নেপালে মধুচাষে ইউরোপীয় মৌমাছির ভূমিকা
২৯ মার্চ ২০১৪ইউরোপীয় মৌমাছি পালনের সুবিধা বেশি – বেশিবার মধু তোলা যায়, ইউরোপীয় মৌমাছিদের রোগভোগও কম – কাজেই চাষিরা স্বভাবতই সেদিকে ঝোঁকেন৷ অপরদিকে এশীয় মৌমাছির ল্যাটিন নাম হল ‘আপিস সেরানা'৷ নেপালের পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় সর্ষেফুলের পরাগ বহন করে আনে এই মৌমাছি৷ সর্ষেচাষের জন্য এলাকার চাষিরা এই মৌমাছিদের উপর নির্ভর করেন৷ ঐ সর্ষের তেলেই আবার রান্না হয় কিনা!
গাছের গুঁড়িতে গর্ত করে তাতে মৌমাছির চাক বসানোয় খরচ কম৷ নেপালে যুগ যুগ ধরে এভাবেই মৌমাছি পালা হয়৷ চাষিবউ দুর্গা বোহারা মৌমাছির চাক রাখেন৷ তিনি বলেন: ‘‘আমার কাছে মৌমাছিদের গুরুত্ব অনেক৷ ওরা আমাদের মধু দেয়৷ মধু আবার একটা ওষুধও বটে৷ এছাড়া আমরা মধু বেচে কিছু কিছু রোজগার করি৷''
ইউরোপ বনাম এশিয়া
এশীয় মৌমাছি ছাড়া নেপালের চিউরি গাছগুলো বাঁচতেই পারতো না৷ বর্ষাকালে পাহাড়ের ধস রোখার জন্য এই চিউরি গাছগুলো বিশেষ উপকারী৷ প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ভরতপুর শহর হল নেপালের তরাই অঞ্চলের পঞ্চম বৃহত্তম শহর৷ তরাই হল দক্ষিণ নেপালের নীচু জলাভূমি অঞ্চল৷
এখানেও গ্রামাঞ্চলে মৌমাছির কমতি নেই, তবে এগুলো এশীয় মৌমাছি নয়: এরা হল আপিস মেলিফেরা, ইউরোপীয় মৌমাছি৷ নব্বই-এর দশকে এই ইউরোপীয় মৌমাছি নেপালে চালু করা হয়; সে যাবৎ তরাই অঞ্চলে ইউরোপীয় মৌমাছি এশীয় মৌমাছিকে বিতাড়ন করেছে৷
জীববিজ্ঞানী উমা পরতাপ স্থানীয় মৌমাছিদের সুরক্ষার জন্য সর্বসাধ্য করছেন৷ নেপালের মধুচাষিদের সংগঠন ফেডারেশন অফ নেপাল বি-কিপার্স-এর প্রতিনিধি ঠাকুর দাওয়াদি বিষয়টি বুঝিয়ে বললেন: ‘‘ইউরোপীয় মৌমাছি থেকে আমরা বছরে নয় থেকে দশবার মধু পেতে পারি৷ কোথাও যথেষ্ট খাদ্য না থাকলে ইউরোপীয় মৌমাছিদের অন্যত্র নিয়ে যাওয়া যায়৷ কাজেই মধুচাষিরা ইউরোপীয় মৌমাছিদেরই পছন্দ করেন৷''
ইউরোপীয় মৌমাছি কী ভাবে এশীয় মৌমাছির বিকল্প হয়ে দাঁড়াল, তার আরো অনেক কারণ আছে: যেমন মৌমাছির সংক্রামক রোগ৷ ইসিমড কেন্দ্রের বায়োলজিস্ট উমা পরতাপ জানান: ‘‘শুরুতে ইউরোপীয় মৌমাছি থেকে এশীয় মৌমাছিদের মধ্যে নানা ধরনের রোগ ছড়ায়, প্রধানত ব্রুট গোত্রীয় রোগগুলি, যেমন ফাউল ব্রুট৷ এই সব রোগ এশীয় মৌমাছিদের পক্ষে বিশেষ সমস্যার সৃষ্টি করেছে৷''