নন্দীগ্রামে হিন্দু ভোট টানতে মমতার গোত্র-তাস
৩১ মার্চ ২০২১এর আগে জনসভায় চণ্ডীপাঠ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একের পর এক মন্দির দর্শন করেছেন। প্রচার শেষ হওয়ার আগে জনসভায় নিজের গোত্র কী সেটাও জানিয়ে দিলেন। মুখ্যমন্ত্রী বললেন, তার গোত্র হলো শাণ্ডিল্য।
সহজ কথায়, হিন্দুদের ক্ষেত্রে গোত্র মানে কোন ঋষির বংশধর সেটা জানা। মন্দিরে পুজো দিতে গেলে সঙ্গে গোত্রের নাম দিতে হয়। এটা হলো সনাতন হিন্দুদের প্রথা। অভিযোগ, মমতা তার শাণ্ডিল্য গোত্রের উল্লেখ করে নিজের ব্রাক্ষ্মণ পরিচয় স্পষ্ট করতে চেয়েছেন।
নন্দীগ্রাম নিয়ে ভোটের রিপোর্টে ডিডাব্লিউ আগেই জানিয়েছিল, সেখানে এবার মেরুকরণ, বিভাজন প্রায় সম্পূর্ণ। একসময় যে নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনের সময় হিন্দু-মুসলিম কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছিল, সেখানেই এখন তারা পরস্পরের বিরুদ্ধে সমানে অভিযোগ করছে। নন্দীগ্রামে একটু ঘুরলেই বোঝা যাবে এই বাস্তব পরিস্থিতির কথা। নন্দীগ্রামে তিরিশ শতাংশ মুসলিম ভোট। বাকিটা মূলত হিন্দু। এই বিভাজনের আবহাওয়া মমতা বুঝতে পারছেন। তাই যেটা তিনি অন্যত্র করছেন না, সেই চণ্ডীপাঠ, মন্দির দর্শন, গোত্র বলার কাজটা নন্দীগ্রামে করছেন। বিরোধীদের অভিযোগ, এভাবেই হিন্দুদের মন পেতে চাইছেন তিনি।
নন্দীগ্রামের জনসভায় তিনি মঙ্গলবার বলেছেন, ''আমি ত্রিপুরায় ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে পুজো দিতে গেছিলাম। আমাকে পুরোহিত মহাশয় জিজ্ঞাসা করেছিলেন, মা, তোমার গোত্রটা কী? আমি বলে ফেলেছিলাম, মা মাটি মানুষ গোত্র। আজকেও যখন আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি বললাম, আমার একটা পার্সোনাল গোত্র আছে, সেটা শাণ্ডিল্য। কিন্তু আমি মনে করি, আমার গোত্র হলো মা মাটি মানুষ।''
রাহুল গান্ধী গত লোকসভা নির্বাচনের সময় এই কাজটাই করেছিলেন। তিনি পুস্করের মন্দিরে পুজো দিয়েছিলেন। পরে পুরোহিত জানিয়েছিলেন, রাহুল জানিয়েছেন, তার গোত্র হলো ভরদ্বাজ। তিনি কাশ্মীরের কল ব্রাক্ষ্মণ। নরম হিন্দুত্বের লাইন নিয়ে নিজেকে হিন্দু ব্রাক্ষ্মণ প্রমাণ করে রাহুলের কোনো রাজনৈতিক লাভ হয়নি। মমতার হবে কি না, তা ভোটের ফল বলবে। কিন্তু তার আগে বিরোধী রাজনীতিকরা তার প্রবল সমালোচনা করেছেন।
বিজেপি নেতা এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং বলেছেন, ''বোঝা যাচ্ছে, মমতাদিদি ভয় পেয়েছেন। তিনি হারতে চলেছেন। তাই এখন গোত্রের কথা বলছেন।'' এআইএমআইএম নেতা আসাদুদ্দিন ওয়েইসির মতে, ''আমার মতো মানুষের তাহলে কী হবে? আমি শাণ্ডিল্য গোত্রের নই, আমার পৈতেও নেই। কোনো একজন দেবতার ভক্ত নই। চালিশা বা কোনো পাঠ করি না। প্রত্যেকটা দলই মনে করে, তার হিন্দু পরিচয়টা জানাতে হবে। এটা নীতিহীন ও অপমানকর এবং এই নীতি কাজে আসবে না।''
জিএইচ/এসজি(এএনআই, এনডিটিভি)