উলেমা কাউন্সিল থেকে শুরু করে অনেক তাবড় নেতার বক্তব্য হল, গাগার পোশাক আশাক আদৌ ভদ্রজনোচিত নয়৷ যৌন আবেদনে ভরা এই কনসার্ট ইন্দোনেশিয়াতে অনুষ্ঠিত হলে সাবেক সংস্কৃতি সব গোল্লায় যাবে৷ তাই ‘নো টু গাগা'৷

‘সাবেক সংস্কৃতি গোল্লায় গেছে সাম্প্রতিক শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে৷' বলছেন জাকার্তার পারামাদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইসলামিক অ্যান্ড স্টেট স্টাডিজ বিভাগের প্রধান ড. ফুয়াদ মাহবুদ৷ ইসলাম শিক্ষার এই মাতব্বর ব্যক্তিত্বের মতে, ইন্দোনেশিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থায় এখন মূলত প্রযুক্তিগত পড়াশোনার বাড়াবাড়ি৷ ফলে তরুণ প্রজন্মের সামনে ইসলামের আদত সংস্কৃতি কী তার কোন ধারণাই নেই৷ আর সে কারণেই লেডি গাগার মত ‘অপসংস্কৃতি'র শিল্পীর জন্য এত দরদ দেখাচ্ছে তারা৷

বিতর্ক এখন চলবে ইন্দোনেশিয়াতে৷ তবে লেডি গাগার গান গাওয়াটা হলনা৷ আগামীতেও তা হওয়ার সম্ভাবনা কম৷ যদিও সমাজের শিক্ষিত এবং যুক্তিবাদী অংশ এর ফলে খুশি নয়৷ কিন্তু তাতে কী এসে যায়? কুযুক্তি, গোঁড়ামি আর ধর্মীয় পেশিশক্তি তার খেল একবার দেখাতে শুরু করলে তার সামনে শিক্ষিত, যুক্তিবাদী এবং বুদ্ধিজীবীদের প্রতিবাদের মূল্য তো ক্রমশ কমতেই দেখতে পাওয়া যাচ্ছে বিশ্বের অন্যান্য জায়গায়৷ তা, সে সময়টা ২০১২ ই হোক কিংবা ১৬১২৷ কারণ, ধর্মের আফিমের নেশা যে বড্ডো বেশি মাতাল করে দেয় মানুষকে!

প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায় (আইপিএস, এপি)

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য